ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বিমান দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ সোয়া কোটি টাকা


প্রকাশ: ২০ জানুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


বিমান দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ সোয়া কোটি টাকা

   

স্টাফ রিপোর্টার : বিমান দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তির মৃত্যু বা আঘাতজনিত ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ ২০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রায় সোয়া কোটি টাকা রেখে নতুন একটি আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনে যাত্রীর ব্যাগেজ নষ্ট হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে তার জন্য ক্ষতিপূরণের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।

সোমবার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) আইন, ২০২০’ শীর্ষক আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরে বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বৈঠক নিয়ে অবহিত করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আকাশপথের যাত্রীদের সুরক্ষা দিতে ‘মন্ট্রিল কনভেনশন-১৯৯৯’-এর আলোকে নতুন আইনটির খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনটি প্রণীত হলে বিমান দুর্ঘটনায় যাত্রীর মৃত্যু বা আহত হওয়া এবং ব্যাগেজ হারানো বা নষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হবে। এরকম আইন না থাকার কারণেই ২০১৭ সালে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় হতাহতরা নামমাত্র ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।


সচিব বলেন, পুরনো আইনে (ওয়ারশ কনভেনশন) বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা আঘাতজনিত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ ফ্রাংক, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৬শ টাকা। নতুন আইনে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এক লাখ এসডিআর (আইএমএফ সংজ্ঞায়িত মুদ্রা বিনিময়ের হার) বা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪৪ মার্কিন ডলার। দেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় এক কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩৩৪ টাকা।

এছাড়া, নতুন আইন অনুযায়ী ফ্লাইট দেরি হওয়ার কারণে পরিবহণকারীর দায় হবে পাঁচ হাজার ৭৩৪ মার্কিন ডলার, যা আগে ছিল মাত্র ২০ ডলার। ব্যাগেজ হারানো বা নষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে যাত্রীরা আগের আইন অনুযায়ী প্রতি কেজিতে পেতেন ২০ মার্কিন ডলার, যা এখন করা হয়েছে প্রতি কেজিতে এক হাজার ৩৮১ ডলার বা প্রায় এক লাখ ১৭ হাজার টাকা। আর কার্গো নষ্ট বা হারানোর জন্য প্রতি কেজি ২০ ডলার থেকে নতুন আইনে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজিতে ২৪ ডলারে (প্রায় দুই হাজার ৪০ টাকা)।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যাত্রীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ পাবেন তার সম্পত্তির বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিরা। সংশ্লিষ্ট উড়োজাহাজের পক্ষ বা বিমাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বা আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে। এছাড়া আকাশপথে অভ্যন্তরীণ পরিবহনে দেরি হওয়া, ক্ষয়-ক্ষতি, মৃত্যু ইত্যাদির ক্ষেত্রেও এই আইন মন্ট্রিল কনভেনশন এবং এর আলোকে প্রণীত প্রটোকলের সংশোধনীগুলো নিয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধি প্রণয়ন করে সরকার প্রয়োগ করতে পারবে।

এর আগে, গত ২৬ আগস্টের বৈঠকে এই আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। এবার খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলো। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বর্তমান আইনকে যুগোপযোগী করতে ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০২০’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি অনুমোদিত হলে নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে মালিকানা হস্তান্তরের সুযোগ তৈরি হবে। বর্তমানের ‘বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’তে এই বিধান ছিল না। এছাড়াও মন্ত্রিসভার বৈঠকে এদিন ‘আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন,২০২০’-এর খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ভোজ্য লবণে আয়োডিনযুক্ত করে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীকে আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ থেকে সুরক্ষা দেওয়াই এই আইনের লক্ষ্য। নতুন আইনে জাতীয় আয়োডিনযুক্ত লবণ কমিটি গঠন, পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়ন সেল গঠন, লবণ উৎপানকারীর প্রশিক্ষণ, লবণ গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা এবং মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯-র প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে।

এছাড়াও ‘চট্টগ্রাম বন্দর কতৃর্পক্ষ আইন, ২০২০’-এর খসড়ার ও নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া ৬ এপ্রিল আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবসের পাশাপাশি ‘জাতীয় ক্রীড়া দিবস’ উদযাপনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর নন-ক্যাডার অষ্টম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বণ্টন পদ্ধতি স্পষ্ট করার লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত পরিপত্র সংশোধনের প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে।

বাসস।


   আরও সংবাদ