ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএসএমএমইউয়ে বিশ্ব সিওপিডি দিবস পালিত


প্রকাশ: ২০ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


বিএসএমএমইউয়ে বিশ্ব সিওপিডি দিবস পালিত

   

ধুমপান পরিহার ও দুষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমানারি ডিজিজ বিশ্ব সিওপিডি দিবস ২০১৯ উপলক্ষে বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি) বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- “সম্মিলিত প্রয়াস, সিওপিডি বিনাশ-All Together To End COPD”। শুরুতে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিবসের আনুষ্ঠানিকতার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ও বি ব্লকের মধ্যবর্তীস্থল বটতলা থেকে একটি বর্ণাঢ্য ও জনসচেতনতামূলক র‌্যালি বের হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। র‌্যালিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক, বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশরারফ হোসেনসহ উক্ত বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, ছাত্রছাত্রী ও নার্সরা  উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ধুমপান পরিহার ও দুষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। শরীরের ব্রেন, হার্ট, লিভারের মতোই ফুসফুসও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমানারি ডিজিজ ফুসফুসের রোগ সিওপিডি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি প্রতিরোধেও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে ধুমপান পরিহার করতে হবে ও তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বায়ু দুষণসহ সকল ধরণের দুষণমুক্ত পরিবেশ গড়ার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ঢাকা শহরের বায়ুসহ পরিবেশ দুষণের মাত্রা অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে। ঢাকা শহরের অধিবাসীরা বায়ু দুষণযুক্ত পরিবেশের মধ্যে বসবাস করায় তাঁরা সিওপিডি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এখনই অধিকমাত্রায় সচেতন হতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, সিওপিডি রোগ প্রতিরোধের জন্য অবশ্যই বায়ু দুষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সম্মানিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ধুমপান না করা, কলকারখানা ধোঁয়াসহ সকল ধরণের ধোঁয়া থেকে দূরে থাকা, তামাক চাষ বন্ধ করা এবং তামাক জাতীয় দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে সিওপিডিও রোগ অনেকটাই বিনাস করা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী তামাক মুক্ত দেশ গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশরারফ হোসেন বলেন, অসংক্রামক রোগের মধ্যে সিওপিডি রোগ অন্যতম এবং এই রোগ প্রতিরোধযোগ্য। ধুমপান পরিহার, তামাক সেবন না করা ও ধোঁয়া থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও বক্ষব্যধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আরো জানান, শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ সিওপিডি ধূমপায়ীদের বেশি হতে দেখা যায়। এটা ফুসফুসের একটা অসুখ যাতে নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সিওপিডি-র ফলে কাশি দেখা দেয়, সেই সঙ্গে কফ, নিঃশ্বাসে সাঁ সাঁ শব্দসহ নানা উপসর্গ থাকে। ধূমপানের সঙ্গে এই অসুখটি যুক্ত। যাদের এটা হয়, তাঁদের অনেকেই ধূমপান করেন বা এককালে করতেন। এছাড়া বাতাসের দূষণ, ধুলো, ধোয়া, ইত্যাদি যা আমাদের ফুসফুসে প্রদাহের সৃষ্টি করে তাদের জন্যেও এই রোগটি দেখা দিতে পারে। ২০০২ সাল থেকে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই দিবসটি প্রতিপালিত হয়ে আসছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে সিওপিডি রোগীর সংখ্যা ৮০ মিলিয়ন। এক পরিসংখ্যান মতে, ২০০৫ সালে তিন মিলিয়ন লোক এই রোগে রোগে মারা গেছেন। ২০০২ সালে সেখানে সিওপিডি রোগ মৃত্যুর ৫ম কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল, নিকট ভবিষ্যতে তা ৩য় মৃত্যুরর কারণ হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতে বক্ষব্যাধি বিভাগ, বিএসএমএমইউ কর্তৃক পরিচালিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এখানকার ৩৫ বছরের উর্ধ্বের জনসংখ্যার ১১.৪ ভাগ সিওপিডি রোগে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ১১.৭ ভাগ পুরুষ এবং ১০.৬ ভাগ মহিলা। সিওপিডি রোগ প্রতিরোধে তামাকের চাষ ও উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। সিগারেট ও তামাক কোম্পানীগুলো বন্ধ হলে হ্রাস পাবে সিওপিডি-তে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ও অনেকটাই কমে আসবে। কারণ ধূমপান ও তামাজাত দ্রব্য সেবনের কারণে শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারসহ মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ধূপপান পরিহার ও পরিবেশ দূষণ রোধের মাধ্যমে সিওপিডি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। বর্তমানে মহিলা ধূমপায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে-এটাও প্রতিরোধ করতে হবে। অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশরারফ হোসেন জানান, সিওপিডি রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে ধূপমান নিরাময় কেন্দ্র, এনসিডি (নন কমিউনিকেবল ডিজিজেস) কর্নার, পালমোনারি রিহ্যাবিলেটশন সেন্টার (ফুসফুসের রোগীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র), রেসপিরেটরি আইসিইউ, রেসপিরেটরি ইমাজেন্সি প্রতিষ্ঠা জরুরি। সিওপিডি একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। এই রোগটি প্রতিরোধে গ্রামেগঞ্জে পরিবেশবান্ধব চুলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে সিওপিডি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৮ ভাগ। বাংলাদেশে এ সংখ্যা প্রায় ১০ ভাগ। যারা ধূমপান করে তাদের মধ্যে এই সংখ্যা ১২ ভাগ। আর অধূমপায়ীদের মধ্যে এই সংখ্যা ৩ ভাগ।


   আরও সংবাদ