ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে দেশ জুড়ে অচলাবস্থা


প্রকাশ: ২০ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটে দেশ জুড়ে অচলাবস্থা

   

সময় জার্নাল প্রতিবেদন: পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গণপরিবহন ও পণ্যবাহী পরিবহন নেই বললেই চলে। এছাড়াও চলছে অঞ্চলভিত্তিক ধর্মঘট। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন জনসাধারণ। ঢাকার প্রধান প্রধান বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের অপেক্ষারত দেখা গেছে। একই ভোগান্তি ভোগ করছেন ঢাকামুখী যাত্রীরাও।

নতুন সড়ক আইন ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও দুই সপ্তাহ ধরে আইন নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে দুই সপ্তাহ শিথিল ছিল নতুন আইনের কার্যকারিতা। পরে গত সোমবার থেকে আইন কার্যকর হওয়ার পর অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করছেন করছেন শ্রমিকরা।

বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর সড়কগুলোতেও বাসের সংকট দেখা যায়। বাস স্টপগুলোতে অসংখ্য অফিসগামী মানুষকে বাসের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। রাস্তায় কিছু বিআরটিসি বাস ছাড়া বেসরকারি গণপরিবহন নেই বললেই চলে। এছাড়া রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ থেকেও কোনো বাস-মিনিবাস রাজধানীতে আসছে না। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বিশেষ করে অফিস ও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গামীরা। এই সুযোগে ইচ্ছা মতো ভাড়া হাঁকাচ্ছেন সিএনজি চালিত অটোরিকশাও রিকশা ও মোটরসাইকেল চালকরা।

রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম।

গাবতলী ও মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনাল ঘুরেও দেখা গেছে একই চিত্র। এসব বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়ছে না। পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন নতুন সড়ক পরিবহন আইনের সংশোধন ছাড়া তারা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামবেন না।

এদিকে, পরিবহন ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত ভেস্তে গেছে। খুলনা সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুপক্ষের আলোচনা শেষে মধ্যস্থতার প্রেক্ষিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা চলমান কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে আজ বুধবার সকাল থেকে বাস চালানোর কথা দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি।

পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠকে বাস ছাড়ার সিদ্ধান্তের পরও কেন বাস চলছে না- এ প্রশ্নের জবাবে খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম বেবী বলেন, চালকরা কেউ গাড়ি চালাতে চাচ্ছে না। ভোর সাড়ে ৬টায় সোনাডাঙ্গা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এসে চালকদের গাড়ি চালাতে অনুরোধ করা হলেও তারা তাতে রাজি হচ্ছেন না। চালকরা বলছেন, দুর্ঘটনা ঘটলে সব জরিমানা আপনি দিবেন- এমন লিখিত দিলে আমরা গাড়ি চালাবো।

এদিকে খুলনা শহর থেকে দূর পাল্লার কোন বাস না ছাড়লেও রূপসা-মোংলা, রূপসা-বাগেরহাটসহ বেশ কিছু রুটে বাস চলাচল করছে বলে জানা গেছে। তাবে যেসব রুটে বাস চলছে না সেই রুটের যাত্রীরা পড়েছেন দুর্ভোগে।

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে আসা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আজ সকালে বাস চলাচল করবে জানতে পেরে তিনি ফরিদপুর যাওয়ার জন্য সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে এসেছেন। এখন শুনছেন আজও বাস চলাচল করবে না। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, গত তিনদিন ধরে খুলনায় আটকে আজি। আজ ফরিদপুর না গেলেই হবে না। এখন কি যে করি শুধু তাই ভাবছি।’

শরিফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী যাবেন মাগুরায়। তারাও লাগেজ নিয়ে দু’ ঘণ্টার উপরে সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালে এসে বসে আছেন। তারা বলেন, এতো দূরের পথ আমরা কিভাবে যাব তা বলতে পারছি না।’

অপরদিকে পরিবহন ধর্মঘটের সুযোগে ইঞ্জিনচালিত স্থানীয় যান মাহিন্দ্র, মিনি পিকআপ, মাইক্রোবাসসহ ছোট গাড়িগুলো কয়েকগুণ ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব পরিবহনে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা গন্তব্যে যাচ্ছেন। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সড়ক পথে চলাচল বন্ধ থাকায় ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় হচ্ছে। খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে টিকিটের জন্য ঘণ্টার ঘণ্টার অনেকে অপেক্ষা করছেন। সিট না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন ট্রেনে।


   আরও সংবাদ