ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাহিদুলের মনোবলই শক্তি, কবজি দিয়ে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ


প্রকাশ: ৮ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


জাহিদুলের মনোবলই শক্তি, কবজি দিয়ে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ

   

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি : মণিরামপুরের জাহিদুল ইসলাম দুই হাতের কবজি দিয়ে কলম ধরে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।  নিজের মনোবল তার শক্তি। লেখা-পড়ায় রয়েছে অদম্য আগ্রহ। মুখমন্ডল ও থুতু বিহীন এবং দুই হাতের কবজি বিহীন জাহিদুল কেবল পড়া-লেখা নয়, তার শারীরিক এ অবস্থা নিয়ে ক্রিকেট খেলায়ও বেশ পারদর্শী। 

জাহিদুল মণিরামপুর উপজেলার আগরহাটি গ্রামের ভাটা শ্রমিক মাহবুবুর রহমান ও গৃহিনী রাশিদা বেগমের ছেলে। সে উপজেলার ধলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবারের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। পড়া লেখায় মোটামুটি ভাল সে। ক্লাসে জাহিদুলের রোল নম্বর ০৬। তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার পাল এবং সহকারী গ্রন্থগারিক আব্দুল মজিদ জানান, জাহিদুল স্কুলের একজন নিয়মিত ছাত্র। লেখা-পড়ায়ও যথেষ্ট ভাল। কেবল মাত্র নেই তার হাত দু’খানি। 

এ অবস্থায় জাহিদুল আরো অন্য স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতো লেখা-পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাইকেল চালানোসহ সব কাজই করতে পারে। তবে বেশি পারদশর্ী ক্রিকেট খেলায়। মণিরামপুর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ১০৫ নম্বর কক্ষে অন্য  সহপাঠিদের সাথে পাশাপাশি বসেই সে পরীক্ষা দিচ্ছে । তার জেএসসি পরীক্ষার রোল নং-৭৬৫৬৮১ এবং রেজি: নং- ১৯১৩৩৫৭৪৮৬। 

জাহিদুলের সাথে কথা হলে সে জানায়, গত যে কয়টি পরীক্ষা দিয়েছে তাতে ভাল ফলাফল করার আশা করছে । দিনমজুর পরিবারের সন্তান জাহিদুলকে নিয়ে দুঃচিন্তা তার পিতা-মাতার। লেখা-পড়া না শিখলে তার ভবিষ্যৎ কি হবে ? কিভাবে তার জীবন চলবে এসব ভাবনা পিতা-মাতার মাথায়। বাবা-মা’র ইচ্ছা তাকে লেখা-পড়া শেখানো। তবে, অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে কতদুর তাদের আশা পূরণ হবে-এ নিয়ে রয়েছে শংকা। 

জাহিদুলের বাবা মাহাবুর রহমান জানান, ভাটায় শ্রমিকের কাজ করে চার ছেলে-মেয়েসহ ৬ জনের সংসার কোন রকম চলে। যে কারণে জাহিদুলের পিছনে অর্থ ব্যয় করার মতো সামর্থ তাদের নেই । বছর তিনেক আগে জাহিদুল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান লিখে উপজেলা পরিষদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নিজেই গান গেয়ে সবার নজরে চলে আসে। জাহিদুলের স্বপ্ন লেখা-পড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ক্রিকেট টীমে খেলার ইচ্ছা তার লালিত স্বপ্ন। লেখাপড়া না শিখলে তার ভবিষ্যৎ জীবনটাই যেন অন্ধকার। সে চিন্তা থেকেই লেখা-পড়ার প্রতি অধিক ঝোক রয়েছে তার। 

জাহিদুলের মা রাশিদা বেগম জানান, লাউড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে পড়া কালে খেলতে গিয়ে বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে তার দুটি হাত নষ্ট হয়ে যায়। ওই বিদ্যালয় থেকে সে প্রাথমিক সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ  করে জিপিএ ৪.৭৬ পেয়ে উত্তীর্ন হয়। তাকে বাঁচাতে চিকিৎসকরা তার হাত দুটি কেটে ফেলেন।

সমাজের বিত্তবানদের  সহযোগিতা পেলে সে লেখা-পড়া শিখে একটা ভাল চাকুরি করে ভবিষ্যত গড়তে চান জাহিদুল। তার প্রতি সদয় হওয়ার জন্য দানশীল ব্যক্তিদের প্রতি বিনৗীত আবেদন করেছেন তার পিতা-মাতা। 


   আরও সংবাদ