প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে যখন জন সাধারণের নাভিশ্বাস অবস্থা তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ীদের নিয়ে আবারও জরুরি বৈঠকে বসেন বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিশর থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। তাই আমরা আশা করছি খুব দ্রুত পেঁয়াজের দাম কমে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে।
তিনি আরো বলেন, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের নৈতিকতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। পেঁয়াজ আমদানি ও বাজারজাত সহজ ও দ্রুত করতে সরকার ইতোমধ্যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং তদারকি জোরদার করেছে।
প্রতিবেশি দেশ ভারত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইজ (এমইপি) নির্ধারন করার কারণে বাংলাদেশ এখন মিয়ানমার, তুরষ্ক, মিশর থেকেও পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে।
তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে ইতোমধ্যে প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে এবং প্রতিদিন আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে।
অভ্যন্তরিন বাজরগুলোতেও দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে দাবি করে সচিব বলেন, পাশাপাশি মিশর ও তুরষ্ক থেকে বিপুল পরিমান পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হয়েছে, কয়েকদিনের মধ্যে এগুলো বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে।
তাছাড়া ভারত থেকে নতুন পেঁয়াজ শিগগীরই বাজারে আসছে। বিভিন্ন হাট-বাজারের পেঁয়াজ দ্রুত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌঁছানোর জন্য সরকার সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশে পেঁয়াজের মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। কোন বাজারেই পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। ভোক্তাদের আতংকিত হবার কোন কারণ নেই, মূল্য দ্রুত কমে আসছে।
তবে বাণিজ্য সচিবের এই বক্তব্যে ক্ষেপেছেন সাধারণ মানুষ। গণমাধ্যম কর্মী মিজানুর রহমান বলেন, যদি পেঁয়াজের যথেষ্ট মজুত এবং সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে তাহলে এগুলো গেলো কোথায়? আজকে আমাদের কেনো প্রায় ৩ গুণ দাম দিয়ে তা কিনতে হচ্ছে। একই কথা বলেন ব্যাংক কর্মী অর্জুন সূত্রধর।
তিনি বলেন, দৈনন্দিন এরকম প্রয়োজনীয় একটি ভোগ্যপণ্যের মাসের মাঝখানে হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। মন্ত্রণালয় যদি বলে থাকে মজুত যথেষ্ট আছে তাহলে আমাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে কেনো?
এদিকে আজ রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, আড়তদাররা দেশি পেঁয়াজ পাইকারি দরে বিক্রি করছেন ৬৪ থেকে ৬৫। আর ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে। এছাড়া মিয়ানমার থেকে আসা নতুন পেঁয়াজ তারা বিক্রি করছেন ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়। তবে খুচরা বাজারগুলোতে এখনো পেঁয়াজের উর্ধ্বমূল্য অব্যাহত রয়েছে।
রাজধানীর শান্তিনগর, মগবাজার, খিলগাঁও তালতলা বাজার, কারওয়ান বাজারে গতকাল রোববার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। পাড়ার দোকানগুলোতে আবার কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কেউ কেউ ১০০ টাকা কেজিও দরও হাকাচ্ছেন। এই অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের দায়ভার সম্পূর্ণই খুচরা বিক্রেতাদের বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পেঁয়াজ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মাজেদ।
তিনি বলেন, আমরা পাইকারি দরে দেশি পেঁয়াজ কেউই ৬৫ টাকার বেশি রাখছি না। এক্ষেত্রে খুচরা পর্যায়ে ৮০ টাকার বেশি দাম রাখা একেবারেই অযৌক্তিক। যদি এর বেশি কেউ দাম রাখে তাহলে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি।
মগবাজারের মুদি ব্যবসায়ী সোহান বলেন, পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে মিয়ানমারের পেঁয়াজ পৌঁছালেও আমরা এখনো এগুলো পাই নি। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দাম দিয়ে দেশি পেঁয়াজই পাইকারি বিক্রেতাদেও কাছ থেকে কিনছি। তাই ৯০ টাকার কমে বিক্রি করলে আমাদের কোনো লাভই থাকে না। তবে শুনছি কেউ কেউ ১০০ টাকাও দাম আদায় করছে। তারা এটা কেনো করছে আমাদের সে ধারণা নেই।
এসময় বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) শাখাওয়াত হোসেন, টিসিবি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বেরুনী, চট্রগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারী বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী ইদ্রিস, ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম এবং মিজানুর রহমান, শ্যামবাজারের পেঁয়াজ আমদানিকারক হাজী মাজেদ, হাবিবুর রহমান, হাফিজুর রহমান, নারায়ন চন্দ্র রায়।