ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

য‌শো‌রে সাংবা‌দিক প‌রিচয়দানকারী কলগার্লসহ প্রতারকচক্র পুলিশের ফাঁদে


প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


য‌শো‌রে সাংবা‌দিক প‌রিচয়দানকারী কলগার্লসহ প্রতারকচক্র পুলিশের ফাঁদে

   

য‌শোর প্র‌তি‌নি‌ধি : যশোরে মাদক ব্যবসায়ী ও কলগার্লসহ একটি প্রতারকচক্রের ৫ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় য‌শোর জিলা স্কু‌লের সাম‌নে থেকে তাদের‌কে আটক ক‌রে পু‌লিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি ওয়াকিটকি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। 

আটককৃতরা হচ্ছেন-চৌগাছা উপজেলার নারাণপুর গ্রামের মিঠুর স্ত্রী রুমানা ওরফে লিপি, যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া বিল্লাল মসজিদ রোডের বাবলু খাঁ’র মেয়ে পিয়া, শংকরপুর মুরগির ফার্মগেট এলাকার লিটনের ছেলে সোহেল, রেলরোডের রেলবাজার এলাকার বিসমিল¬াহ সেলুনের পেছনের বাসিন্দা টুকুর ছেলে বাবু ও আশ্রম রোডের সাহেব বাবুর বাড়ির সামনের বাসিন্দা সুরুজের ছেলে তুহিন। 

পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয়ে এই চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধের সাথে জড়িত বলে প্রথমিক জিজ্ঞাসবাদে জানা গেছে। 

এদের মধ্যে রুমানা ওরফে লিপি নিজেকে সাপ্তাহিক স্মৃতি পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে দাবি করেছেন। তার বসবাস শহরের রেলগেট ও ষষ্টিতলা এলাকায়।

কোতয়ালি থানা পুলিশের ইনসপেক্টর (তদন্ত) সমীর কুমার সরকার জানান, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা প্রতিদিন শহরে অভিযান পরিচালনা করছেন। এরই অংশ হিসেবে বিকেলে তারা যশোর জিলা স্কুলের সামনে অভিযান পরিচালনাকালে সন্দেহভাজন হিসেবে দু জনকে আটক করেন। 

এদের একজন হলেন সোহেল। তার হাতে একটি ওয়াকিটকি পাওয়া যায়। পরে শরীরে তল্লাশি চালিয়ে আরও একটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। 

আটকের পর সোহেল দাবি করে, সে যশোর রেলওয়েতে চাকরি করে এবং ওয়াকিটকি তাদের অফিসের। কিন্তু তাকে রেলস্টেশনে নিয়ে গেলে স্টেশন মাস্টার তাদেরকে (পুলিশ) জানান, সোহেল এক সময় রেলওয়েতে অস্থায়ী হিসেবে কাজ করতো। এখন সে কাজ করেন না। আর ওয়াকিটকি দুটি রেলওয়ের নয়। 

পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সোহেল স্বীকার করে যে, সে ওয়াকিটকি দুটি রুমানা ওরফে লিপির কাছ থেকে নিয়েছেন। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে রুমানা ওরফে লিপি ও পিয়াসহ ৩ জনকে আটক করা হয়। 

আটকের পর রুমানা নিজেকে সাপ্তাহিক স্মৃতি নামে একটি পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে পরিচয় দেন। এবং তিনি জানান, একটি কোম্পানি থেকে ওয়াকিটকি সংগ্রহ করেছেন। 

পুলিশ জানায়, বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের নিরাপত্তা প্রহরীদের কাছে এ ধরনের ওয়াটিকটি দিয়ে থাকে।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, রুমানা ওরফে লিপি একজন কলগার্ল। সে এর আগে খরিদ্দারসহ দুই বার ধরাও পড়েছে পুলিশের হাতে। তাছাড়া সে বড় ধরনের মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত।

কোতয়ালি থানা এসআই আমিরুজ্জামান জানান, রুমানা একটি এফজেড এস মোটরসাইকেল চালিয়ে বেড়ায়। এই মোটরসাইকেল মূলত তার স্বামীর। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ইয়াবা ট্যাবলেট ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। সাংবাদিক পরিচয়ে সুবিধা নিয়ে রুমানা বিভিন্ন স্থানে ইয়াবার বড় বড় চালান সরবরাহ করে থাকে। 

তিনি জানান, মাদকের ব্যবসা ছাড়াও বিভিন্ন লোকজনকে ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় রুমানাসহ প্রতারকরা। তবে তারা অবস্থা সম্পন্ন খরিদ্দারদের টার্গেট করে বেশি। ওই খরিদ্দারদের বিভিন্নভাবে ব্লকমেইলিং এবং অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। 

পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, রুমানার স্বামী প্রায়ই মোটরসাইকেল পাল্টিয়ে থাকে। তার শখ নতুন নতুন মোটরসাইকেল কেনা। 

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রুমানার কাছ থেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত এফজেড এস মোটরইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে।

আটক সোহেল সম্পর্কে এসআই আমিরুজ্জামান জানান, প্রথমে সোহেলের সাথে বাবুকে আটক করা হয়। এরপর আটক করা হয় তুহিনকে। মূলত সোহেল সন্ধ্যার পর তার সঙ্গীদের সাথে শহরের যে কোন সুবিধাজনক স্থানে মিলিত হয়। এরপর তারা ওয়াকিটকি ব্যবহার করে পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে থাকে। এ বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, রুমানা সাপ্তাহিক স্মৃতি পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ায় ওই পত্রিকার সম্পাদককেও ডেকে তারা এ বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। 
 
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, কলগার্ল ও মাদক ব্যবসায়ী রুমানা মোটা অংকের টাকা দিয়ে সাপ্তাহিক স্মৃতি পত্রিকার সাংবাদিকের একটি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছে। তাকে আটকের খবর জানতে পেরে সন্ধ্যায় কোতয়ালি থানায় ছুটে আসেন এক যুবক। 

তিনি পুলিশের কাছে নিজেকে সাপ্তাহিক স্মৃতি পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রুমানাকে ছাড়ানোর জন্য পুলিশের কাছে তাকে তদবির করতে দেখা যায়। 

অপর একটি সূত্র জানায়, রুমানা ও তার স্বামী মিঠু টেকনাফ থেকে ইয়াবা ট্যাবলেটের চালান নিয়ে আসেন। যশোরে আনার পর তারা ইয়াবা বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর কাছে সরবরাহ করে থাকেন।


   আরও সংবাদ