ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রতিবন্ধী লিতুন চান্স পেয়েও ভর্তি হয়নি, খারাপ আচরণকে দুষছেন পরিবার


প্রকাশ: ৭ জানুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


প্রতিবন্ধী লিতুন চান্স পেয়েও ভর্তি হয়নি, খারাপ আচরণকে দুষছেন পরিবার

   

মনিরামপুর যশোর থেকে আব্বাস উদ্দীন : অদম্য মেধাবী মণিরামপুরের হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেয়া প্রতিবন্ধী লিতুন জিরা ভর্তি যুদ্ধে মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও প্রধান শিক্ষকের আচরণে কষ্ট পেয়ে ভর্তি হতে রাজি হয়নি। সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও শেষ সে পর্যন্ত ভর্তি না হওয়ায় কারণটা প্রকাশ্যে আসে কয়েক দিন আগে। 
 
লিতুন জিরার মা জাহানরা বেগম জানান, গত ২৩ ডিসেম্বর, মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মেয়েকে নিয়ে উপরে উঠতে কষ্ট হবে বিধায় প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী স্যারকে নিচ তলার একটি কক্ষে লিতুন জিরার পরীক্ষা নেয়ার অনুরোধ করেন। 

এতেই প্রধান শিক্ষক তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন। এক পর্যায় লিতুন জিরা ও বাবার সামনে তার মাকে উদ্দেশ্য করে প্রধান শিক্ষক বলেন, বস্তা ভর্তি ধান নিয়ে নাড়া চাড়া করতে পারলে মেয়েকে (লিতুন জিরা) নিয়ে উপরে উঠতে সমস্যা কোথায়? পঙ্গু মেয়েকে কিভাবে স্কুলে আনা-নেয়া করবেন? আপনার পঙ্গু মেয়ের জন্য তো আলাদা ব্যবস্থা করতে পারবো না। 

অন্যখানে ভর্তি করান। প্রধান শিক্ষকের এহেন আচরণে অঝোরে কাঁদেন লিতুন জিরা ও তার বাবা-মা। প্রধান শিক্ষকের এমন নিষ্ঠুর আচরণে হতবাক বনে যান তারা। 

হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেয়া লিতুন জিরার সামনেই তার মায়ের সাথে এমন আচরণ করেন যশোরের মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী। প্রধান শিক্ষকের আচরণে কষ্ট পেয়ে ভর্তি যুদ্ধে মেধা তালিকায় স্থান করেও ক্ষোভে-কষ্টে ভর্তি হয়নি লিতুন জিরা। আর ভর্তি না হওয়ায় এসব তথ্য প্রকাশ্যে আসে। 

অথচ শিক্ষানীতি-২০১০ বলা হয়েছে‘ প্রতিবন্ধকতার কারণে কোন শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রাখা যাবে না।’ শিক্ষানীতি ২০১৩-এর প্রারম্ভিক সংঘা ২(ঢ)-তে ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর সম-সুযোগভিত্তিক শিক্ষা অধিকার ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।’ অথচ এর কোনটিই মানেননি প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী।

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার শেখ পাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে মুখে ভর দিয়ে লিখে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জনকারি অদম্য মেধাবি লিতুন জিরা মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় মেধার সাক্ষর রাখে। সে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে।

প্রধান শিক্ষকের আচরণে কষ্ট পেয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও কোনভাবেই মেয়ে এখানে ভর্তি হতে রাজি হয়নি বলে জানান তিনি। অথচ মেয়েকে সরকারি স্কুলে পড়ার জন্য পাশেই বাসা খুজছিলেন তারা। মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে নিজের মেধা যাচাইয়ের ইচ্ছা ছিলো লিতুন জিরার। কিন্তু তার সে ইচ্ছা পূরণে প্রতিবদ্ধকতা হিসেবে একমাত্র স্কুলের প্রধান শিক্ষকের খারাপ ব্যবহারকে দুষছেন স্বজনরা।

লিতুন জিরা জানায়, প্রধান শিক্ষক যদি এমন আচরণ করেন। তাহলে শারিরীক অসুবিধা দেখে তার সহপাঠীরা কিভাবে দেখবে! তার ধারণা ছিলো প্রধান শিক্ষক হবে সহানুভূতিশীল। কিন্তু স্যারের কাছ থেকে উল্টো আচরণে সে ভর্তির ইচ্ছা বাদ দেয়। 

লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান জানান, শুধু প্রধান শিক্ষকের খারাপ আচারণে লিতুন জিরাকে ভর্তি করতে কোনভাবেই রাজি করাতে পারেনি। 

প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কেন ভর্তি হলো না সেটা আমি কী করে বুঝবো।

জেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা মুনা আফ্রিন জানান, প্রধান শিক্ষকের এমন খারাপ আচরণের কথা লিতুন জিরার বাবা-মা তাকেও জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের এমন আচরণ কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।


   আরও সংবাদ