ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চৌগাছায় পানিতে কীটনাশক মিশিয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্র হত্যার চেষ্টা


প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


চৌগাছায় পানিতে কীটনাশক মিশিয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্র হত্যার চেষ্টা

   

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের চৌগাছায় খাবার পানিতে কীটনাশক (ফুরাডন) মিশিয়ে এসএম নিশান নামে ৯ম শ্রেণির এক ছাত্রকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

সে উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের শেখ আবুল কাশেমের ছেলে এবং চৌগাছা সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র। গত বছর জেএসসি পরীক্ষায় সে হাকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে উপজেলায় প্রথম হয়।

তিনদিন যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর সোমবার বিকালে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন অভিভাবকরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এবিষয়ে ভুক্তভোগির পিতা আবুল কাশেম অজ্ঞাতদের আসামী করে চৌগাছা থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ২৮।

ঘটনার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এসএম নিশান জানায়, গত শনিবার দুপুরে টিফিনের সময়ে সে তার স্কুলব্যাগ শ্রেণি কক্ষে রেখে নামাজ পড়তে যায়। নামাজ শেষে স্কুলের সততা স্টোর থেকে একটি লাড্ডু ও এক প্যাকেট বিস্কুট কেনে। লাড্ডুটি খেয়ে সে বাড়ি থেকে আনা নিজের পানির বোতল থেকে পানি খায়। পানি খেতে গিয়ে গলায় গোটা ধরনের কিছু (ফুরাডন পাউডারের গুড়া) আটকে যাওয়ায় সে বুঝতে পারে পানির মধ্যে কিছু রয়েছে। পরে ওই পানি আর না খেয়ে বেলা ৩টায় স্কুল ছুটির পর স্কুলেরই সহকারি শিক্ষক জিয়া খানের বাসায় (স্কুলের পার্শ্ববর্তী) প্রাইভেট পড়তে যায়।

এসময় সেখানে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে শিক্ষক জিয়া খান এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাকে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়।

নিশান আরো বলে, আমার নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় ওই বোতল থেকে আমার তিনজন সহপাঠি পানি খাচ্ছিল। তাদেরই কেউ পানিতে হয়ত ওটা মিশিয়ে থাকতে পারে। হাসপাতালে চিকিৎসকরা ওই বোতলের পানি দেখে বুঝতে পারেন পানিতে কীটনাশক (ফুরাডন পাউডার) মেশানো হয়েছে। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে ৩ দিন ভর্তি থাকার পর সোমবার কিছুটা সুস্থ্যবোধ করায় স্বজনরা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। 

নিশানের বাবা শেখ আবুল কাশেম জানান, আমার ছেলে গত বছর জেএসসি পরীক্ষায় উপজেলায় প্রথম হয়। তখন সে হাকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ত। এরপর চৌগাছা সরকারি শাহাদৎ পাইলট হাইস্কুলে ভালো ছেলেদের সাথে পড়লে আরো ভালো শিখতে পারবে ভেবে চলতি বছর জানুয়ারী মাসে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি করি। সেখানে সে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষায় শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে। একারণে তার সহপাঠিদের কেউ হয়ত ঈর্ষন্বিত হয়ে একাজ করেছে। 

তিনি আরো বলেন, ওইদিন বিকেলে আমি ফোনে সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা আমাকে বিষয়টি বলেন। তারা হাসাপাতালে নেয়ার পর ওই পানিতে ফুরাডন পাওডারের গুড়া দেখে বিষয়টি বুঝতে পারেন। তিনি সেই বোতলে থাকা ফুরাডন পাওডার দেখিয়ে বলেন আমার ছেলেকে হত্যার জন্যই ওর সহপাঠিদের কেউ এটা খাইয়ে দিয়েছে।

তিনি জানান, স্কুলের শিক্ষকরা স্কুল থেকে আরো একশগ্রাম ফুরাডন পাউডার উদ্ধার করেছেন।

চৌগাছা সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুর বলেন, আমি ওইদিন স্কুলে বিকাল চারটা পর্যন্ত ছিলাম। তখন পর্যন্ত কিছু শুনিনি। পরে এশার আজানের ১০/১৫ মিনিট আগে স্কুলের শিক্ষক জিয়া খান আমাকে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করেন। 

তিনি আরো জানান, শ্রেণি শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে আমি বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে জানাই। তিনি চৌগাছা থানার ওসিকে এ বিষয়টি তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, থানার ওসিকে বিষয়টি তদন্তপূর্বক রিপোর্ট প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। তার পরিবারকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

চৌগাছা থানার ওসি রিফাত খান রাজীব বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনার দিনই আমি হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়ে বিষয়টির খোঁজ নিয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। বিকেলে এ ঘটনায় মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। তদন্তপূর্বক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


   আরও সংবাদ