ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আবরার হত্যাকাণ্ডে বুয়েটের ২৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার


প্রকাশ: ২২ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


আবরার হত্যাকাণ্ডে বুয়েটের ২৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার

   

নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছাত্রলীগের ১২ নেতাসহ ২৬ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ৬ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করেছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।

আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বুয়েট বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিন এ সিদ্ধান্ত নেয়। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) মধ্যরাতে বুয়েট বোর্ড অব রেসিডেন্স এন্ড ডিসিপ্লিনের সদস্য সচিব ও ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিন উক্ত ঘটনায় ২৬ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করে। তাদের মধ্যে ২৫ জন পুলিশের অভিযোগপত্র অনুযায়ী অভিযুক্ত। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ছয় শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।

স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন, অমিত সাহা, মেহেদী হাসান রবিন, মুহতাসিম ফুয়াদ, অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রাসেল, ইফতি মোশররফ সকাল, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মাজেদুর রহমান, মো. মুজাহিদুর রহমান, এহতেশামুল রাব্বী, খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. আকাশ, শামীম বিল্লাহ, নাজমুস সাদাত, অমর্ত্য ইসলাম, মো. মোর্শেদ মন্ডল, মোয়াজ আবু হুরায়রা, মুনতাসির আল জেমি, মিজানুর রহমান, মুজতবা রাফিদ, আশিকুল ইসলাম, শামসুল আরেফিন রাফাত, ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না ও এস এম মাহমুদ। আর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হওয়া ৬ শিক্ষার্থী হলেন, নওশাদ সাকিব, সাইফুুল ইসলাম, মো. গালিব, শাওন মিয়া, ইকবাল অভি ও মো. ইসমাইল।

জানা যায়, বহিষ্কৃতদের মধ্যে ১২ জন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন। অন্যরাও ছাত্রলীগের কর্মী বা সমর্থক ছিলেন। এর আগে গত ১৩ নভেম্বর আবরার হত্যার ঘটনায় ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

বুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ১৬ নভেম্বর রাতে আমরা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। কয়েকবার এই বিষয় নিয়ে সভা করেছি। সর্বশেষ সভায় ২৬ শিক্ষার্থীকে আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ছাড়াও এই ঘটনায় সম্পৃক্ততা থাকায় ছয় শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার করা আসামিদের মধ্যে এজাহারভুক্ত আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে অপর আসামিদের সম্পৃক্ততাও উঠে এসেছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুইজন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এর বাইরে তদন্ত কর্মকর্তারা বুয়েটের শিক্ষক, শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট, চিকিৎসক, নিরাপত্তাকর্মীসহ বিভিন্নজনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। চার্জশিটে তাদের সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। চার্জশিটের সঙ্গে আলামত হিসেবে আবরারের রক্তমাখা জামা-কাপড়, মেসেঞ্জারে আসামিদের লিখিত যোগাযোগ, প্রযুক্তিগত অন্যান্য যোগাযোগ, শেরেবাংলা হলের সিসিটিভি ফুটেজসহ ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা আলামতও জমা দেওয়া হয়েছে।

স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়ে বুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম মুখপাত্র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মাহমুদুর রহমান সায়েম বলেন, অভিযুক্তদের বহিষ্কারের বিষয়টি জানতে পেরেছি। এখন আলোচনা করে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে জানানো হবে।

গত ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলে নিজের কক্ষ থেকে আবরারকে ডেকে নিয়ে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করে। পরের দিন তার বাবা বরকতুল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নামলে তাদের দাবির মুখে বেশ কয়েকজনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছিল বুয়েট প্রশাসন। ১০ দফার কয়েকটি মেনে নেওয়ার পর গত ১৫ অক্টোবর মাঠের আন্দোলন থেকে সরে আসে বুয়েট শিক্ষার্থীরা। তবে মামলার অভিযোগপত্র ও অন্য দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দেয়। এদিকে পাঁচ সপ্তাহের তদন্তে গত ১৩ নভেম্বর পুলিশ ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিলেও ক্লাসে ফেরার জন্য বুয়েট কর্তৃপক্ষকে তিনটি শর্ত দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ওই শর্তের একটি ছিল অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা।


   আরও সংবাদ