ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অবৈধ বাধ উচ্ছেদ করলেন ইউএনও, গ্রামবাসীর নামে মামলা দখলদারের


প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


অবৈধ বাধ উচ্ছেদ করলেন ইউএনও, গ্রামবাসীর নামে মামলা দখলদারের

   

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের চৌগাছায় পাশাপোল ইউনিয়নের কালিয়াকুন্ডি গ্রামে সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ, শতাধিক একর জমির বোরো ধান চাষ করতে পারছেন না গ্রামবাসী। বিষয়টি নিয়ে গত ৩১ ডিসেম্বর বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের সূত্র ধরে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম ২ জানুয়ারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ওই অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ করেন। ইউএনও অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ করলেও সরকারি ওই খালের দখলদার স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামী জুল হোসেন গত ৬ জানুয়ারী গ্রামের ৫ নিরাপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত চৌগাছা যশোরে একটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করেছেনে। ১৪৩/ ৪৪৭/ ৩৭৯/ ৫০৬(খ)/ ১০৯(খ) ধারার মামলায় গ্রামের মৃত সোলাইমানের ছেলে আব্দুল মজিদ, মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে আয়ুব হোসেন, হেরমত আলীর ছেলে আব্দুস সাত্তার, সৈয়দেল হক কাজীর ছেলে ওমর আলী কাজী ও মানিক মন্ডলের ছেলে আলী হোসেনকে আসামী করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে গত ২ জানুয়ারী বেলা আনুমানিক ১২টা থেকে বিকাল আনুমানিক ৫ টার মধ্যে তারা জমি দখল পূর্বক খুন জখমের হুমকি দিচ্ছেন এবং তার নালিশি জামি হতে ৩৫ লক্ষ টাকার মাছ লুট করে নিয়েছেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে আদালত চৌগাছা থানার ওসিকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারী আদালত মামলার পরবর্তী শুনানীর দিন ধাযর্য করেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের কালিয়াকুন্ডি গ্রামে রাজারকাটা খাল থেকে বারো মাসের খাল পর্যন্ত সরকারি খালে অবৈধভাবে বাধ দিয়ে পানি আটকিয়ে মাছ চাষ করছে ৩ ব্যক্তি। খালের পানি বের হওয়ার পথও তারা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে খাল পাড়ের ৮ গ্রামের পানি বের হতে পারছে না। এতে কয়েকশ’ বিঘা জমিতে চলতি বছর বোরো আবাদ করতে পারছে না স্থানীয় মানুষ।যার জন্য গ্রামের মানুষের একশত একরের বেশি জমিতে আবাদ করতে পারছেন না। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে চৌগাছার ইউএনও নিজে উপস্থিত থেকে ওই বাঁধ উচ্ছেদ করেছেন। অথচ ভুমিদস্যু জুল হোসেন একইদিনের একই ঘটনার বিষয়ে গ্রামের নিরিহ ব্যক্তিদের নামে মামলা করেছেন। এ বিষয়ে গত রবিবার বিকাল পাঁচটায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে দখলদার এবং ভুক্তভোগী পক্ষ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল ইসলাম সবুজের উপস্থিতিতে এক রুদ্ধদার বৈঠক উপস্থিত হয়। ওই বৈঠকে অবৈধ দখলদার জুল হোসেন ও গ্রামবাসী উভয় পক্ষ থেকে এ বিষয়ে গ্রামে পরবর্তীতে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় লিখিত অঙ্গীকারপত্র নেয়া হয়েছে যে, এ বিষয়ে কোন পক্ষই আর কোন মামলা করবেন না। জুল হোসেন তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন। জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলার কালিয়াকুন্ডি, রানিয়ালী, মালিগাতি, হাউলী, বাড়িয়ালীসহ ৮ গ্রামের পানি বের হয় রাজারকাটা