ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

এবছর অসময়ে বৃষ্টিতে তরমুজ চাষীদের সর্বনাশ


প্রকাশ: ৫ জানুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


এবছর অসময়ে বৃষ্টিতে তরমুজ চাষীদের সর্বনাশ

   

রাঙ্গাবালী পটুয়াখালী থেকে ইউসুফ আলী : বিস্তীর্ণ ক্ষেতে সবুজ লতায় মোড়ানো তরমুজ গাছের চারা দেখে চাষীদের বুকে স্বপ্ন উঁকি দিয়েছিল। কিন্তু পৌষ মাসের অসময়ের বৃষ্টিতে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার তরমুজ চাষীদের সেই স্বপ্ন পানিতে ভেসে গেছে। কোন ক্ষেতে পানি জমে চারা পঁচে যাচ্ছে। আবার রোদ ওঠায় কোন ক্ষেতের পাতা শুকিয়ে গাছ নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তরমুজ চাষীরা। কিভাবে ঋণ কিংবা দাদনের টাকা পরিশোধ করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজ উৎপাদনে অন্যতম এলাকা হিসেবে পরিচিত এ উপজেলা। এখানকার মানুষের প্রধান অর্থকরী ফসল তরমুজ। লাভজনক ফসল হওয়ায় অধিক লাভের আশায় আগাম তরমুজ আবাদ করেছেন অনেক চাষী। কিন্তু শুক্রবার ও শনিবার কয়েক দফার বৃষ্টিতে চাষীদের সেই আশা এখন নিরাশায় পরিণত হয়েছে। উঠতি তরমুজ চারার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শতকরা ৮০ শতাংশ তরমুজ ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। দুইদিনের বৃষ্টিতে প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমির উঠতি চারার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষকরা জানায়, অসময়ের বৃষ্টির এ অশনি সংকেতের কারণে মৌসুমের শুরুতেই অনেকে তরমুজ চাষাবাদে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ কৃষি ক্ষেত জুড়ে উঠতি তরমুজ চারাগুলো পানিতে ডুবে আছে। ক্ষেত থেকে পানি সরাতে কেউ নালা কাটছে, কেউ সেচ করছে। কেউবা পাওয়ার পাম্প লাগিয়ে পানি নিষ্কাশনের প্রাণপন চেষ্টা করছে। এরমধ্যে রোববার সকাল থেকে রোদ ওঠায় সেই কষ্ট অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। কারণ, বৃষ্টির পর রোদে গাছের পাতাগুলো শুকিয়ে নিস্তেজ হয়ে যেতে শুরু করেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষী পরিবার।

কথা হয় তরমুজ চাষী টিপু মুন্সির (৩৮) সঙ্গে তিনি জানান, উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের গহিনখালী গ্রামে ৩০ একর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ করেছেন। ক্ষেতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনে ব্যস্ত টিপু মুন্সি বলেন, ‘বৃষ্টিতে কৃষক শেষ। প্রায় ১৪ লাখ টাকার মত আমার ক্ষতি হইছে। রোদ ওঠার সাথে সাথে গাছ হেলে পড়েছে। এরচেয়ে আকাশ মেঘলা থাকলে কিছু চারা টিকতো।’

ওই গ্রামের আরেক চাষী আরিফ খলিফা বলেন, ‘আমরা যারা কৃষক আছি কেউ ঢাকা, কেউ এলাকা থেকে দাদন নিছি। অনেকে ঋণ করছে। কিন্তু বৃষ্টিতে আমাগো সব ভাসিয়ে নিছে। মোটামুটি চারা ভালোই হইছিল। কিন্তু বৃষ্টি চারার অবস্থা খুব খারাপ। ১০০ চারার মধ্যে ৯০টি চারা ঝাউল্লা (নিস্তেজ) হয়ে গেছে। চারা না বাচার সম্ভাবনা বেশি। যাদের চালান (মূলধন) নেই পরের থেকে এনে প্রজেক্ট করছে, তারাতো দ্বিতীয়বার দেওয়ার ক্ষমতা নাই।’

স্থানীয় তরমুজ চাষীরা জানায়, এবার ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর বাজারদরও মন্দা থাকায় কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে তরমুজ চাষ করেছে অনেকে। কিন্তু অকাল বৃষ্টিতে সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। লাভতো দূরের কথা, ঋণ কিংবা দাদনের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে তারা। 

উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের সাজির হাওলা গ্রামের চাষী রাতুল হাওলাদার বলেন, ‘দুঃখ কষ্টে অনেক চাষী ক্ষ্যাতের (ক্ষেতের) ধারে আয় না। পৌষ মাসে বৃষ্টি ওইবে (হবে) কেউ ভাবে নাই। কৃষক এইবার মাঠে মাইর খাইছে।’

এ বৃষ্টিতে শুধু তরমুজের নয়, রবিশস্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, খেশারি ৪৫০ হেক্টর, ফেলন ডাল ২ হাজার ২০০ হেক্টর, গোল আলু ২২ হেক্টর, মরিচ ৩০ হেক্টর, সবজি ৩৫০ হেক্টর, সরিষা ৫ হেক্টরসহ অন্যান্য সব রবিশস্যের শতকরা ৫০ শতাংশ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সামনে আর বৃষ্টি না হলে তরমুজ ক্ষেতের ক্ষতির পরিমাণ কমবে বলে আশা করছি। তরমুজসহ অন্যান্য রবিশস্যের ক্ষতির পরিমাণ যাতে কমানো যায়, সে বিষয়ে কৃষকদের মাঠপর্যায় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।


   আরও সংবাদ