ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ ভাদ্র ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দায় এড়াতে বান্ধবীকে না চেনার ভান করলেন শয়ন!


প্রকাশ: ২০ অক্টোবর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


দায় এড়াতে বান্ধবীকে না চেনার ভান করলেন শয়ন!

   

ঢাবি প্রতিনিধি :  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংসদের (ডিইউডিএস) নির্বাচনে বান্ধবী ইসরাত জাহান নুর ইভাকে সভাপতি পদে জয়ী করতে রোকেয়া হল বিতর্ক ক্লাবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক উপ-সম্পাদক এবং ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে শয়ন বলছেন, ইভাকে চিনি না। হতে পারে তিনি অন্য কারো বান্ধবী। 

রোকেয়া হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বাধা না দিয়ে উল্টো ডিইউডিএস-এর নির্বাচনে হল থেকে ভোটার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিতর্ক সংসদটির গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন। অভিযোগটি করেছেন ক্লাবের একাধিক বিতার্কিক।

সূত্র জানায়, আগামী ২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিতর্ক সংসদের নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সংসদ থেকে একজন ভোটার নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য হল শাখাগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়। এই পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল থেকে একজন করে ভোটার নিয়োগ করা হয়। হলের প্রাধ্যক্ষ বা বিতর্ক ক্লাবের মডারেটর ভোটার মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। এদের ভোটেই নির্বাচিত হয় বিতর্ক সংসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। 

হল প্রশাসন বরাবর পাঠানো চিঠিতে প্রত্যেক হলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদককে মনোনয়ন দিতে অনুরোধ করা হয়। এর বাহিরে অন্য কাউকে মনোনীত করতে হলে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ২৭ ধারা অনুসারে হল বিতর্ক ক্লাবের সকলের সর্বসম্মতিক্রমে তাকে মনোনয়ন দিতে হয়। কিন্তু রোকেয়া হলের ক্ষেত্রে এ নিয়ম না মেনে নিধারিত সময়ের মধ্যে ভোটার মনোনয়ন দেয়া হয় নি।

বিতর্ক সংসদের গঠনতন্ত্রের ২৭ নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক হল ডিবেটিং ক্লাব থেকে একজন করে ভোটার ভোট দিতে পারবেন। হল ডিবেটিং ক্লাব ভোটারের নাম চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত নির্দিষ্ট দিনে ডিইউডিএস কার্যালয়ে জমা দিবে। ভোটারের নাম প্রেরণের কাগজে অবশ্যই হল প্রাধ্যক্ষ বা মডারেটরের স্বাক্ষর থাকতে হবে। ছাত্রত্ব থাকা সাপেক্ষে ভোটারকে স্ব স্ব ডিবেটিং ক্লাব থেকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে’।  

রোকেয়া হল বিতর্ক ক্লাবের বর্তমান কমিটির একাধিক বিতার্কিক অভিযোগ করেন, হল প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা ক্লাবের কাউকে না জানিয়ে একক সিদ্ধান্তে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাহিরে ‘সৌমি সপ্তপর্ণা’ নামে একজনকে ভোটার হিসেবে মনোনীত করেছেন। সে ছাত্রী হল বিতর্ক ক্লাবে অনিয়মিত। এর আগে হল বিতর্ক ক্লাবের নির্বাচনের সময় তিনি সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। সভাপতি না হতে পেরে তিনি বিতর্ক ক্লাবে না আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর ভোটার হওয়ার বিষয়টি সামনে আসলে সম্প্রতি তিনি আবার নিয়মিত হন।

রোকেয়া হল বিতর্ক ক্লাবের সাবেক কমিটির কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করে বলেন, ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়নের পরামর্শে হল প্রাধ্যক্ষ এই কাজ করেছেন। শয়ন তার বান্ধবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংসদের নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী ইসরাত জাহান নুর ইভাকে ডিইউডিএসের সভাপতি করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এর আগে, রোকেয়া হল বিতর্ক অঙ্গনের নতুন কমিটি দেয়ার সময় সেখানে তিনি তার অনুগত সৌমি সপ্তপর্ণাকে সভাপতি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিতার্কিকদের বাধায় সেটা পারেননি। পরবর্তীতে নতুন কমিটিকে মডারেটর অনুমোদন দিলেও হল প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা এখানো অনুমোদন দেননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ডিইউডিএস-এর নির্বাচন কবে তা আমি জানি না। বান্ধবীকে সভাপতি করতে তোড়জোড় করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইভা কে? বান্ধবীর পরিচয় দিলে তিনি বলেন, হতে পারে সে অন্য কারো বান্ধবী, কারো প্রেমিকা, কারো বউ, কারো মা।

এ বিষয়ে বিতর্ক সংসদের নির্বাচন কমিশনার এসএম রাকিব সিরাজী বলেন, সাধারণ বিতার্কিকদের কাছ থেকে আমরা এ ধরণের একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্তের দিকে যাব।

বিতর্ক ক্লাবের নির্বাচন কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মুতি আসাদ বলেন, রোকেয়া হল বিতর্ক ক্লাবের বিষয়ে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। যেহেতু রোকেয়া হলের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় নি, সেক্ষেত্রে এ হলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হতে পারে বলে জানান তিনি।

বিতর্ক ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাওহিদা জাহান বলেন, আমরা এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই নি। নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিব।

রোকেয়া হল বিতর্ক ক্লাবের মডারেটর ড. রুমানা ইসলামের মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি গাড়িতে আছেন বলে কেটে দেন। এরপর একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদার মুঠোফোনে অন্তত ১০ বার কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি। এর আগে গত শনিবার এ বিষয়ে জানতে কল দেয়া হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। পরবর্তীতে ঠান্ডা হয়ে বলেন, নিয়মের বাইরে আমরা কিছু করব না।

এদিকে, গতকাল দুপুর সোয়া বারোটায় বিতর্ক সংসদের বার্ষিক সাধারণ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবিতে সংসদের সাধারণ বিতার্কিকবৃন্দ ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিতর্ক সংসদের উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, রোকেয়া হল বিতর্ক ক্লাব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ করবে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা আসবে কেন।

শিক্ষার্থীদেরকে মডারেটরের সঙ্গে কথা বলে  রীতি-নীতি, ঐতিহ্য অনুসরণ করে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এখানে দুষ্ট চক্রের কাজ করার সুযোগ নেই বলেও জানান উপাচার্য।


   আরও সংবাদ