ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বলিভিয়ায় বিজয় দিবস উদযাপন ও কনস্যুলার সেবা প্রদান


প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


বলিভিয়ায় বিজয় দিবস উদযাপন ও কনস্যুলার সেবা প্রদান

   

ব্রাজিল প্রতিনিধি : ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে এই প্রথম বারের মত বলিভিয়ায় বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস-২০১৯ পালিত হয়েছে। দূতাবাসের আওতাধীন ছয়টি দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন, তাঁদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপন ও দূতাবাসের কনস্যুলারসহ সার্বিক সেবা প্রবাসী বাংলাদেশীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার অব্যাহত প্রয়াসের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। 

গত দু’বছরে এ দেশগুলোর বিভিন্ন শহরে নিয়মিত কনস্যুলার ক্যাম্প পরিচালনা ছাড়াও ঐসব শহরে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোও পালন করা হচ্ছে। 

রাজধানী ব্রাজিলিয়ার বাইরে ব্রাজিলের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যনগরী সাঁও পাওলোতে মহান ভাষাশহীদ দিবস পালন, প্যারাগুয়ের সিউদাদ দেল এস্তে শহরে বাংলা নববর্ষ উদযাপন, বলিভিয়ার সান্তা ক্রূজ দে লা সিয়েরা শহরে এবারের মহান বিজয় দিবস উদযাপন ইত্যাদি দূতাবাসের এ প্ৰয়াসেরই অংশ। পরবর্তীতে চিলিতেও এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

দূতাবাসের ঐতিহাসিক এ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে বলিভিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা দলমত নির্বিশেষে ১৬ই ডিসেম্বর ২০১৯-এর সন্ধ্যায় সান্তা ক্রূজ দে লা সিয়েরা  শহরের এক সম্মেলনভবনে মিলিত হন। এর আগে একই ভবনে দিনব্যাপী কনস্যুলার ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়। 

কনস্যুলার সেবা প্রবাসীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য সেবাগ্রহণকারীরা ব্রাজিলের বাংলাদেশ দূতাবাসকে কৃতজ্ঞতা জানান এবং এ সেবা ভবিষ্যতেও চালু রাখার দাবী জানানো হয়। ক্যাম্পে উপস্থিত রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান তাদের দাবীর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে এখন থেকে নিয়মিত বলিভিয়ায় কনস্যুলার ক্যাম্প পাঠানো হবে মর্ম্মে প্রতিশ্রুতি দেন। 

জুলফিকার রহমান বলেন, বর্তমান প্রবাসীবান্ধব সরকারের সময়ে দুতাবাস বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি অতীতের অবহেলার পরিবর্তে সক্রিয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এ নতুন ধারা আগামীতে আরো জোরদার করা হবে।

বিজয় দিবসের সন্ধ্যায় দূতাবাস, বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশী আর তাদের বলিভিয়ান বন্ধুদের সম্মিলিত প্রয়াসে অনুষ্ঠিত হয় বলিভিয়ায় সরকারিভাবে প্রথম বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ ও বলিভিয়ার জাতীয় সঙ্গীত বাজিয়ে এ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। 

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।এরপর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণীসমূহ পড়ে শোনানো হয়।

মুক্ত আলোচনাপর্বে বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশীরা মাতৃভুমি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকলেও কিভাবে দেশের মঙ্গলের জন্য যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছেন, দুর্যোগের সময় স্বদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন বা রেমিট্যান্সযোদ্ধা হিসেবে কিভাবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। 

দূতাবাসের এ অভিনব উদ্যোগের জন্য তারা রাষ্ট্রদূতকে গভীর কৃতজ্ঞতা জানান এবং ব্রাজিলিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে নবপ্রতিষ্ঠিত এ সম্পর্কের যাতে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন। এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা রূপায়নে সবাই একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান তাঁর সমাপনী বক্তব্যে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষাধিক নারী মুক্তিযোদ্ধা ও চার জাতীয় নেতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তিনি সমবেত বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন।

দূতাবাসের আহবানে সাড়া দিয়ে প্রথমবার আয়োজিত এ অনুষ্ঠান সফল করে তোলার জন্য তিনি সর্বস্তরের বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে এ ধারা ভবিষ্যতেও বজায় রাখা হবে মর্ম্মে রাষ্ট্রদূত বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে প্রতিশ্রুতি দেন।  

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বেশ কিছু যুবার উপস্থিতির সুযোগে, যাদের জন্ম বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালে, রাষ্ট্রদূত জুলফিকার বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিসংগ্রামের ঘটনাক্রম সবিস্তারে বর্ণনা করেন। ভাষাসংগ্রামের মাধ্যমে সূচিত হওয়া স্বাধিকার আন্দোলন, বাঙালির আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কিভাবে পর্যায়ক্রমে সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে রূপান্তরিত হয়েছিল -- সেসব রক্তঝরা দিনের বর্ণনা দেন রাষ্ট্রদূত তাঁর সাবলীল ভঙ্গিমায়।

স্বাধীনতা-উত্তরকালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্ৰাম, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রে জাতির জনকের শাহাদৎ বরণ ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কিভাবে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ আলোকপাত করেন। 

একটি উন্নয়নশীল, মর্যাদাবান ও প্রগতিশীল জাতি গঠনে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যব্ধভাবে কাজ করার জন্য তিনি উপস্থিত সুধীমন্ডলীকে আহবান জানান। বলিভিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে নিয়মিত কনস্যুলার সেবা দেয়ার ব্যাপারেও তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এবং এ ব্যাপারে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহযোগিতা কামনা করেন। ব্রাজিলিয়া থেকে কয়েকহাজার মাইল দূরে একটি সফল আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

বলিভিয়ার সান্তা ক্রূজ দে লা সিয়েরা শহরে বিজয় দিবসের এই আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল স্থানীয় বলিভিয়ান শিল্পীদের পরিবেশনায় বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক গান "পূর্ব দিগন্তে সূর্য্য উঠেছে, রক্ত লাল রক্ত লাল"-এর কথা আর সুরে অসাধারণ নাঁচ পরিবেশনা। জমজমাট এ সাংষ্কৃতিক পর্বে একঝাঁক শিল্পীর উপস্থাপনায় বাংলা ও বলিভিয়ান সাংষ্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকবৃন্দকে মুগ্ধ করে।


   আরও সংবাদ