ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

সমুদ্রসীমায় জলদস্যুতার শাস্তি যাবজ্জীবন


প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


সমুদ্রসীমায় জলদস্যুতার শাস্তি যাবজ্জীবন

   

নিউজ ডেস্ক: সমুদ্রসীমায় জলদস্যুতা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে তাকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। সেইসঙ্গে দস্যুতা করে নেওয়া সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। এমন বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ মেরিটাইম অঞ্চল আইন, ২০১৯’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সোমবার (২৫ নভেম্বর) তেজগাঁওস্থ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই আইন অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘জলদস্যুতা, সশস্ত্র চুরি, সমুদ্রে সন্ত্রাস এবং চুরি করতে গিয়ে কেউ খুন হলে তার সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড। সাধারণ কোনো ব্যক্তি জলদস্যুতা বা সমুদ্রে সন্ত্রাস করলে তাকে যাবজ্জীবন শাস্তি পেতে হবে। সহায়তা করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বাংলাদেশের জলসীমায় চলাচলে বিদেশি জাহাজেও কোনো অপরাধ সংঘঠিত হলে এই আইন কার্যকর হবে।’

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের মেরিটাইম অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম অ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রনয়ণ করেন। পরবর্তী সময় ১৯৮২ সালে ‘ইউনাইটেড ন্যাশন্স কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি (আনক্লোজ-১৯৮২)’ শীর্ষক কনভেনশন জাতিসংঘ গ্রহণ করলে একই বছর ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ওই কনভেনশনে স্বাক্ষর করে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সি’ কর্তৃক প্রদত্ত হয় এবং ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী উপকূলীয় দেশের মধ্যকার সমুদ্র সীমা নির্ধারণ হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে গঠিত সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমন্বয় কমিটি ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর নতুন যুগোপযোগী আইন প্রণয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য লেজিসলেটিভ বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব অর্পণ করেন।’

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় সমুদ্রসীমা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে সমাঞ্জস্য রেখে মেরিটাইম অঞ্চল ঘোষণা ও সীমা নির্ধারণ, সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ, জলদস্যুতা, সশস্ত্র ডাকাতি, চুরি, সমুদ্রে সন্ত্রাস, নৌ চলাচলের নিরাপত্তা বিরোধী অবৈধ কর্মকাণ্ড দমন ও শাস্তি প্রদান, সামুদ্রিক পরিবেশ ও সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ, দূষণ করা ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ, পরিবেশগত ভারসম্য রক্ষা ও সংরক্ষণ, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন, পর্যটন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুনীল অর্থনীতি, ব্লু ইকোনমিসহ অন্যান্য বিষয়ে বিধিবিধান অন্তর্ভুক্ত করে আইনের খসড়া প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত করে। পরে খসড়াটি নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত করা হয়।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী ও গতিশীল নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সুনীল অর্থনীতির উপর গুরুত্ব প্রদান করছে। সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্র সম্পদের টেকসই অনুসন্ধান ও আহরণ হতে সর্বোচ্চ উপযোগিতা প্রপ্তির পূর্বশর্ত হলো- আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সঠিক মেরিটাইম অঞ্চল নির্ধারণ। আইন প্রণীত হলে তা ব্যাপক ভিত্তিক মেরিটাইম অঞ্চল নির্ধারণসহ অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রীয় ও জলসীমা ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল, এপক্লুসিভ ইকোনমিক জোন এবং ৩৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে সমুদ্র সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।

তিনি আরও বলেন, জলসদ্যুতা, সমুদ্র সন্ত্রাস, সমুদ্র দূষণসহ সমুদ্রে সংঘটিত অপরাধসমূহ এবং নৌ চলাচল নিরাপত্তা বিঘ্নকারী বেআইনি কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সামগ্রিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সুষ্ঠু সমুদ্র ব্যবস্থা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মেরিটাইম সুফল পাবারক্ষেত্রে এই আইনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এছাড়াও বৈঠকে বাংলাদেশ কর্তৃক ‘মন্ট্রিল প্রটোকল এর কিগালি’ সংশোধনী অনুস্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন, ২০১৯ সালের হজ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করণ ইত্যাদি অনুমোদন পায়।


   আরও সংবাদ