ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জান্নাতির বসে থাকা সহ্য করতে না পেরে নির্দয়ভাবে হত্যা


প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


জান্নাতির বসে থাকা সহ্য করতে না পেরে নির্দয়ভাবে হত্যা

   

স্টাফ রিপোর্টার : শরীরে ভীষণ জ্বর নিয়ে গৃহকর্ত্রীর ভয়ে চিলেকোঠায় লুকিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা পেল না শিশু গৃহকর্মী জান্নাতি (১২)। আর এ অবস্থায় ঘরের কাজ না করে জান্নাতির বসে থাকা সহ্য করতে পারেননি গৃহকর্ত্রী পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদ আহম্মেদের স্ত্রী রোকসানা পারভীন। 

চিলেকোঠা থেকে টেনেহিঁচড়ে ধরে এনে ছোট্ট জান্নাতিকে নির্দয়ভাবে মারপিঠ করেন তিনি। এ সময় বাসায় ছিলেন প্রকৌশলী সাইদ আহমেদ। 

মারধরের এক পর্যায় জান্নাতি রান্নাঘরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এতেও মন গলাতে পাড়েনি ওই দম্পতির। ওই অবস্থায়ই রান্নাঘরে জান্নাতি পড়ে ছিল প্রায় দুই ঘণ্টা। পরে জ্ঞান না ফেরায় অবস্থা বেগতিক দেখে রাতে নিজেদের গাড়িতে করে জান্নাতিকে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। কিন্তু ততক্ষণে ছোট্ট জান্নাতি চলে যায় সব কিছু ছেড়ে।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি বলেন প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জান্নাতী হত্যা মামলার প্রধান আসামি রোকসানা পারভীন এসব তথ্য দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রোকসানা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি জিজি বিশ্বাস। এদিকে হত্যা মামলার অপর আসামি রোকসানার স্বামী প্রকৌশলী সাইদ আহমেদ পলাতক তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক শিশু গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার দুই আসামি হলেন গৃহকর্তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী রোকসানা পারভীন।

হত্যার আগে জান্নাতী ধর্ষণের শিকার হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জিজি বিশ্বাস বলেন, জান্নাতীকে তার গৃহকর্ত্রী একাই পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে। তবে শিশুটি মৃত্যুর আগে ধর্ষিত হয়েছে এবং এতে তার স্বামীর সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন কোনো কথা রোকসানা স্বীকার করেনি। শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে কিনা জানতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে মেয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন জান্নাতীর পরিবার। মেয়ের এমন মৃত্যুর সংবাদ শুনে হাসপাতালে ছুটে আসে জান্নাতির বাবা জানু মোল্লা বলেন, পেট ভরে তিন বেলা ভাতের আশায় বড়লোকের বাড়িতে আমার প্রাণপাখিটারে (জান্নাতি) কাজে দিছিলাম। তারা পেট ভরে ভাত তো দিলই না উল্টো প্রাণডাই কাইড়া নিল। আমি আমার পাখির হত্যার বিচার চাই।
 
রোকসানাকে বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, চাকরি সূত্রে সাইদ আহম্মেদ একসময় বগুড়ায় থাকতেন।  জান্নাতিদের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী। পূর্ব  পরিচয়ের সূত্র ধরে চার বছর আগে জান্নাতি সাইদের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে থাকে। এরপর প্রকৌশলী সাইদ আহমেদ ঢাকায় চলে আসলে পরিবারের সঙ্গে জান্নাতিও ঢাকায় চলে আসে। সাইদ আহম্মেদ পরিবার নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে স্যার সৈয়দ রোডের ৬/৫/এ নম্বর ৬ তলা ভবনের নিচতলার একটি নিজস্ব ফ্লাটে থাকেন। এই দাম্পত্যের সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া একটি ছেলে রয়েছে। 

গত রোববার থেকে সাইদ ঢাকায় অবস্থান করছে। ওই বাসায় শিশু গৃহকর্মী জান্নাতি ছাড়াও আরও দুজন গৃহকর্মী কাজ করেন। ঢাকায় আসার পর প্রায়ই সামান্য বিষয়ে জান্নাতির ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতেন রোকসানা, যার স্পষ্ট ছাপ দেখা গেছে জান্নাতীর নিথর দেহে। লাশের পা থেকে মাথা পর্যন্ত অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন সেই সাক্ষ্য দেয়। এমনকি শিশুটিকে খেতেও দেওয়া হতো না ঠিকমতো।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সেলিম রেজা জানান, শিশু জান্নাতির শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভোঁতা কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে পুলিশ জান্নাতীর লাশ উদ্ধার করে। আটক করা হয় রোকসানাকে। পরে বুধবার সকালে জান্নাতীর বাবা জানু মোল্লা মোহাম্মদপুর থানায় সাইদ ও রোকসানার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর রোকসানাকে গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বাসার অন্য দুই গৃহকর্মীকেও গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্র আরও জানায়, মামলা হওয়ার আগে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি রফা করতে বহু চেষ্টা করেছিলেন সাইদ আহমেদ। কিন্তু কাজ না হওয়ায় পরে গা-ঢাকা দেন। গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে জান্নাতীর মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যান তার স্বজনরা।


   আরও সংবাদ