ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজ থেকে পুলিশ সপ্তাহ: বিপিএম পিপিএম পাচ্ছেন ১১৮ জন


প্রকাশ: ৪ জানুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


আজ থেকে পুলিশ সপ্তাহ: বিপিএম পিপিএম পাচ্ছেন ১১৮ জন

   

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দমুখর পরিবেশে ৬ দিনব্যাপী (৫-১০ জানুয়ারি) পুলিশ সপ্তাহ ২০২০ শুরু হচ্ছে আজ। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার’। পুলিশ সপ্তাহের প্রথমদিন আজ বেলা ১১টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বর্ণাঢ্য বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন।

তিনি সারা দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ১১টি কন্টিনজেন্ট ও পতাকাবাহী দলের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করবেন।

এ বছর সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য পুলিশ সপ্তাহে চারটি ক্যাটাগরিতে ১১৮ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক বিপিএম ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক পিপিএমের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৪ জনকে বিপিএম, ২০ জনকে পিপিএম ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ২৮ জনকে বিপিএম-সেবা এবং ৫৬ জনকে পিপিএম-সেবা প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রী তাদের এ পদক প্রদান করবেন।

এছাড়া আইজিপিস ব্যাজ পাচ্ছেন ৫৯৫ জন। সব মিলিয়ে এ বছর সারা দেশে ৭১৩ পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম, পিপিএম ও আইজিপিস ব্যাজ। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, আজ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠান চলবে।

পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনের প্রথমদিন আজ বেলা পৌনে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির স্টল পরিদর্শন করবেন। ১১টা ১০ মিনিটে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ প্যারেড অনুষ্ঠিত হবে। বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজ ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বার্ষিক নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমদিনের সব অনুষ্ঠানই হবে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে।

এবারের পুলিশ সপ্তাহে নতুন দাবিদাওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের পুরাতন দাবিদাওয়া একীভূত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশকিছু দাবি জানিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী দাবিগুলো শুনে তাৎক্ষণিকভাবে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। তবে এখন পর্যন্ত একটি দাবিও বাস্তবায়ন হয়নি। একটি স্পোর্টস ট্রেনিং কমপ্লেক্স তৈরির দাবি জানানো হয়েছিল পুলিশ বাহিনীর জন্য। তবে পুলিশ সদর দফতরের ডেভেলপমেন্ট-২ শাখা সবেমাত্র উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরির কাজ করছে। তৈরির পর এই প্রস্তাবনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে যাবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। এ অবস্থায় শিগগিরই নিজস্ব স্পোর্টস কমপ্লেক্স পাচ্ছে না পুলিশ- এমনটা ধরে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে পুলিশ সদর দফতরে একাধিক বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। বিষয়টি এ বছর আবারও প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের অন্যতম দাবি ছিল দুই সদস্যের পারিবারিক রেশন সুবিধা প্রাপ্তি। গত বছর প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও এখনও তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা শাখার পুলিশ অধিশাখায় ঝুলে আছে।

এ ছাড়াও দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের পারিবারিক রেশন দেয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিহত হওয়া কর্মকর্তারা এ সুবিধা পান না। তাদেরও এ সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। পুলিশের বিশেষ ভাতা যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের কথা থাকলেও এ প্রস্তাবটিও ঝুলে আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-২ শাখায়।

পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ সদস্যদের জন্য বিশেষ ভাতা প্রদানের দাবি অনেকদিনের। সরকারি অন্য দফতরের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে যারা প্রশিক্ষণ একাডেমিতে থাকেন, তারা বিশেষ ভাতা পান। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের ক্ষেত্রে কোনো ভাতা দেয়া হয় না। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার বা একাডেমিগুলোয় যেসব সদস্য কাজ করেন, তাদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ভাতা দেয়ার ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে। কিন্তু এটা কেবল পুলিশ একাডেমি সারদা ও পুলিশ স্টাফ কলেজ মিরপুরে কর্মরত বিসিএস ক্যাডারদের জন্য। তাই এ বছর আমাদের দাবি হবে সব ট্রেনিং সেন্টারের কর্মরত সব সদস্যকে এ বিশেষ ভাতার আওতায় আনতে হবে।

পুলিশের অতিরিক্তি ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসন ক্যাডার ও সেনা কর্মকর্তাদের যানবাহন প্রাধিকার প্রদান করা হচ্ছে। এ সুবিধার আওতায় সরকারি কর্মকর্তারা গাড়ির জন্য বিশেষ সুবিধা ঋণ নিতে পারেন। ওই গাড়িটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে পারেন। ঋণ পরিশোধের পর গাড়িটি ওই কর্মকর্তার একান্তই ব্যক্তিগত হয়ে যায়। এখন পুলিশ সদস্যদের জন্য যে গাড়ি বরাদ্দ আছে, সেই গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারে সুযোগ নেই। তাই প্রশাসন ক্যাডার ও সেনা কর্মকর্তাদের যে ধরনের গাড়ি সুবিধা দেয়া হয়, পুলিশকেও যেন সে ধরনের সুবিধা দেয়া হয়। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, আমাদের দাবির মধ্যে অন্যতম হল জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী ভাতা। সরকারি আন্য দফতরে কর্মকর্তারা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী সব ধরনের ভাতা পেলেও পুলিশ সদস্যরা অনেক ধরনের ভাতা পান না। তাই এ বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোরাল আবেদন জানানো হবে।

পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, কর্তব্যরত অবস্থায় আহত বা নিহত পুলিশ সদস্যদের জন্য এককালীন থোক বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাবটিও প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হবে। কর্তব্যরত অবস্থায় কোনো পুলিশ সদস্য মারা গেলে তার পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকার আর্থিক অনুদান দেয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে কর্তব্যরত নন, চাকরিতে বহাল থাকা অবস্থায় মারা গেলেই ৮ লাখ টাকা পান। তাই এ বৈষম্য দূর করতে হবে। তাছাড়া কর্তব্যরত অবস্থায় কোনো পুলিশ সদস্য মারা যাওয়ার পর সেদিন থেকেই রেশন বন্ধ হয়ে যায়। এটা যাতে বন্ধ না হয়, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।

পুলিশের এআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কনস্টেবল ও এসআই পদে অনেক জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্যাডার পদে সেভাবে জনবল বাড়ানো হয়নি। নিচের লেভেলের জনবলের সঙ্গে সমন্বয় করে ক্যাডার পদে জনবল বাড়ানোর বিষয়টি অত্যন্ত জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ মেডিকেল সার্ভিস গঠনের প্রস্তাবটি দীর্ঘদিনের। মেডিকেল থেকে পাস করে যে ক্যাডার কর্মকর্তারা পুলিশে যোগ দিচ্ছেন, তারা সরাসরি মেডিকেল সার্ভিসে যোগ দেবেন। এ প্রস্তাব পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি মেডিকেল কোর গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেটি কেবল পুলিশের জন্য নয়, সেখানে আনসার এবং কারা-কর্তৃপক্ষের জন্য হবে। তাই এবার আমাদের দাবি থাকবে শুধু পুলিশ ক্যাডারের জন্য আলাদা মেডিকেল কোর গঠন করতে হবে।


   আরও সংবাদ