ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ ভাদ্র ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চৌগাছায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে ভুয়া এনজিও'র এমডি বারিক উধাও


প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


চৌগাছায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে ভুয়া এনজিও'র এমডি বারিক উধাও

   

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের চৌগাছায় কর্মচারী ও গ্রাহকের নিকট থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিবন্ধনবিহীন ‘বন্যা ইসলামী ডেভলপমেন্ট’ এনজিওর এমডি আব্দুল বারিক উধাও বলে অভিযোগ করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও মাঠকর্মীরা।

ভুয়া এনজিও 'বন্যা ইসলামী ডেভলপমেন্ট’ এমডি আব্দুল বারিক পাশাপোল গ্রামের জমিদারের ছোট ছেলে।

নিবন্ধনবিহীন স্থানীয় এনজিওটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল বারিকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে চৌগাছার ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন কর্মচারীরা। তাৎক্ষণিক ভাবে ইউএনও বিষয়টি নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চৌগাছা থানার ওসিকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন- নিবন্ধনবিহীন এনজিওটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপজেলার পাশাপোল গ্রামের আব্দুল বারিক, সংস্থাটির চেয়ারম্যান বারিকের স্ত্রী জুলেখা বেগম, প্রকল্প ম্যানেজার ও উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও উজিরপুর গ্রামের মনির মুন্না এবং পাশাপোল গ্রামের সাইফুল ইসলাম, আইটি অফিসার কেশবপুর উপজেলার শরিফুল ইসলাম, এরিয়া ম্যানেজার ও আব্দুল বারিকের সহোদর আব্দুল আলেক, বারিকের আরেক সহোদর তারেক, সহকারী প্রকল্প ম্যানেজার উপজেলার মাড়ুয়া গ্রামের মামুন উদ্দিন, শাখা ম্যানেজার ও পাশাপোল গ্রামের হাবিব, প্রকল্প ম্যানেজার জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী বিউটি খাতুন।

কয়েক মাস আগে যশোরের চৌগাছা উপজেলার কলেজপাড়ায় ‘বন্যা ইসলামি ডেভলোপমেন্ট’ নামে একটি এনজিও খুলে বসেন আব্দুল বারিক। তিনি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চেয়ারম্যান তার স্ত্রী জুলেখা বেগম। সংস্থাটিতে বিভিন্ন পদে ২১ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের কাছ থেকে জামানত হিসাবে নেয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এরপর গ্রামের মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ শুরু করে এনজিওটি। কয়েক মাস টাকা সংগ্রহের পর অফিস তালা লাগিয়ে তারা পালিয়ে যান।

এনজিওটি’র মাঠকর্মী ফেরদৌসি বেগম গত ২৫ নবেম্বর চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ থেকে জানা যায়, প্রায় চার মাস আগে বন্যা ইসলামি ডেভলোপমেন্ট নামে এনজিও’র অফিস খুলে বসে আব্দুল বারিক। স্থানীয় একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেখানে তাদেরকে ১৫-২০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেন। তাদের কাছ থেকে রশিদের মাধ্যমে টাকা নিয়েছেন। সেই রশিদ বইতে গ্রহণকারী, ম্যানেজার এবং প্রদানকারীর স্বাক্ষর আছে। 

গ্রামের গরীব মেধাবী শিক্ষার্থী ও অসহায় মানুষকে ইসলামি পন্থায় অল্প সঞ্চয়ে বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদানের জন্য এই এনজিও কাজ করছে বলেই তাদেরকে নিযোগ দেয়া হয়েছিল।

চাকরি পেয়ে তারা সকলেই বিভিন্ন গ্রামের অসহায় মানুষের কাছ থেকে ‘বন্যা ইসলামি ডেভেলপমেন্ট’ লেখা একটি জমা বইয়ের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করেছেন। সেই সঞ্চয়ের টাকা তারা এনজিও’র সহকারি প্রকল্প ম্যানেজার মামুন উদ্দিন ও আবদুল বারিকের ভাই তারেকের কাছে জমা দিতেন। কোন সময় টাকা বারিক নিজেই নিয়েছেন। কিন্তু তিন থেকে চার মাস পার হলেও এই সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা কোন বেতন পাননি। 

সেখানে কর্মরত প্রকল্প ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম ২ লাখ, ফিল্ড অফিসার দেলোয়ার হোসেন ৭০ হাজার, গোলাম কবির ৬৪ হাজার, জুই, ফেদৌসি ও তৌহিদুজ্জামান ৩ লাখ, শাহানাজ খাতুন ও টিংকু ২৫ হাজার, নাসরিন খাতুন ও সুমন ৪০ হাজার, সুমন্ত কুমার ও শাহ আলম ৯৮ হাজার, আজিজুর রহমান জামানতের টাকাসহ সঞ্চয় জমা দিয়েছে ৩০ হাজার ৩০০ টাকা, মাসুদ আরাফাত ও রাকিবুল ৫০ হাজার করে সঞ্চয়ের টাকা জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। 

অন্যদিকে যশোরের মণিরামপুর, রাজগঞ্জ, কেশবপুর ও শার্শা উপজেলায়ও একই এনজিওর শাখা অফিস আছে। সেখান থেকেও চাকরি দেয়ার নামে প্রায় ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আবদুল বারিক।

এ বিষয়ে বন্যা ইসলামি ডেভলোপমেন্ট’র প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এনজিওটি’র নিবন্ধন আছে কিনা আমার জানা নেই। বারিক আমাকে ২০ হাজার টাকা বেতনে এখানে চাকরি দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আমি কাগজপত্র এবং এই এনজিওর কাজ সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি আমাকে শো’কজ করে।

এনজিওটির মনিরামপুর, রাজগঞ্জ ও কেশবপুরের এরিয়া ম্যানেজার রেজা বলেন, গত ২ নভেম্বর আমি চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছি। ২৬ নভেম্বর থেকে আমাদের অফিস বন্ধ। আমরা যারা টাকা জামানত দিয়ে চাকরি নিয়েছি, তাদের কেউই আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল বারিক বা অন্য কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।

চৌগাছা পাশাপোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওবাইদুল ইসলাম সবুজ বলেন, ভুয়া "বন্যা ইসলামী ডেভেলপমেন্ট" এনজিও সংস্থার এমডি বারেককে বেশ কিছুদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না বলে আমি বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে এনজিওর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা আজ সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ পত্র দিয়েছে।

ওবাইদুল ইসলাম বলেন, এখানে চাকরি নেওয়ার আগে যে আমার কাছে জিজ্ঞেস করেছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবেই নিষেধ করছি। একটা নিবন্ধনহীন ভুয়া এনজিও।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, তবে আমি ভিকটিমদের পাশে আছি। তাদের জন্য যেকোনো ধরনের সহযোগিতাসহ সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন সেটা আমি করব।

চৌগাছা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নির্মল কান্তি কর্মকার জানান, বন্যা ইসলামি ডেভলোপমেন্ট নামে একটি এনজিও অনুমোদনের জন্য আমাদের কাছে আবেদন করে। আমরা সেটি জেলা অফিসে পাঠিয়েছিলাম। এনজিওটি নিবন্ধন হয়নি।

চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমলে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অভিযোগটি আমি চৌগাছা থানার ওসি বরাবর পাঠিয়েছি।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজিব বলেন, আমার কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ এখনও আসে নি। কিন্তু বিষয়টি আমরা শুনেছি। এবিষয়ে অভিযোগের কাগজপত্র পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


   আরও সংবাদ