ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

যশো‌রে ১৫ হাজার হেক্টর জ‌মি‌তে স‌রিষা চাষ


প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


যশো‌রে ১৫ হাজার হেক্টর জ‌মি‌তে স‌রিষা চাষ

   

য‌শোর থে‌কে খান সা‌হেব : যশোরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন প্রকৃতির মাঝে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সরিষা ফুলের হলুদ রঙ। ধান আবাদে অব্যাহত লোকসানের কারণে সরিষা চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন জেলার চাষিরা। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় জেলার অধিকাংশ চাষি এখন অন্য ফসলের সাথে সরিষা আবাদ করছেন। 

যে কারণে গত মৌসুমের চেয়ে এ বছর ৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে যশোরে সরিষা আবাদ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। যা গত মৌসুমের চেয়ে ৪ হাজার হেক্টর জমি বেশি। মাত্র এক বছরের ব্যবধানের সরিষা আবাদ বেড়ে যাওয়াকে ধান আবাদে অব্যাহত লোকসানকে কারণ হিসেবে দেখছে কৃষি বিভাগ ও চাষিরা।

চাষিরা জানান, এক সময়ে যশোরে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা আবাদ হতো। প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে সরিষা আবাদ থেকে সরে এসে কৃষক ধান আবাদের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে ধানের ন্যায্যমূল্যে থেকে বঞ্চিত হয়ে কৃষক এখন আবার সরিষা আবাদের আগ্রহী হচ্ছেন। জেলার প্রায় সব এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সবুজের মাঝে হলুদ রঙের ছটা। আমন ধান কেটে একই ক্ষেতে সরিষা চাষ করে তারা লাভের আশা করছেন।

যশোর সদর ও বাঘারপাড়ার বিশাল অংশ মিলে বীল জলেশ্বরের অবস্থান। বিলটিতে এবছর রেকর্ড পরিমাণ সরিষা আবাদ হয়েছে। জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার হাবুল্যা গ্রামের মাঠে কথা হয় সরিষা চাষি এখলাছ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমন ধান কেটে ওই জমিতে আবার সরিষা চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকুলে হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। 

সামনে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এই মাঠে এর আগে সরিষা আবাদ হতো। কিন্তু প্রায় দশ বছর ধরে আমরা সরিষা আবাদ না করে সেখানে ধান আবাদ করে আসছি। কিন্তু গত তিন মৌসুমে ধান আবাদে লোকসানের কারণে আবার সরিষা আবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিন বিঘা জমিতে সরিষা বুনেছি।

একই কথা বলেন, কৃষক আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, অব্যাহত ধান আবাদের কারণে জমির উর্বরতা বলতে কিছু থাকে না। তারপর ধান আবাদে কোনো লাভ নেই, উৎপাদন খরচ তুলা কঠিন। অথচ সরিষা আবাদে খরচ কম ও লাভ বেশি। দুই তিনবার সেচ দিলেই চলে। একমন সরিষা ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা বিক্রি সম্ভব। একারণে আমরা আর ধান আবাদ করতে চাচ্ছি না। 

আগামীতে সরিষা আবাদের পাশাপাশি শাক-সবজির চাষ করবেন বলে তিনি জানান।
একই মাঠে কথা হয়, রফিকুল ইসলাম নামে আরেকজন চাষির সাথে। তিনি বলেন, দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ফলন আপাতত খুব ভালো মনে হচ্ছে। সরিষা তুলে একই জমিতে আবার সামনে বোরো আবাদ করবো। 

তিনি বলেন, সরিষা চাষ করে একদিকে আমরা যেমন মানসম্মত ভোজ্য তেল পাবো তেমনি ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হবো। কারণ বাজারে যেসব তেল বিক্রি হয় তার অধিকাংশ ভেজাল তেল। 

কথা হয় চৌগাছা উপ‌জেলার সিংহঝু‌লি গ্রা‌মের কৃষক সামছুল দফাদার এর সা‌থে তি‌নি ব‌লেন চল‌তি মওসু‌মে দশ বিঘা জ‌মি‌তে আমন ধান ক‌রে‌ছিলাম, লোকসান হ‌য়ে‌ছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। প্রাথ‌মিকভা‌বে এক বিঘা জ‌মি‌তে স‌রিষা চাষ ক‌রে‌ছি ভাল হ‌লে আগামী বছর বে‌শি কর‌বো। 

একই গ্রা‌মের সামছুল হক খান, মাওলানা আব্দুল গফুর, রামকৃষ্নপুর গ্রা‌মের লাবলু এরা সবাই জানান ধা‌নের ক্ষ‌তি পোষা‌তে স‌রিষার আবাদ ক‌রে‌ছেন। 

জান‌তে চাই‌লে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। কৃষকের এ উদ্যোগকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। জমির উর্বরতা ধরে রাখার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ জমির উর্বরতা ধরে রাখার জন্য শস্য নিবিড়তার জন্য কৃষককে কৃষককে সরিষা আবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। এজন্য অধিকাংশ কৃষক এখন সরিষা আবাদের প্রতি ঝুঁকছেন।


   আরও সংবাদ