ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মেয়ে বলে ফেলে গেল, ছেলে হলে নিয়ে যেতো


প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


মেয়ে বলে ফেলে গেল, ছেলে হলে নিয়ে যেতো

   

আবদুল হামিদ : গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভোররাতে সিজারের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন নাহার নামের এই নারী। তবে সেই শিশু কন্যাকে রেখে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত্রে ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নবজাতক শিশুটিকে বিছানায় রেখে চলে যান বাবা-মা। সেই দিন থেকে তাদের কোনো হদিস মিলেনি।

এই দিকে ঢামেক প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যদি শিশুটির কোনো দাবিদার না পাওয়া যায়। তাহলে আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিশুটিকে ছোটমণি নিবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি জিডিও করা হয়েছিল।

গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) দুই দিনের নবজাতককে ফেলে চলে যাওয়া মা শিশুটি দেখতে এসে একথা বলেন। 

তিনি বলেন, পুত্র সন্তান হলে আমার স্বামীর নিয়ে যাওয়ার মত ছিল। কিন্তু কন্যা সন্তান হওযায় সে আমার সাথে ঝামেলা করতে থাকে। এতে আমরা শিশুটিকে রেখে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।

তিনি বলেন, ঢামেক হাসপাতাল কর্তিপক্ষের কাছে একটি লিখিত দরখাস্ত দিয়েছি যাতে সব সমস্যার কথা উল্লেখ করেছি।

এ বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ নাছির উদ্দিন বলেন, শিশুটির মা পরিচয়ে নাহার নামে এক মহিলা গত রোববার দুপুরে হাসপাতালে আসেন। 

তিনি জানান, বাচ্চাটি মা তিনি, পারিবারিক সমস্যার কারণে তাকে রেখে চলে গেছেন তিনি ও তার স্বামী। এখন শিশুটিকে নিবেন না বলেও তিনি জানান। এবং এই কন্যা শিশুর মা দাবি কারী  মহিলা আমাদের কাছে এই মর্মে একটি দরখাস্তও দিয়েছেন। সেখানেও তার পারিবারিক সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। আমরা বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শাহবাগ থানায় শিশুটির মা'কে দিয়ে দিয়েছি। এ ব্যাপারে তারাই ভালো বুঝবেন।

এদিকে শাহাবাগ থানার যোগাযোগ করা হলে, তারাও একই কথা বলেছেন, শিশুটির মা তাদেরও একই দরখাস্ত দিয়েছেন। তার দরখাস্ত গ্রহণ করে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। 

জানা গেছে, শিশুটির মা নাহারের ১০ বছর আগে আজাদ নামের একজনের সাথে তার বিয়ে হয়। সেখানে তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। একপর্যায়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহের সৃষ্টি হয়। এতে এই নারী নাহার ঐ সন্তান ও স্বামীকে ফেলে রাসেল নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন তার সাথে সংসার করতে থাকে। এখানে প্রায় ২ বছর নতুন ভাবে সংসার করার পর। সে তার ২য় স্বামী রাসেলকে ছেড়ে আবার চলে আসে আাজাদের কাছে। এসময় সে ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরেন।

পরে আবার তার আগের (প্রথম) স্বামী সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং আগের স্বামী ও মেয়ের কাছে ফিরে আসি। এসময় আমার বর্তমান (১ম) স্বামী জানতে পারে আমি (নাহার) অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু সে সব মেনে নিয়ে আবার আমরা সংসার করতে শুরু করি। 

বাচ্চা হওয়ার সময় হলে প্রথম আজাদ আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করান। এখানে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে সিজারের মাধ্যমে কন্যা সন্তান হয়। এতে আমাদের মধ্যে আবারও এই কন্যা সন্তান নিয়ে ঝগড়া হয়। এবং যাতে করে আবার আমার (নাহার) সংসার না ভাঙ্গে সে জন্য এই সন্তানকে ফেলে রেখে আমি স্বামী (আজাদ)এর সাথে চলে যায়।

কিন্তু এই সন্তানকে কি হবে ভেবে আজ রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢামেক হাসপাতালে আসি। এবং ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও শাহবাগ থানায় দরখাস্ত দিয়েছি যাতে শিশুটিকে দত্তক দিয়ে দেয়া হয়। আর এতে আমার কোনো অভিযোগ ও থাকবে না।

এদিকে হাসপাতালে রেজিস্ট্রেশন খাতা থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এই নারী ঢামেকে ভর্তি সময় তার সন্তানটি বাবার নাম তার (২য়) স্বামী রাসেল নাম উল্লখ করেছে ও মায়ের নাম নাহার। বর্তমান ঠিকানায়, রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর দেন।


   আরও সংবাদ