ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

দেউলিয়া হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোটাধিকার বাতিল


প্রকাশ: ৩ জুলাই, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


দেউলিয়া হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোটাধিকার বাতিল

   

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে দেউলিয়া আইনকে কঠোর করা হবে।ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ব্যক্তি ঋণ নিয়ে দেউলিয়া হলে তিনি নিজ নামে সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ভোটও দিতে পারবেন না। একই সাথে কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন ঋণ নিতে পারবেন না। দেউলিয়া আইনের প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনী প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এতে বলা হয়েছে, যিনি দেউলিয়া হবেন তিনি দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না। উঠতে পারবেন না বিমানে। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দাওয়াতও পাবেন না। তবে দেউলিয়ার দায় থেকে মুক্ত হলে আদালতের সম্মতি নিয়ে এসব সুবিধা আবার ভোগ করতে পারবেন। খেলাপির দায় থেকে মুক্ত হতে কোনো ঋণখেলাপি এই আইনের আওতায় মামলা করে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারবেন।

একইভাবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানও মামলা করে কোনো খেলাপিকে দেউলিয়া ঘোষণা করাতে পারবে।এই আইনের আওতায় কেউ দেউলিয়া হলে আদালত থেকে এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে। ফলে তারা নিজ নিজ উদ্যোগে দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি যাতে ওইসব সুবিধা ভোগ করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করবে।দেউলিয়া আইনে এসব বিধি বিধানের অনেক কিছুই রয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট আকারে নেই। এ কারণে এগুলোর প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। এবার প্রস্তাবিত সংশোধনীতে এসব বিধি বিধান যুক্ত এবং সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তি ও রিসিভার নিয়োগ, রিসিভারের প্রতিবেদন দাখিল সংক্রান্ত বিষয়ের দিনক্ষণও সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে।

এদিকে দেউলিয়া আইন প্রয়োগের বিষয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে আইনের প্রয়োগের সমস্যাগুলো তুলে ধরে এর সমাধানে সংশোধনের সুপারিশ করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, দেউলিয়া আইন প্রয়োগ করে অনেক দেশ খেলাপি ঋণ আদায়ে সুবিধা পেয়েছে। বাংলাদেশেও এটি পাওয়া সম্ভব। এর জন্য আইনের স্পষ্টতা দরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, দেউলিয়া আইনের আওতায় মামলা হলেও এগুলো আইনের দুর্বলতার কারণে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ফলে আইনটি ইতিমধ্যেই কার্যকারিতা হারিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইনটি ভালো। তবে এর স্পষ্টতা দরকার। একই সঙ্গে এটি প্রয়োগ করা হবে কিনা সে ব্যাপারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। তাহলে এর সুফল পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, ঋণখেলাপিদের এমন একটি বার্তা দিতে হবে যে, ব্যাংক থেকে জনগণের আমানত নিয়ে ব্যবসার নামে তা আত্মসাৎ করা যাবে না। ফেরত দিতে হবে। তাহলেই খেলাপি ঋণ বাড়ার প্রবণতা কমে যাবে। আর্থিক খাতও এর সুফল পাবে।

এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেউলিয়া আইনটি সংশোধন করে ঋণখেলাপির সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার একটি ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর আগে থেকেই এই আইন সংশোধনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি কমিটি কাজ করছে। একই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটিও এ বিষয়ে কাজ করছে।

দুটি কমিটির প্রতিবেদন সমন্বয় করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালের নেতৃত্বে গঠিত অপর একটি কমিটি। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সদস্য হিসেবে রয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক রিসিভার পাওয়া গেলে আইনের বাস্তবায়ন অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তখন অনেকেই পেশাদার রিসিভার হিসেবে কাজ করতে উৎসাহী হবে।


   আরও সংবাদ