ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় দুটি শিশু


প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


বাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় দুটি শিশু

   

স্টাফ রিপোর্টার : মৌসুমী শীতে,‘ গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১৭১ জন। এবছর ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে আরও ১৮০ জন। নভেম্বর থেকে জানুয়ারির ২৬ পর্যন্ত মোট মারা যাওয়া শিশুর সংখ্যা ৭৫ জন। এছাড়াও ঢাকার বাইরে, ১৪ জানুয়ারি নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ৬ নভেম্বর থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে  সেখানে ভর্তি হয়েছে  মোট ২৮৯ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ নিউমোনিয়া। দশ বছর আগের তুলনায় সম্প্রতি নিউমোনিয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনও  প্রতিঘণ্টায় এই রোগে একজন করে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে, অথচ নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য।

গত ২০ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-১৮’-এর  প্রাথমিক ফল প্রকাশ করে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও  প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট)। এই জরিপকে  দেশের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সবচেয়ে বড় জরিপ বলে বিবেচনা করা হয়। জরিপে নিউমোনিয়া এবং সংক্রমণকে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য মারাত্মক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ’ প্রতিবেদনে বলা হয়- এক মাস থেকে ১১ মাস বয়সী যত শিশু মারা যায়, তার মধ্যে অর্ধেক শিশু মারা যায় শুধু নিউমোনিয়া এবং সিরিয়াস ইনফেকশনে। একইসঙ্গে নবজাতক (শূন্য থেকে ২৮ দিন) মৃত্যুও তিন চতুথাংর্শ ঘটে অ্যাস্ফিক্সিয়া (জন্মকালীন শ্বাসরোধ), নিউমোনিয়া বা বড়  কোনও সংক্রমণ, অপরিণত এবং কম ওজনের জন্য।

নবজাতক মৃত্যুর ঘটনাগুলো  থেকে জানা যায়- অপরিণত এবং কম ওজনের কারণে ১৯ শতাংশ, জন্মকালীন শ্বাসরোধ এবং জন্মকালীন ইনজুরি রয়েছে ২৯ শতাংশ এবং নিউমোনিয়া ও সংক্রমণ রয়েছে ২৫ শতাংশ।

এছাড়াও এক মাস থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয় ৪৮ শতাংশ, ডায়রিয়াতে ১৪ শতাংশ এবং জন্মগত ত্রুটিতে ছয় শতাংশ। একইসঙ্গে ১২ মাস থেকে ৫৯ মাস অর্থ্যাৎ এক বছর থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া এবং অন্যান্য সংক্রমণ ১৩ শতাংশ, ডায়রিয়াতে ছয় শতাংশ এবং পানিতে ডুবে মারা যায় ৫৯ শতাংশ।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, নভেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭২ জন যে শুধুই নিউমোনিয়ার জন্য মারা গেছে বিষয়টি তা নয়। নিউমোনিয়ার সঙ্গে অন্যান্য রোগের উপস্থিতিও ছিল।

শ্যামলী শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ সফি আহমেদ বলেন,‘ যদি কোন শিশু বা ব্যাক্তি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, তারপরও সে শুধু নিউমোনিয়াতে মারা যায় না। এর সঙ্গে অন্যান্য সমস্যাও ছিল, অন্য  রোগ  যোগ হয়েই  সে মারা যায়।’

এদিকে সম্প্রতি সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় দুটি শিশু। প্রতিষ্ঠানটির ন্যাশনাল সিচুয়েশন অ্যানালাইসিস রিপোর্ট অব নিউমোনিয়া শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের এখনও মৃত্যুও প্রধান কারণ নিউমোনিয়া।

প্রতিষ্ঠানটির নিউমোনিয়া স্যানিটারি কমিটমেন্ট অ্যাডভাইজার সাব্বির আহমেদ বলেন,‘পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ নিউমোনিয়া হলেও নবজাতক মৃত্যুও কারণ আবার ভিন্ন। আর বাংলাদেশের ‘আন্ডার ফাইভ ডেথ’ এর ষাট শতাংশই হচ্ছে নবজাতক মৃত্যুু। এজন্য এখন  দেশের প্রধান  ফোকাস হচ্ছে নবজাতক মৃত্যুও দিকে। যার কারণে পাঁচ বছরের কম শিশু মৃত্যুও দিকে ফোকাসটা কম  দেওয়া হচ্ছে- এটিও একটি বড় কারন।’

একারণে জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় অসুস্থ্য শিশুর সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থা (ইনটিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট অফ চাইল্ডহুড ইলনেসেস) শক্তিশালী করা এবং নিউমোনিয়াকে আরেকটু  ফোকাস করা দরকার বলেও জানান সাব্বির আহমেদ।

শিশু মৃত্যুর জন্য এখনও নিউমোনিয়াকে ‘নাম্বার ওয়ান লিডিং কজ’ বলে অভিহিত করেছেন বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা।

তিনি বলেন, ‘আগে শিশু মৃত্যুর  প্রধান তিন কারণ ছিল- নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া এবং অপুষ্টি। কিন্তু এখন ডায়রিয়াতে অসংখ্য শিশু আক্রান্ত হলেও তাতে একেবারেইমৃত্যু নেই, অপুষ্টিজনিত মৃত্যুও কমেছে।’ সেই হিসেবে নিউমোনিয়া কমলেও এটা এখন শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ বলেও জানান তিনি।

নিউমোনিয়ার প্রতিরোধ প্রসঙ্গে ডা.  মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘এর প্রথম প্রতিরোধ হচ্ছে -ভ্যাকসিনের বাইরে যেন কোনও শিশু না থাকে, এটা নিশ্চিত করা। একইসঙ্গে অপুষ্টিজনিত শিশুদের নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, তাই নিউমোনিয়া কিছু কমাতে হলেও অপুষ্টির দিকে নজর দিতে হবে এবং যদি দ্রুত শ্বাস এবং জ্বর হয়, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কারণ নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত শিশুকে যদি প্রথম দুই দিনের মধ্যে চিকিৎসকের কাছে  নেওয়া যায়, তাহলে মৃত্যুও হার কমে যাবে। যদি সাতদিন পরে যাওয়া হয়, তাহলে মৃত্যুও হার বেড়ে যাবে।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যাটারনাল, নিউনেটাল, চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলোসেন্স হেলথ প্রকল্পের লাইন ডিরেক্টর ডা. শামসুল হক বলেন, ‘নিউমোনিয়াতে মৃত্যুর হার আগে যা ছিল, তার চেয়ে অনেক কমেছে এবং একে আরও কমাতে হবে। তবে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের  মৃত্যুর কারণ হিসেবে নিউমোনিয়ার সঙ্গে আরও কারণ রয়েছে।’

তিনি আরও জানান, নিউমোনিয়াতে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে সময়মতো চিকিৎসা শুরু না করা।


   আরও সংবাদ