ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ ভাদ্র ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএনপিকে ভোটে প্রত্যাখ্যান, হরতালে সাড়া না দিয়ে অভিযোগও প্রত্যাখ্যান : তথ্যমন্ত্রী


প্রকাশ: ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


বিএনপিকে ভোটে প্রত্যাখ্যান, হরতালে সাড়া না দিয়ে অভিযোগও প্রত্যাখ্যান : তথ্যমন্ত্রী

   

স্টাফ রিপোর্টার : তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, উৎসবমুখর শান্তিপূর্ণ সিটি নির্বাচনে জনগণ ভোটের মাধ্যমে বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এবং হরতালে সাড়া না দিয়ে জনগণ বিএনপি’র সব অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছে।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে শনিবার অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ নির্বাচনকে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ নগর ২ কোটি মানুষ ও ৫৪ লক্ষ ভোটারের ঢাকা শহরে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর, নির্ঝঞ্ঝাট নির্বাচন হিসেবে বর্ণনা করে তথ্যমন্ত্রী ঢাকার সকল জনগণ, সকল ভোটার, নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান। 

বিএনপি আহুত রোববারের হরতাল বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘প্রথমত: আজকে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে থাকা বই মেলার উদ্বোধন। এদিন তারা হরতাল ডেকেছে। তবে আমি বাসা থেকে সচিবালয়ে আসার পথে কয়েকবার যানজটে পড়েছি, হরতালের কোনো চিহ্ন দেখতে পাইনি। গতকাল জনগণ ভোটের মাধ্যমে বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এবং আজকে তারা যে সকল অভিযোগে হরতাল ডেকেছে, হরতালে সাড়া না দিয়ে জনগণ সে সকল অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছে।’

ভোটার উপস্থিতি কম প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখেছি ৩০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়েছে, যা অনেক বেশি হতো এবং কম হওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই কিছু কারণ যুক্ত। প্রথমত পূজাসহ টানা তিনদিন ছুটি থাকায় অনেকে গ্রামে চলে গেছেন। দ্বিতীয়ত শুরু থেকেই ইভিএম নিয়ে বিএনপি’র নেতিবাচক প্রচারণা মানুষের মধ্যে ইভিএম নিয়ে একটি সংশয় তৈরি করেছে। যেকারণে প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে।’ 

মন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, ‘ভোটের দু’দিন আগে মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন, আমাদের সফলতা হচ্ছে যে, আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। এতে জনগণের মধ্যে ধারণা জন্মেছে, বিএনপি জয়লাভের উদ্দেশ্যে নির্বাচন করছে না, এটি তাদের আন্দোলনের অংশ। অর্থাৎ নির্বাচন যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে না, বিএনপিই সেটি জনগণের কাছে খোলসা করেছে। এ সকল কারণ না থাকলে ভোটার উপস্থিতি আরো বেশি হতো।’ 

ড. হাছান মাহমুদ এসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের দেশে ভোট দেবার যোগ্য লোকসংখ্যার ৯৯.৮ শতাংশ ভোটার হয়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যারা ভোট দেবার যোগ্য, তাদের ৬০ শতাংশ ভোটার হয়। আর সেই ৬০ শতাংশের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে। অর্থাৎ সেখানে মোট যোগ্য ভোটারের ২৪ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়। সেই হিসেবে শনিবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে যে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি ভোটার উপস্থিতি ছিল, তা অনেক ভালো।’ 

দু’একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখেছি কয়েকটি কাগজে লিখেছে যে, যেখানে গোপন কক্ষ সেখানে কোনো কোনো জায়গা উঁকি দেয়া হয়েছে। এত বড় একটি নির্বাচন প্রায় আড়াই হাজার ভোটকেন্দ্র, ১৩ হাজারের বেশি বুথ- এখানে দু’একটি গোপন কক্ষে কেউ উঁকি দিয়েছে, এটি কি বড় বিষয় না কি এত বড় কর্মযজ্ঞ, এত ভোটার, এতগুলো ভোটকেন্দ্র কোনো জায়গায় কোনো গন্ডগোল হয় নি, কোনো মারপিটের ঘটনা ঘটে নি, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে, কোনো কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটেনি, সেটি বড় বিষয়! কিন্তু কেউ কেউ এই দু’একটি উঁকি দেয়াকে বড় বিষয় হিসেবে দেখানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা অনভিপ্রেত, দুঃখজনক।’ 

আমাদের দেশে ভোটের ক্ষেত্রে সবসময় ঐতিহ্য হচ্ছে ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন দল বা দলীয় প্রার্থীর জন্য যেখানে ক্যাম্প খোলা হয় সেখানে সেখানে ভোটাররা গিয়ে সেখানে ভোটার স্লিপ গ্রহণ করে। এখানেও আমাদের দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনীয় ক্যাম্প করা হয়েছিল, আইন মেনে নির্দিষ্ট দূরত্বেই করা হয়েছিল। এবং যান্ত্রিক যান চলাচল বন্ধ থাকে এইজন্য রিক্সা করেও ভোটারদের নিয়ে আসা হয়। এগুলো কোনো নিয়মভঙ্গ না, বরং ঐতিহ্য। এগুলো সব দলই করে থাকে। আওয়ামী লীগ করেছে, এটি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফলতা। বিএনপি কোনো কোনো ক্ষেত্রে করতে পারেনি এটি তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা। 

এসময় নির্বাচন কাভার করতে গিয়ে একজন সাংবাদিকের আহত হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, আমি গতকালও এ বিষয়ে বলেছি, কোনভাবেই কোনো সাংবাদিকের পেশাগত কাজে বাধা দেয়া সমীচীন নয় এবং আমরা এর নিন্দা জানাই। যতদূর জানা গেছে, সেখানকার স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কারণে এটি ঘটেছে, তবে পুলিশের তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

বিএনপির ইভি মেশিন পোড়ানো প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সবসময়ই প্রযুক্তির বিরূদ্ধে। বেগম খালেদা জিয়া দেশের গোপনীয়তা ক্ষুণœ হবার খোঁড়া অজুহাতে সাবমেরিন ক্যাবলে বিনামূল্যে সংযুক্ত হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ইভিএম-এ পুরো ভারতবর্ষে ভোট হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হয়, আর তারা (বিএনপি) ইভিএম’র বিরূদ্ধে। অথচ ইভিএম এর কারণেই ভোটে কোনো গোলযোগ ঘটেনি, কেন্দ্র দখল ঘটেনি। এতে বরং বিএনপি’র খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু তারা যেটা করছে, সেটা হচ্ছে তাদের সবসময়ের প্রযুক্তিবিরোধিতারই ধারাবাহিকতা।


   আরও সংবাদ