ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

এনজিওগুলো ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতি করেছে : টিআইবি


প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


এনজিওগুলো ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতি করেছে : টিআইবি

   

স্টাফ রিপোর্টার : চলতি বছরে বন্যায় সারাদেশে সরকারি হিসাবে ১১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেসরকারি হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা ১১৯ জন। দূর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সক্ষমতা অর্জন করেছে। তবে বন্যা প্রস্তুতি, মোকাবেলা ও পরবর্তী সময়ে অনিয়ম এ দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে টিআইবির কার্যালয় বন্যা ২০১৯ মোকাবেলায় প্রস্তুতি এবং ত্রাণ কার্যক্রমে শুদ্ধাচার পর্যবেক্ষণ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।

পর্যবেক্ষণে টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় ত্রাণ বিতরণ, স্বজনপ্রীতি, ত্রাণের চাল কম দেওয়া, একই পরিবারকে একাধিকবার ত্রাণ দেওয়া, অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হওযায় ঘটনা ঘটেছে। 

বন্যার ঝুঁকি যথাযথ চিহ্নিত না করা, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে উদ্যোগের ঘাটতি, পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র না থাকা, মেরামতের অভাবে বাঁধ নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং বন্যা মোকাবেলায় পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়াও ক্ষতির তুলনায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য অপ্রতুল সরকারী বরাদ্দ হওয়ায় প্লাবিত অসংখ্য মানুষ ত্রাণের আওতায় আসেনি। বন্যাকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় বাজেট, লোকবল, পরিকল্পনার অভাব থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রসহ অন্যান্য এলাকায় চিকিৎসা, পানি স্যানিটেশন, নারী, শিশু,  বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষা গবাদি প্রাণী ও গৃহস্থলি সম্পদ সুরক্ষা সেবা ঘাটতি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

 ত্রাণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা,  ন্যায্যতা ও জনপ্রতিনিধির অংশগ্রহণ ঘাটতির পাশাপাশি বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের সার্বিক তদারকিতে দুর্বলতা দেখা গেছে। 

মিশ্র পদ্ধতির গবেষণায় গুণগত ও পরিমাণগত তথ্য ব্যবহারসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে টিআইবি এ গবেষণা করেছে। এতে দেশের পাঁচটি জেলার ১০টি উপজেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। এরমধ্যে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইঘাট, কুড়িগ্রামের উলিপুর চিলমারি এবং গাইবান্ধাে সদর ও ফুলছড়ি রয়েছে। 

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। তবে পর্যাপ্ত ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়নি। বেসরকারী সংস্থাগুলো (এনজিও) সরকার এবং নিজেদের সঙ্গে সমন্বয় ছিল না এনজিও গুলো নিজেদের সুবিধাভোগীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছে। 

বন্যার্তদের ত্রাণ থেকে এক মন্ত্রীর সফরে খরচ করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মন্ত্রী দুর্যোপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করবেন এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ এবং তাদের কর্তব্য। তবে ত্রাণের বরাদ্দ থেকে মন্ত্রীর খরচ ধরা নিয়ম বহির্ভূত। 

জরিপে দেখা গেছে, সরকার ঘোষিত ৪৩ শতাংশ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রাত্রিকালীন অবস্থান করার মতো সুযোগ সুবিধা ছিল না।  ৬৫ শতাংশ আশ্রয়কেন্দ্রে নারীদের থাকার জন্য পৃথক ব্যবস্থা ছিল। ৪১ শতাংশ আশ্রয়কেন্দ্রে শৌচাগারের ব্যবস্থা ছিল না। ৭৯ শতাংশ আশ্রয়কেন্দ্রে নারীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল না। ৫৩ শতাংশ আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুপেয় পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ সামগ্রীর সরবরাহ ছিল না। ৮২ শতাংশ আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ওষুধপত্র সরবরাহ ছিল না। ৮৬ শতাংশ আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী ছিল না। ৭৬ শতাংশ এলাকায় প্লাবিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে জনপ্রতিনিধদের ভূমিকা ছিল না। 


ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ এলাকায় ত্রাণ পরিমাণে কম দেওয়া হয়েছে। ৩২ শতাংশ  স্থানে স্বজনপ্রীতি হয়েছে। ২৬ শতাংশ পরিবারের সদস্য সংখ্যা বিবেচনা না করে ত্রাণ বিতরণ হয়েছে। ২৩ শতাংশ জায়গায়  রাজনৈতিক বিবেচনায় ত্রাণ বিতরণ হয়েছে। ১৭ শতাংশ জায়গায় তালিকায় না থাকার পরো অনেকে ত্রাণ পেয়েছেন। ১৭ ভাগ ত্রাণ আত্মসাৎ হয়েছে।  

উল্লেখ্য, চলতি বছরে বন্যায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দী ছিল। মোট ক্ষতিগ্রস্থ জেলা ছিল ২৮টি। সম্পূর্ণ ৯৮ হাজার পরিবার ও আংশিক ১৩ লাখ ৬০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।


   আরও সংবাদ