ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

গেরিলা যোদ্ধা থেকে জননেতা  খোকা


প্রকাশ: ৪ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


গেরিলা যোদ্ধা থেকে জননেতা  খোকা

   

নিউজ ডেস্ক: সাদেক হোসেন খোকা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতি পরিচিত এক নাম। দীর্ঘদিন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তো ছিলেন, ছিলেন একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও। শুধু তাই নয়, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধেও তিনি পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়াই করেছেন। বাংলাদেশ সময় সোমবার দুপুরে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা।

১৯৫২ সালের ১২ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন সাদেক হোসেন খোকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পরিবারের অজ্ঞাতে যুদ্ধে চলে যান।

১৯৭১ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন নেতা রুহুল আমীন এবং গোপীবাগের মাসুদসহ (বুড়া) বেশ কয়েকজন মিলে প্রথমে সাদেক হোসেন খোকারা যান নরসিংদীর শিবপুরে। সেখানে কয়েক দিন অবস্থানের পর যুদ্ধের ট্রেনিং নেয়ার জন্য আগরতলায় পৌঁছলে তাদের রিসিভ করেন শহীদুল্লাহ খান বাদল (রাশেদ খান মেননের ছোট ভাই)। সেখান থেকে প্রথমে বটতলাস্থ সিপিএম অফিস এবং পরে যান দুই নম্বর সেক্টরে। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ছিলেন সেই সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার। সেখানে মেজর হায়দারের (পরে কর্নেল হায়দার) নেতৃত্বে ঢাকার মুক্তিযোদ্ধারা নেন গেরিলা প্রশিক্ষণ। দুই নম্বর সেক্টরের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের নাম ছিল ‘মেলাঘর’।

মেলাঘরের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বসবাসের জন্য একেবারেই উপযুক্ত ছিল না। পাহাড় আর ঘন জঙ্গলে পূর্ণ ছিল চারিদিক। লাল মাটির উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ একটু বৃষ্টি হলেই বেশ পিচ্ছিল হয়ে পড়তো। শৌচকর্ম সারতে যেতে হতো বনের ভেতরে। এ ক্যাম্পে বেশিরভাগই ছিল ঢাকা শহরের ছেলে, ফলে এ রকম পরিবেশে থাকতে তারা অভ্যস্ত ছিলেন না। তিনি ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মরহুম মেসবাহ উদ্দিন সাবু এক সঙ্গে থাকতেন। এ ক্যাম্পেই তার সাথে যাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় আবু সাইদ খান, শাহাদত চৌধুরী, ফতেহ আলী চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সুলতান উদ্দিন রাজা, আতিকুল্লাহ খান মাসুদ, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, পল্টনের মানিক (পরে শহীদ), গাজী গোলাম দস্তগীর, মিজান উদ্দিন আহমেদ, শহিদুল্লাহ, শিল্পী শাহাবুদ্দিন, মাসুদ, কাজী ভাই, উলফাৎ ও বাকী (পরে শহীদ) তাদের মধ্যে অন্যতম।

মেজর হায়দারের অধীনে তিন সপ্তাহ গেরিলা ট্রেনিং শেষে তারা সম্মুখ যুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণ করেন ক্যাপ্টেন গাফফারের (পরে জাতীয় পার্টি নেতা ও মন্ত্রী) নেতৃত্বাধীন সাব সেক্টরে। সেখানে ট্রেনিং শেষ করার পর প্রথমদিকে কসবা-মন্দভাগ (মির্জাপুর) যুদ্ধের নয় মাসই প্রতিদিন এক বা একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তার দল সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০১ সালে তার দল সরকার গঠন করলে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। এরপর তিনি সরাসরি নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেন।

কিডনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ সালের মে মাসে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান সাদেক হোসেন খোকা। তারপর থেকে গত সাড়ে পাঁচ বছর যাবত নিউইয়র্ক সিটির ইস্ট এলমহার্স্ট এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। এ সময় সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ইসমত হোসেন।

সংকটাপন্ন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা।

সেখানকার চিকিৎসকরা সাদেক হোসেন খোকার শারীরিক অবস্থা পরিবর্তনের আশা ছেড়ে দিয়ে সব চিকিৎসা বন্ধ করে দেন। তবে খোকার জীবনের শেষ ইচ্ছানুযায়ী অন্তিম সময়ে তাকে দেশে আনা পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। পাসপোর্ট না থাকায় দেশে ফিরতে পারেননি তিনি।

এ খবর প্রকাশিত হলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও তার পরিবার ‘ট্রাভেল পারমিট’ এর আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে যুক্তরাষ্ট্র কনস্যুলেট। এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। এর পরদিনই না ফেরার দেশে চলে গেলেন সাদেক হোসেন খোকা।


   আরও সংবাদ