ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্যাতনকারীদের বিচার দাবিতে মুকিমের অবস্থান, নূরের একাত্মতা প্রকাশ


প্রকাশ: ২২ জানুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


নির্যাতনকারীদের বিচার দাবিতে মুকিমের অবস্থান, নূরের একাত্মতা প্রকাশ

   

ঢাবি প্রতিনিধি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ‘শিবির সন্দেহে’ নির্যাতনের শিকার চার শিক্ষার্থীর একজন মুকিম চৌধুরী। নিজের উপর অমানুষিক নির্যাতনকারীদের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসির সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বুধবার সন্ধ্যে থেকে এই অবস্থান নিয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) রাতে তাকেসহ বাকীদেরকে নির্যাতনের পর পুলিশের হাতে তুলে দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। 

আবাসিক হলে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার মুকিম চৌধুরী জানিয়েছেন, তাকে মারধর এবং বিনা কারণে পুলিশে দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করবেন। এজন্য ঢাবির জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগ নেতার ও ডাকসু হল সংসদের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন তিনি।

এদিকে, মুকিমের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন করেছেন। মুকিম এই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অন্যদিকে, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য জহুরুল হক হল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার মুকিম চৌধুরী বলেন, সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে মঙ্গলবার রাতে সরকার-সমর্থক ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা তাকেসহ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের মোট চারজন ছাত্রকে গেস্টরুমে ডেকে নেবার পর তাদের মারধর করা হয়।

মারধরের শিকার শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, তাদেরকে ‘শিবির সন্দেহে’ ডাকা হয়েছিলো, এবং তাদের দফায় দফায় হাতুড়ি, মোটা তার (মোটা এই কোএক্সিয়েল তারগুলো স্যাটেলাইট টিভি সংযোগের জন্য ব্যবহার হয়) এবং ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানো হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের অন্য নেতৃবৃন্দ এবং হলের আবাসিক শিক্ষকেরা এসে পৌঁছালে চার ছাত্রকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।

তবে, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, ওই শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করার ঘটনায় শুধু হল শাখা ছাত্রলীগ নয়, হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ছিলো।

‘মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত ছিলো না, যদি আমরা দেখি কেউ তাতে জড়িত ছিলো, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।’

পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার প্রায় ১২ ঘণ্টা পর বুধবার বিকেল চারটায় শাহবাগ থানা থেকে চার ছাত্রকে ছেড়ে দেয়া হয়। শাহবাগ থানা থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় চার ছাত্রকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়।

থানা থেকে ছাড়া পাবার পর, চারজন ছাত্রের একজন মুকিম চৌধুরী ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবং তাতে জড়িতদের বিচার চেয়ে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন। বৃহস্পতিবার ভোররাত পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করার পর, সকাল সাতটা থেকে আবারো সেখানে অবস্থান নিয়েছেন মুকিম।

তিনি জানিয়েছেন, ‘এ ঘটনায় যতক্ষণ জড়িতদের বিচার না হবে। আমাদের নিরাপত্তা না দেয়া হবে। আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না। আমাকে অন্যায়ভাবে বেদম মারপিট করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

মুকিম অভিযোগ করেছেন, তাকে মারধরের ঘটনায় সরকার-সমর্থক ছাত্রলীগের হল কমিটির কয়েকজন নেতা এবং হল সংসদের কয়েকজন অংশ নিয়েছেন।

মুকিমসহ চারজন ছাত্রকে ছাত্রলীগ কর্তৃক নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকালে রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন করেছেন। মুকিম এই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

এদিকে, নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য দুপুর এক টায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সমাবেশের আগে, মুকিমের সাথে একাত্ত্বতা পোষণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর এবং সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।

ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য জহুরুল হক হল কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। রাতে মুকিমকে দেখতে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে এই তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।

উল্লেখ্য, গত বছর অক্টোবর মাসে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে ‘শিবির সন্দেহে’ টানা নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি মারা যান। নির্যাতনের অভিযোগ ছিলো ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দেশব্যাপী ছাত্রবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।


   আরও সংবাদ