খাল দিয়ে। পরে এই পানি যায় যশোর সদর উপজেলার বুকভরা বাওড়ে। সেখান থেকে খালের মাধ্যমে চলে যায় কপোতাক্ষ নদে। গত ২০১৩ সালে কালিয়াকুন্ডি গ্রামের জুল হোসেন, যশোর সদরের ইসলামপুরের সাদেক হোসেন ও শেখ পাড়ার আল আমিন সেখানে মাছ চাষ করছে। সারা বছর মাছ চাষ করার জন্য তারা কালিয়াকুন্ডির রাজারকাটা খালের মুখে ও বারো মাসের খালের মুখে ব্রিজের নিচে ইট দিয়ে বেঁধে দিয়েছে। এতে খালের পাড়ে আড়াইশ’ বিঘা জমিতে এখন পানি জমে আছে। ফলে ওই জমিতে বোরোসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ করতে পারছে না স্থানীয় মানুষ। কালিয়াকুন্ডির সুলাইমান হোসেন জানান, খালের পাড়ে তার জমি আছে। আগে ওই জমিতে তিনি বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসল ফলাতে পারতেন। কিন্তু এখন তারা কোন আবাদ করতে পারছেন না। গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল মুজিদ বলেন, তার গ্রামের অনেক মানুষের জমি রয়েছে খালের পাশে। প্রভাবশালী মহল মাছ চাষ করায় তারা এখন ধান চাষ করতে পারছেন না। অথচ তাদের অন্য কোন পেশা নেই। চাষ করেই তাদের সংসার চলে। এখন তাদের অনেক সমস্যা। সংসার চলছে না। এরপর গত ২ জানুয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই পাঠাবাধ উচ্ছেদ করেন। স্থানীয় পাশাপোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অবাইদুল ইসলাম সবুজ বলেন, তারা মাছ চাষের জন্য ব্রিজের নিচে বাঁধ দিয়েছে। ফলে এই খাল দিয়ে পানি বের হতে পারছিল না। এতে এলাকার মানুষ সমস্যায় পড়েন। আমার ইউনিয়ন পরিষদে কয়েক বার শালিস বিচার করেছি। কিন্তু যারা মাছ চাষ করছে, তারা কোন কথা শুনছিল না। সংবাদপত্রে বিষয়টি প্রকাশ হলে গত ২ জানুয়ারী চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অবৈধ পাটাবাধ উচ্ছেদ করেন। এরপরও জুল হোসেন গ্রামের কয়েকজন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে আসামী করে মিথ্যা মামলা করেছেন। সরকারি খাল অবৈধভাবে দখলকারী এবং গ্রামবাসীর নামে মিথ্যা মামলার বাদি জুল হোসেন বলেন  গ্রামের জনগন ইউএনওকে ভুল বুঝিয়ে পাটা-বাধ উচ্ছেদ করেছে এবং আমার অনেক টাকার মাছ লুট করেছে। এজন্য তাদের নামে মামলা করেছি। তিনি আরো বলেন, আমি ১৫৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করছি। সবটুকু ব্যক্তি মালিকানা জমি। তবে সেখানে কিছু সরকারি জমিও আছে।  খাস খতিয়ানের বিলের জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন হলো কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগের ইউএনও স্যার দিয়ে গেছেন। এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন গত ২ জানুয়ারী অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদের সময় দখলদার জুল হোসেন তার মাছ চাষের সম্পত্তি বিভিন্নজনের কাছ থেকে লিজ নেয়া দাবি করলেও নিজের পক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি। তিনি বলেন, এই ১/১ তফসীলভূক্ত সম্পত্তি অবৈধ দখলমুক্ত করতে যাচাই বাছাই পূর্বক রেকর্ড সংশোধনী মামলা (মিস কেস) করে সরকারের অনুকুলে ফিরিয়ে আনা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, কালিয়াকুন্ডি মৌজায় ৬২২ নং দাগ ১/১ খাস খতিয়ান হিসেবে সরকারি রেকর্ডভূক্ত ছিল। যেখানে জমির পরিমান ৭.৭৭ একর (প্রায় ২৫বিঘা)। ২০১৬/১৭ সালে উপজেলা ভূমি অফিস হতে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়। এটা সেসময় যোগসাজসে হয়ে থাকতে পারে। কিভাবে খাস খতিয়ানের এই জমি বিভিন্নজনের নামে রেকর্ড হলো সেটা জানতে সংশ্লিষ্ট তহশিল অফিসকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


   আরও সংবাদ