ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষা দিতে চায় : প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষা দিতে চায় : প্রধানমন্ত্রী

   

স্টাফ রিপোর্টার : সরকার শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে চায় বলে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা একেবারে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষা, সেই শিক্ষাটা আমরা দিতে চাই, যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে গণভবনে বই উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর হাতে নতুন বছরের বই তুলে দেন। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে বই উৎসবের সূচনা করেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীন দেশটাকে আমরা উন্নত করে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য সবথেকে বেশি দরকার হচ্ছে, আমাদের যারা ভবিষ্যৎ নাগরিক, তারা যেন শিক্ষা-দীক্ষায় সব ধরনের শিক্ষায় উন্নত হয়, যাতে আমরা দেশকে গড়ে তুলতে পারি। আমাদের দেশের এই ভবিষ্যৎ নাগরিকেরা যেন আগামী দিনে একটা সুন্দর সমাজ পায়।’

একটা আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই আদর্শটা হচ্ছে, এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা। যে সমাজে কোন বৈষম্য থাকবে না। দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ হবে। উন্নত সমাজ হবে। সমৃদ্ধশালি হবে এবং বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে বিশ্বে মর্যাদা পাবে। কাজেই আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই। তারা শুধু বই পড়ায় না, কারিগরি শিক্ষা থেকে শুরু করে সব ধরনের শিক্ষায় পারদর্শী হয়।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, শিক্ষিত জাতি ছাড়া একটি জাতি কখনও সম্মানের সাথে বাঁচতে পারে না। জাতির পিতা স্বাধীনতার পর পর প্রায় ৩৬হাজারের উপর প্রাথমিক স্কুল তিনি সব সরকারিকরণ করে দেন এবং সংবিধানে প্রাথমিক শিক্ষাকে সম্পূর্ণ অবৈতনিক করে দেন। মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দেন। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তীকালে যখন সরকার গঠন করি তখন আমরা প্রায় ২৬ হাজার স্কুল সরকারিকরণ করেছি। প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় স্কুল সরকারিকরণ করে দিচ্ছি। সারাবাংলাদেশে যেখানে স্কলু নাই সেখানে আমরা নতুন নতুন স্কুল করে দিয়েছি।

শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিসহ বিনামূল্যে বই দেয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর একটা যুদ্ধবিধস্ত দেশ জাতির পিতা গড়ে তুলে বিনামূল্যে বই দেওয়া শুরু করেছিলেন। তাই আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আবার আমরা বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু করেছি।’

‘শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার দিকে নজর দিচ্ছি। প্রত্যেকটা উপজেলায় একটা করে মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছি। যাতে সেখানে আমাদের প্রত্যেক স্কুলের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে। খেলাধুলার সাথে সাথে সংস্কৃতি চর্চা, দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে বিশ্ব সম্পর্কে জানা, সেদিকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’

‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। আমরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম করে দিচ্ছি। খালি বই পড়ে পড়ে শেখা না, চোখে দেখা শেখা। তার ভিতর থেকে নিজেদের জ্ঞান অর্জন করা, সেভাবে লক্ষ্য রেখে সারাদেশে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড (ইন্টারনেট) পৌঁছে গেছে।’ সেই সাথে কম্পিউটার শিক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছি বলেও জানান শেখ হাসিনা।

শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালি সারাদিন বই পড়ে পড়ে সময় কাটানো না। শুধু পড় পড় করা না। বেশি পড় পড় বললে কিন্তু পড়তে ইচ্ছে হয় না। যদি সারাক্ষণ বলে পড় পড় তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খেলাধুলার মধ্য দিয়ে পড়াশোনা। নিজের গরজে পড়বে। নিজের আকাঙক্ষায় পড়বে। সেটাই তো ভাল লাগে তাই না? সেইভাবেই আমরা পড়াশোনা করার জন্য উৎসাহিত করি।’

দেশবাসীকে ইংরেজী নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন সকলের হাতে এখানে বই দিলাম। কারণ প্রত্যেকে যাতে বছরের প্রথমে নতুন বই পায়। আগে পুরনো ছেড়া, জীর্ণটীর্ণ বই হাতে দেওয়া হত। নতুন বই পেলে তো ভালও লাগে। বইয়ের ঘ্রাণটা ভাল লাগবে, বইয়ে মলাট লাগাতে হবে, নামটা লিখতে হবে, অনেক কাজ থাকবে। সেই কাজগুলি সকলে মিলে করবো। কি তোমরা করবে না? বইয়ের উৎসবটা আগামীকাল আমরা আমাদের তরফ থেকে প্রতিটি স্কুলে স্কুলে হবে।’

এসময় ছাত্রের তুলনায় ছাত্রীসংখ্যা বেড়েছে জানিয়ে ছাত্রের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

কওমী মাদ্রাসাকে মেইনস্ট্রিমে সংযুক্ত করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারাও এখন সার্টিফিকেট পাচ্ছে। সেই ব্যবস্থাটা আমরা করেছি।’

জেএসসি-জেডিসি-পিইস পরীক্ষায় কৃতকার্য সব শিক্ষার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দোয়া করি আজকের এই নতুন প্রজন্ম, এরা আগামী দিনে দেশের কর্ণধার হবে। এদের মধ্য থেকে কেউ আামদের মতো প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রীও হবে। শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী অনেক কিছু হতে পারবে। অনেক বড় বড় পদে যেতে পারবে। তার জন্য মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। আর পড়াশোনার সাথে খেলাধুলা বা অন্যান্য আনুষাঙ্গিক সব করতে হবে।’

‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বিশ্বসভায় আমরা যে মর্যাদা পেয়েছি; আমরা আরও মর্যাদা অর্জন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যে স্বপ্ন ছিল ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলা গড়ে তোলা, সেই সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে বাইরে এসে গণভবনে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সাথে ফটোসেশন করেন এবং আদর সোহাগে হাসি-তামাশায় মেতে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী।

এসময় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।


   আরও সংবাদ