ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ ভাদ্র ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ভৈরব নদের খনন কাজ চলছে, দখল করে মাছ চাষের প্রস্তুতি!


প্রকাশ: ১১ অক্টোবর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


ভৈরব নদের খনন কাজ চলছে, দখল করে মাছ চাষের প্রস্তুতি!

   

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের চৌগাছায় খনন কাজ শেষ না হতেই ভৈরব নদ দখল করে মাছ চাষের প্রস্তুতি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বর্তমান ও সাবেক দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

দখলের প্রস্তুতি হিসেবে নদের চৌগাছা অংশের হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর পানিগ্রাম রিসোর্ট কালভার্ট থেকে বুড়িবটতলা কালভার্ট পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটারে নদের পানিতে ও দুই পাড়ে আগাছানাশক দিয়ে শ্যাওলা, কচুরিপানা ও ঘাস পুড়িয়ে দিয়েছে ওই চক্র। এবার চুন দিয়ে পানি পরিস্কার করা হবে। শেষে ওই দুই কালভার্টে নেট দিয়ে পানি আটকে রেখে মাছ ছাড়া হবে।

জানা গেছে, ভৈরব নদ খনন কাজ চলছে। চৌগাছা অংশের খননের কাজ শেষ হলেও যশোর সদর, অভয়নগরসহ অন্য অংশের কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে নদের চৌগাছা অংশে সরকারি ভাবে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।

সূত্রমতে নদের উপর চৌগাছা অংশে অপরিকল্পিত ১৬টি কালভার্ট থাকায় নদে এখনো স্বাভাবিক পানি প্রবাহ শুরু হয়নি। 

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন এই সুযোগেই নদ দখল করে মাছ চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন উপজেলার ৮নং হাকিমপুর ইউনিয়নের ৫নং (তাহেরপুর-তজবীজপুর) ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেন টাইগার ও সাবেক ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন। 

গত শুক্রবার তাঁরা গ্রামবাসীদের নিয়ে মিটিং করে নদ দখল করে মাছ চাষের আহবান জানালেও অধিকাংশ গ্রামবাসী এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন। 

গ্রামবাসীর বিরোধিতার মুখে তাঁরা বলেছেন নদে মাছ চাষ করে যে লাভ হবে তার একাংশ দিয়ে গ্রামের দুটি মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন দেয়া হবে। 

তারা গ্রামবাসীকে এও বলেছেন ‘উপজেলার শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। নদে মাছ চাষ করলে কেউ বাধা দেবে না।’ প্রভাবশালী হওয়ায় ওই দুই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মুখ খুলচ্ছে না গ্রামের লোকজন।

এবিষয়ে বর্তমান ইউপি সদস্য সোহরাব হোসেন টাইগারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি নিজে নয় গ্রামের কিছু যুবক নদে মাছ চাষ করতে চান। 

সোহরাব হোসেন বলেন, ‘এলাকার কিছু যুবক ভৈরব নদের খনন করা তাহেরপুর রিসোর্ট সেতু থেকে বুড়ি বটতলা কালভার্ট পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার অংশে মাছ চাষ করতে চেয়েছিলেন। তাঁরা নদের ওই অংশে দুই পাড়ে আগাছানাশক দিয়ে ঘাস মেরেছেন। তাহেরপুর-তজবীজপুর গ্রামে দুটি মসজিদ আছে। মাছ চাষের আয় থেকে টাকা দিয়ে দুই মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের বেতন দিতে চান। আমার কাছে তাঁরা এসেছিলেন। 

আমি তাঁদের বলেছি এ ব্যাপারে গ্রামবাসীর মতামত নিতে হবে। সে অনুযায়ী গত শুক্রবার গ্রামবাসীদের নিয়ে মিটিং করা হয়। তাঁদের ৭৫ শতাংশ লোক মাছ চাষের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তবে ২৫ শতাংশ লোক ভৈরব নদে মাছ চাষের বিপক্ষে। এই জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। আমরা বলেছি নদ যেভাবে ওপেন আছে সেভাবে থাক।’

হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এমনটা হলে অবশ্যই অপরাধ। খোঁজ খবর নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, কেউ নদের জায়গা দখল করে রাখতে পারবে না। অভিযান চালিয়ে তাদের উচ্ছেদ করে দেয়া হবে। নদের পানি ও মাছ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। প্রয়োজনে ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

তিনি আরো বলেন, অপরাধীরা সবসময়ই মিথ্যা কথা বলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে। গ্রামবাসীকে তিনি এ বিষয়ে সতর্ক থাকারও আহবান জানায়।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, নদ দখলের বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। যত প্রভাবশালী ব্যক্তিই হোক না কেন প্রয়োজনে ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। কোনভাবেই নদ দখল করতে দেয়া হবে না।


   আরও সংবাদ