ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ ভাদ্র ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাফলংয়ে পাথর কেয়ারি প্রশাসনের নজরদাড়িতে আন্দোলনের পথ খুজছেন শ্রমিকরা


প্রকাশ: ৩ জানুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


জাফলংয়ে পাথর কেয়ারি প্রশাসনের নজরদাড়িতে আন্দোলনের পথ খুজছেন শ্রমিকরা

   

গোয়াইনঘাট সিলেট থেকে রফিক : সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ও বিছনাকান্দি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে প্রশাসনের নজরদাড়িতে শ্রমিকের বন্দ রয়েছে । শ্রমজীবি মানুষের কর্মের উপর কঠোর অবস্থানে রয়েছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্তারা। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলামের নির্দেশনায় গোয়াইনঘাটের নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব যোগদানের পর পরই উপজেলার এ দুটি পাথর কেয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছেন। 
 
পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে ইতিমধ্যে পাথর কোয়ারি দুটিতে একাধিকবার টাস্কফোর্সের অভিযানও পরিচালনা করেছেন তিনি।

প্রশাসনের কঠোর নিষেধাজ্ঞার ফলে জাফলং ও বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি এলাকা থেকে বালু-পাথর উত্তোলনসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ দুটি পাথর কোয়ারিতে কর্মজীবিকা নির্বাহ করতেন প্রায় কয়েক লক্ষাধিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ী। কর্ম পরিবেশ না থাকায় যেমন বেকার হচ্ছে শ্রমিক - ব্যবসায়ীরাও তেমনি হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যাংকিং খাতে দিন দিন
ভারী হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ঋণের পাল্লা । এই কারনে তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ। 

অচিরেই পাথর কোয়ারি দুটি চালু না হলে কঠোর আন্দোলনের আভাস দিয়েছেন শ্রমিক-ব্যবসায়ী নেতারা। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, জাফলং কোয়ারি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় এই কোয়ারি থেকে বালু ও পাথর উত্তোলনে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

অপরদিকে বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিতে কোন প্রকার মামলা না থাকলেও শুধু পরিবেশগত কারণ দেখিয়ে মৌখিক নির্দেশনায় ওই কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। উচ্চ আদালতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, লাখো শ্রমিকের কর্মসংস্থানের উৎসস্থল অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। আর এমন কঠোরতার কারনে, এই দুটি পাথর কোয়ারি থেকে বালু, পাথর উত্তোলন, সরবরাহ ও পরিবহনসহ সব ধরনের কোয়ারিকেন্দ্রিক কর্মতৎপরতা বন্ধ রয়েছে।

বিগত বছরগুলোতে জাফলং ও বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি এলাকায় চলমান মৌসুমে যেখানে কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত থাকতো। সেখানে এখন কর্মের বদলে কর্মহীনতা বিরাজ করছে । এতে করে দিন দিন শ্রমিকদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে। এ নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। কোয়ারি চালুর দাবিতে যেকোন সময় তারা বৃহত আন্দোলনে নামতে পারেন বলে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন। 

জাফলং পাথর কোয়ারির শ্রমিক মতিউর মিযা  জানান, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। আইন-প্রশাসন আর পরিবেশ বুঝি না। আগে কর্ম করতে হবে তারপর অন্য কিছু। পাথর কোয়ারি খুলে দেন। কাজ না করলে ভাত জোগাবো কেমনে।

এ ব্যাপারে কথা হলে জাফলং-বল্লাঘাট পাথর উত্তোলন শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি আব্দুস শহীদ জানান, পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় লাখো শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। কর্মসংস্থান না থাকায় তারা এখন পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। খেটে খাওয়া মানুষের কথা বিবেচনা করে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্রাঞ্চলের মানুষজনের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত কোয়ারি থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

আর যদি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন করতে না দেওয়া হয় তাহলে, শ্রমিকদের রুটি রুজির স্বার্থে এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণকে নিয়ে কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।

বগাইয়া হাওর গ্রামের বাসিন্দা ও বিছনাকান্দি পাথর কেয়ারির বারকি শ্রমিক কুতুব উদ্দিন জানান, এতদিন সনাতন পদ্ধতিতে বারকি নৌকায় বালু-পাথর উত্তোলন করে জীবন-জীবিকা চালিয়ে আসছিলেন তিনি। যার আয় দিয়ে চলতো তার ৮ সদস্যর পরিবার। কিন্তু হঠাৎ করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু-পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তাদের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে আমাদের। তাই পাথর কোয়ারি খুলে দিয়ে তাদের এ দুর্দশা লাঘবে প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি কামনা করনে তিনি।

বিছনাকান্দি পাথর ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মাসুক আহমদ সাংবাদিকদের জানান, গোয়াইনঘাটের জাফলং ও বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি দুটিতে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই স্থানীয় এবং বহিরাগত সব মিলিয়ে লক্ষাধিকেরও বেশি শ্রমিক বালু ও পাথর উত্তোলনের কাজ করে তাদের জীবন জীবিকা চালিয়ে আসছেন। কিন্তু এ বছর কোয়ারি থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়ায় এর সাথে জড়িত শ্রমিক ও সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। 

গত মৌসুমের শেষ সময় থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত বেশ কয়েকমাস ধরে পাথর উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ব্যপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ সামসুল আলম  জানান, তামাবিল হাইওয়ে থেকে শুরু করে মামার বাজার পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশের গড়ে উঠা অবৈধ ডাম্পিং ইয়ার্ড ও ক্রাশিং মেশিনের কারনে রাস্তায় চলালচ করা খুব কষ্টকর। 

ক্রাশিং মেশিনের ডাস্ট উড়ে চার পাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সেই দিকে দৃষ্টি না দিয়ে জাফলং - বিছনাকান্দি কোয়ারিতে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনে আইনি কোন বাঁধা না থাকলেও প্রশাসনে তরফ থেকে মৌখিকভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। 

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে, কোয়ারি এলাকায় কঠোর হুশিয়ারি জারি করে পাথর ও বালু উত্তোলন করলেই সেখানে অভিযান চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। জাফলং কোয়ারি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে চলতে দেওয়া উচিত। 

যদি সেটা না হয় তাহলে এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ আইনশৃঙ্খলা অবনতির চরম আকার ধারন করতে পারে। তাই শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোড় দাবি জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব বলেন, জাফলং-বিছনাকান্দ পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এবং আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনে ও পরিবেশের দিক বিবেচনা করে, পরিবেশ জাতে কেউ নষ্ট করতে না পাড়ে সেই বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সজাগ দৃষ্টি রাখছে।


   আরও সংবাদ