ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ঋণ খেলাপিদের জন্য বিশেষ সুযোগ: অর্থমন্ত্রী


প্রকাশ: ৬ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


ঋণ খেলাপিদের জন্য বিশেষ সুযোগ: অর্থমন্ত্রী

   

নিউজ ডেস্ক: জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায় করতে খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

৬ নভেম্বর সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকই ধারণা করছেন যে, ভালো-মন্দ এক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভালো-মন্দ কখনও এক হবে না। আর যারা ভালো, তাদের কোনও এক্সট্রা ডিপোজিট বা ঋণ লাগবে না।

অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগে ২ শতাংশ কোনও বিষয় না। ২ শতাংশ শর্ত মেনেই তারা ঐক্যমত পোষণ করবেন যে তারা আমাদের সঙ্গে আছেন, তারা এই শর্ত বাস্তবায়ন করার জন্য এগিয়ে আসবেন। আমরা এক্ষেত্রে একটি কাজ করতে চাচ্ছি, সেটা হলো- কাউকে জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায় করা। যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছেন, তাদের সবাইকে টাকা দিতে হবে। যেভাবেই হোক এই টাকা আমরা আদায় করবোই। এটা রাষ্ট্রের সব মানুষের টাকা। তবে আমরা সময়টা একটু বাড়িয়ে দিয়েছি।’

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়টি যখন আসবে, তখন আমরা কার্যকর করবো। কার্যকর করতে গেলে আমাদেরও সবাইকে একটু সময় দিতে হবে। রায়ে কিছু পরিবর্তন হবে। আমাদের কিছু বাড়তি চাহিদা আছে। আগে রায় আসুক। রায়ের আগে কিছু বলা ঠিক হবে না। কোর্ট আর আমাদের মাঝে কোনও বিরোধ নেই। আমরা একই পক্ষ। আমরা যে কাজটি করতে যাচ্ছি, সেটি দেশের মানুষের জন্য, জনকল্যাণের জন্য। দেশে ব্যবসা বাণিজ্যবান্ধব আইন আমরা করতে যাচ্ছি। এখানে অনেক ইস্যু রয়েছে, তা একসঙ্গে করে ব্যাংকিং খাতটাকে দাঁড় করানোই হলো আমাদের উদ্দেশ্যে। এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কথাবার্তা হচ্ছে। আসলে আমাদের কোথাও কোথাও ভুল আছে। সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ঋণে সুদের হার ১০ এর ওপরে যাবে না। এটা ৯ দশমিক ৭৫ হবে। সিঙ্গেল ডিজিট হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি ইশতেহারে ও বাজেটে সেটা উল্লেখ আছে। আমরা ব্যাংক ঋণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদ আদায় করবো। এটা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ব্যাংক, ঋণ গৃহীতা, সরকার ও দেশের মানুষ না ঠকেন। সেই কাজ করতে হলে একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ সবাইকে সম্পৃক্ত করে এ কাজটি করতে হবে।’

ব্যাংকগুলো এখনও কোনও কমপাউন্ট সুদের হার করতে পারেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা এখন পর্যন্ত কিছু করতে পারিনি। তবে ব্যাংকগুলো করবে। যখন আমরা রায়ের কপি হাতে পাব, তখন কমপাউন্ট সুদের হার করতে বলা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানবে না এমন কোনও ব্যাংকের অস্তিত্ব বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না। যদি না মানে, সেজন্য আমরা আইনে পরিবর্তন নিয়ে আসছি। প্রয়োজনে মার্জ করা হবে, এধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসছি। সুতরাং সরকারের সিদ্ধান্ত মানবে না এটা হতেই পারে না। তবে যারা মানবে, তাদের আমাদের সাহায্য করতে হবে। এজন্য আমাদের যে সুযোগ সুবিধাগুলো আছে, তা দিয়ে সহযোগিতা করবো।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো গতবছরই তারা ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার কথা বলেছিল। এজন্য তারা সরকারের কাছে কিছু শর্ত দিয়েছিল। সরকার তা পূরণ করেছে। এরমধ্যে অনেকেই সিঙ্গেল ডিজিটে আসছে। আবার কেউ কেউ আসেনি। তাদের আসতে হবে, না হলে তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আইন সবার জন্য সমান। তারা ব্যবসা করলে লাভ করবে, কেউ কম কেউ বেশি করবে। কিন্তু রেট সবার এক হতে হবে।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অবস্থানে আসতে এদেশের মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। আমাদের তাঁতী, শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষক, কামার, কুমার, জেলে, সাংবাদিক সবারই অবদান রয়েছে। আমরা সৌভাগ্যবান, কারণ সুন্দর সময়ের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছি। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার রাস্তাগুলো হচ্ছে সংস্কার। বিভিন্ন খাতে আমাদের সংস্কারমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন- পুঁজিবাজার, ব্যাংকিং খাত, ননব্যাংকিং খাত, এনবিআর, শিক্ষাসহ সবক্ষেত্রে সংস্কার লাগবে। আমরা যদি সংস্কার না আনি, তাহলে পিছিয়ে থাকবো। অন্যান্য দেশ এসব কাজ ২৫ বছর আগে করেছে। আমরা কিছুতেই কোনও জায়গায় হাত দিতে পারিনি।

সরকারি ব্যাংক ছাড়া বেসরকারি ব্যাংক এই নিয়ম মানছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি কিছু বেসরকারি ব্যাংকও মানছে। তারাও সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসছে।

ব্যাংকিং কমিশনের বিষয়ে কী ভাবা হচ্ছে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকিং কমিশন যে আমরা করবো, সেটা বাজেটেও বলেছি। সুতরাং আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্ডারেই ব্যাংকিং কমিশন করবো। শিগগিরই করা হবে।


   আরও সংবাদ