প্রকাশ: ২১ জানুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : প্রকৃতিতে কখন কিভাবে তার প্রভাব বিস্তার করে কেউ জানে না। তবে তার আক্রমণ শানানোর কৌশল ও ভয়াবহতার ধরনে আলাদা। এবার হাজির হয়েছে নতুন নাম ‘নোভেল কোরোনাভাইরাস’ আর এই ভাইরাসের হানায় হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসা মহল।
চীনের উহানে প্রথম এই ভাইরাসের দেখা মিলেছে। উহানে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। রোগের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরেও। সেখানেও মারা গিয়েছেন মোট ৫ জন। সংক্রমক এই ভাইরাস সর্ম্পকে বঙ্গবন্ধু শেথ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- রেজিষ্টার্ড ডা. মীর্জা নাহিদা হোসেন বন্যা বলেন, এই ভাইরাস ঠেকাতে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে কড়া নজরদারি শুরুর নির্দেশ দিয়েছে।
বিশেষ করে চীন, থাাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর থেকে ঘুরে আসা বাংলাদেশী কিংবা সে সব দেশ থেকে এ দেশে আসা মানুষজনদের জন্য আরও কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। ওই সব দেশ থাকা আসা কারও সর্দি-কাশির উপসর্গ থাকলে তাঁকে নিজের দেশে ফেরানোর চিন্তাভাবনাও করছে সরকার। আর বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে শুরু হচ্ছে রোগ প্রতিরোধের চিকিৎসা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আয়শা আক্তার জানান হঠাৎ এই ভাইরাস নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় চিকিৎসক মহলও। আসলে একটি ভাইরাস বিভিন্ন সময় তার জিনগত মিউটেশন ঘটিয়ে নানা ধরনের অসুখ তৈরি করতে পারে। তার হাতেগরম উদাহরণ ‘ফ্ল্যাবি ভাইরাস’। ডেঙ্গু ও ইয়েলো ফিভার দুই রোগেরই কারণ এটি। নোভেল কোরোনাভাইরাস নিয়েও একই ভাবে শঙ্কিত চিকিৎসকরা। মূলত তাঁদের উপরই এর হানা মারাত্মক, যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই শিশু ও বয়স্করাই এর ‘সফট টার্গেট’।
ভাইরাসের উৎস. নোভেল কোরোনাভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনও কারণ এখনও গবেষকরা বুঝে উঠতে না পারলেও অনুমান করা হচ্ছে পশু-পাখির সংস্পর্শে থাকা মানুষজনই মূলত এই ভাইরাসের শিকার। তবে এ নিয়ে চুড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে এখনও পৌঁছতে পারেনি গবেষক ও চিকিৎসা মহল। চিনে প্রথম দেখা গেলেও সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ডেও অসুখ ছড়িয়ে পড়েছে।
রোগের উপসর্গ. ঋারতের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, ‘‘এই ভাইরাসের কারণে সর্দি-কাশির উপসর্গ থাকে। সাধারণত অসুখ বেড়ে নিউমোনিয়ায় পরিণত হতে পারে। সঙ্গে প্রবল তাপমাত্রা থাকে শরীরে। কারও ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্টও হয়। সাধারণত সর্দি-কাশির এই ভাইরাস ৬ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত সহজগম্য। তাই এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে এর শিকার হতে পারেন যে কেউ।’
ডা. অরিন্দম বিশ্বাসের মতে, সারা বিশ্ব জুড়েই প্রায়ই অকারণ ও অত্যধিক অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে শরীরে সুপারবাগসের উপস্থিতি সমস্যায় ফেলছে রোগী ও চিকিৎসককে। যখন-তখন ইচ্ছে মতো অ্যান্টিবায়োটিক নিতে নিতে শরীরে তৈরি হচ্ছে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’। এর হাত ধরেই গুঁড়ি মেরে ঢুকে পড়ে ভাইরাসের বিপদ।
ডা. মীর্জা নাহিদা হোসেন বন্যা বলেন, বাংলাদেশে এই ভাইরাসের উৎপত্তি নয়, তাই এর প্রতিরোধ করতে গেলে আপাতত ভাবে বিমানবন্দরে নজরদারি চালানোই একমাত্র উপায়। এ পদ্ধতিতেই কয়েক দশক আগে সার্স ভাইরাসের হানা ঠেকিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ।
সূত্র: রয়টার্স.এদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে চীনের নতুন ‘করোনা ভাইরাস’। বাড়ছে এ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। তারই জের ধরে চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখবে রাশিয়া। আর এ জন্য সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে বলে মঙ্গলবার নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার বিভিন্ন বিমানবন্দরের কর্মকরতারা।
এ ব্যাপারে রয়টার্সেও প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর শেরেমেতইয়েভো ও ভিনুকোভো স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ইয়েকাতেরিনবুর্গ ও ইরকুটস্ক বিমানবন্দরেও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এদিকে করোনা ভাইরাস দেশের জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী সারজেই ক্রাইভোই।