প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বরগুনার দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী মনিকা নিজেই নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করছে। শিশু রাফিয়া, সামিয়া, দোলাসহ সারা দেশে শিশু-কিশোরদের ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হতে হচ্ছে। শিশু নির্যাতন, শিশু হত্যা , ছেলেধরা অপবাদে মা রানুসহ দেশজুড়ে নিরীহ অভিভাবক ও ছোটদের পিটিয়ে হত্যার ভয়াবহতা উপদ্রবেও মৃত্যুর মুখোমুখি শিশুসহ এদেশের মানুষ।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সম্মেলনের উদ্বোধনী আয়োজনে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধকারী মনিকাকে ‘বিজয়িনী যোদ্ধা তুমি’ উপাধীতে ভূষিত করে তাকে খেলাঘরের আজীবন সদস্য পদ প্রদান করা হয়। এসময় তাকে দেওয়া হয় উত্তরীয়, মানপত্র ও আর্থিক সম্মাননা।
শান্তি, স্থিতি, শৃঙ্খলা, মানবিক, আনন্দময় পরিবেশ লঙ্ঘিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রতিরোধ-সামজিক কার্যকরী আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত দেশের সর্ববৃহৎ পুরনো শিশু কিাশোর সংগঠন খেলাঘর।
চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করে অসাম্প্রদায়িক সুখী সুন্দর সোনার বাংলা গড়ার কার্যকর কর্মসূচি প্রনয়নে শুরু হয়েছে খেলাঘর জাতীয় সম্মেলন-২০১৯’।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে এ সম্মেলন উপলক্ষে বসেছে সারাদেশের খেলাঘর পরিবারের মিলন মেলো। দেশের অর্ধশতাধিক জেলা, মহানগরী ও অঞ্চলের শাখা আসরগুলোর ৬ শতাধিক প্রতিনিধি এবং সহস্রাধিক ভাই বোন এবারের সমেম্মলনে অংশ নিচ্ছেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বন্ধুপ্রতিম সংগঠন সব পেয়েছির আসর ও কিশোর বাগিনীর পাঁচজন প্রতিনিধিও যোগ দিয়েছেন।
খেলা ঘরের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার স্মরণে ‘শহীদুল্লাহ কায়সার পদক’ পান সম্মেলনের উদ্বোধক জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমন্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জমান, শিল্পী অধ্যাপক সমরজিৎ, রায় চৌধুরী ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, অধ্যাপক প্রনয় সাহা, আবদুল মতিন ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাহাবুল ইসলাম বাবু।
প্রধান অতিথি ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশের মূলনীতির ভিত্তিতে শিশুদের গড়ে তোলাই হচ্ছে আমাদের মূল কাজ। শিশুদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে খেলাঘর যা করতে পারে বা করছে, অন্যান্য রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের পক্ষে তা করা অসম্ভব। স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই খেলাঘরের ভূমিকার জন্য দেশ আজ গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে।
যারা দেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়, পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তাদের প্রতিহত করতে খেলাঘরের অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন আরো বেগবান করতে হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার পরে খেলাঘরের মতো শিশু সংগঠনে শিশুদের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে। সবাই লেখাপড়া ও বেশি নম্বর অর্জনের দিক জোর দিচ্ছে। দেশপ্রেম গড়ে তোলা এবং শিশু কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষে কিছু নম্বর কম পেলেও অভিভাবকদের প্রতি শিশুদের শিশু সংগঠনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনের সময় খেলাঘরের ভাই বোনরা জাতীয় সংগীত, সংগঠনের সংগীত এবং নাচ পরিবেশন করে। এরপর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় তারা।
শিশু অতিথি বরগুনার আমতলীর ১১ বছরের কিশোরী বাল্য বিবাহ প্রতিরোধকারী মনিকা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলে, বাংলাদেশের কোন শিশু-কিশোরী যেন বাল্যবিবাহের শিকার না হয়। সকলের লেখাপড়ার নিশ্চয়তাও চায় মনিকা।
দুপুরে সারা দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে সাংগঠনিক অধিবেশন ও রাতে শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় সম্মেলনের প্রথম দিনের আয়োজন।
আগামীকাল শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী আয়োজনে অতিবাহিত হবে খেলাঘর জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিন।
দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বিশেষ অতিথি থাকবেন দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য অধ্যপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী। সকাল থেকে সাংগঠনিক ও নির্বাচনী অধিবেশন এবং রাতে শিশু-কিশোরদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে।