ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বস্তিতে খালি ঘরে আগুন!


প্রকাশ: ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


বস্তিতে  খালি ঘরে আগুন!

   


স্টাফ রিপোর্টারঃ চট্টগ্রামে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে তিনটি অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছে ছয়টি বস্তি। এক বছর আগে ভেড়ামারা বস্তিতে এমনই এক অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছিল নয়টি তাজা প্রাণ। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পরই অভিযোগ উঠছে এসব বস্তিতে আগুন দেয়ার নেপথ্য নিয়ে। তবে ফায়ার সার্ভিস কিংবা পুলিশ-কারো কাছেই এর কোনো জবাব নেই। এসব ঘটনা তদন্তে প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিকতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ভোরে চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থানার মাদারবাড়ি এলাকায় আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছে চারটি বস্তি। সেগুলো হলো-কাঁচারি লেইন বস্তি, এসআরবি বড় মাঠ বস্তি, এসআরবি ছোট মাঠ বস্তি ও রেললাইন বস্তি।

গতকাল দুপুরে বস্তিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুড়ে যাওয়া চারটি বস্তি পরস্পর লাগোয়া। বস্তিগুলোর পশ্চিম মাথায় মাঝির ঘাটে যাতায়াতের জন্য একটি সরু রাস্তা আছে। উত্তরে রেললাইন। আগুনের সূত্রপাত হয় পশ্চিম পাশে চলাচলের রাস্তা লাগোয়া একটি খালিঘর থেকে। বস্তির এই অংশে আগুন দিয়ে যে কারোর পক্ষে সরু ওই পথ ধরে পালিয়ে যাওয়া সহজ। এছাড়া আগুন যেভাবে দ্রুতগতিতে ছড়িয়েছে, তাতে বস্তিবাসীর সন্দেহ আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সোমবার ভোরের রহস্যময় আগুনে তাদের বাসাবাড়ির সঙ্গে পুড়ে গেছে নগদ টাকা, গহনা, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই থেকে শুরু করে বিদেশগামীর পাসপোর্ট-ভিসাও। তাদের অভিযোগ, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেউ নাশকতা করে বস্তিতে আগুন দিয়ে তাদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই করে দিয়েছে।

একাধিক ব্যক্তি জানান, সোমবার রাতে বেগম রাইস মিলের মালিক জলিল চৌধুরী মালিকানাধীন এসআরবি বড় মাঠ বস্তি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। যে ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় সেখানে কেউ থাকতেন না। প্রায় ছয়মাস আগে ওই ঘরের বাসিন্দারা অন্যত্র চলে গেছেন।

খালি ঘরের পাশের ঘরটিতে পরিবার নিয়ে থাকতেন নার্গিস আক্তার। তিনি  বলেন, ‘এই ঘরে আমার ভাশুর মোহাম্মদ আলী থাকতেন পরিবার নিয়ে। কিন্তু ঘরটি ভাঙা হওয়ায় প্রায় ছয়মাস আগে পাশের বস্তিতে ঘর নিয়ে থাকছেন। এরপর থেকে এ ঘরটি খালি পড়েছিল। এখান থেকে আগুন লেগেছে, কিন্তু ওই ঘরে কোনো চুলা কিংবা বিদ্যুতের লাইন কিছুই ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘চারটার দিকে হটাৎ দেখতে পাই আমাদের ঘরের চালায় আগুন। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেমেয়ে আর পঙ্গু স্বামীকে নিয়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছি। সংসারের একটা কিছু বের করতে পারি নাই। আমার ধারণা, আগুনটা কেউ ইচ্ছে করেই দিয়েছে। অনেকে বলছে, সাদা এক ধরনের পাউডার ছিটানো হয়েছে তাই আগুন দ্রত ছড়িয়ে পড়েছে।’

মোহাম্মদ আলীর  বলেন, ‘এই ঘরটি ছোট ছিল আর বর্ষায় বৃষ্টি প্রবেশ করত। তাই পাঁচ-ছয়মাস আগে পাশের আরেকটি ঘরে থাকছি। এই ঘরটি খালি ছিল। কেউ আগুন না দিলে এখানে নিজে নিজে আগুন ধরার কোনো কারণ নেই।’

আবু তাহের নামে একজন  বলেন, ‘এখানে পুড়ে যাওয়া চারটি বস্তির তিনটি মূলত জলিল চৌধুরী নামে একজনের মালিকানাধীন, তিনি লিজ নেয়া জমিতে এই বস্তি গড়ে তুলেছেন। এখন শুনছি এই জায়গা এখন আর তার মালিকানায় নেই। এছাড়া পাশের যে বস্তিটি গড়ে উঠেছে সেটি রেলওয়ের জায়গায়। কিছুদিন আগ থেকে আমাদের উচ্ছেদ করা হবে বলে শুনছিলাম, কিন্তু কখনও কোনো নোটিশ আমাদের কাছে আসেনি।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মো. জোবায়ের  বলেন, ‘বস্তিতে প্রায় ৫০০ পরিবারের বাস। এখানের বাসিন্দারা অনেক বছর ধরে বাস করে আসছিলেন। আগুনে তাদের সবকিছু পুড়ে গেছে। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, হঠাৎ করেই আগুনের সূত্রপাত হয়। আমি অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে যথাযথ তদন্তের দাবি করছি।’

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে তদন্তের কথা বলা হলেও এ অগ্নিকাণ্ডে পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে, তা মানতে নারাজ চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আজিজুল ইসলাম।

ঘটনার তদন্তে ফায়ার সার্ভিস কোনো আলামত সংগ্রহ করে কি না জানতে চাইলে জবাবে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আজিজুল ইসলামের কণ্ঠে ছিল প্রচণ্ড অনীহা। তিনি  বলেন, ‘না, আমরা এ ধরনের কোনো আলামত সংগ্রহ করিনি।’

তাহলে এ ঘটনার তদন্তের কী হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বস্তিঘরগুলো ছিল পলিথিন আর টিন দিয়ে গড়া। তাই এখানে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। আপনি না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না মানুষ কীভাবে বসবাস করছে। নানা কারণে এখানে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। বস্তির ঘরগুলোতে বৈদ্যুতিক ওয়ারিংগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।’

বস্তির আগুন নিয়ে পুলিশের অবস্থান জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) পাঁচলাইশের আগুনের ঘটনাতেও এমন সংবাদ প্রকাশ করেছেন। আমরাও বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখছি। তদন্তের আগে এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

 খালি ঘরে আগুন! 


স্টাফ রিপোর্টারঃ চট্টগ্রামে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে তিনটি অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছে ছয়টি বস্তি। এক বছর আগে ভেড়ামারা বস্তিতে এমনই এক অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছিল নয়টি তাজা প্রাণ। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পরই অভিযোগ উঠছে এসব বস্তিতে আগুন দেয়ার নেপথ্য নিয়ে। তবে ফায়ার সার্ভিস কিংবা পুলিশ-কারো কাছেই এর কোনো জবাব নেই। এসব ঘটনা তদন্তে প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিকতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ভোরে চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থানার মাদারবাড়ি এলাকায় আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছে চারটি বস্তি। সেগুলো হলো-কাঁচারি লেইন বস্তি, এসআরবি বড় মাঠ বস্তি, এসআরবি ছোট মাঠ বস্তি ও রেললাইন বস্তি।

গতকাল দুপুরে বস্তিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুড়ে যাওয়া চারটি বস্তি পরস্পর লাগোয়া। বস্তিগুলোর পশ্চিম মাথায় মাঝির ঘাটে যাতায়াতের জন্য একটি সরু রাস্তা আছে। উত্তরে রেললাইন। আগুনের সূত্রপাত হয় পশ্চিম পাশে চলাচলের রাস্তা লাগোয়া একটি খালিঘর থেকে। বস্তির এই অংশে আগুন দিয়ে যে কারোর পক্ষে সরু ওই পথ ধরে পালিয়ে যাওয়া সহজ। এছাড়া আগুন যেভাবে দ্রুতগতিতে ছড়িয়েছে, তাতে বস্তিবাসীর সন্দেহ আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সোমবার ভোরের রহস্যময় আগুনে তাদের বাসাবাড়ির সঙ্গে পুড়ে গেছে নগদ টাকা, গহনা, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই থেকে শুরু করে বিদেশগামীর পাসপোর্ট-ভিসাও। তাদের অভিযোগ, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেউ নাশকতা করে বস্তিতে আগুন দিয়ে তাদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই করে দিয়েছে।

একাধিক ব্যক্তি জানান, সোমবার রাতে বেগম রাইস মিলের মালিক জলিল চৌধুরী মালিকানাধীন এসআরবি বড় মাঠ বস্তি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। যে ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় সেখানে কেউ থাকতেন না। প্রায় ছয়মাস আগে ওই ঘরের বাসিন্দারা অন্যত্র চলে গেছেন।

খালি ঘরের পাশের ঘরটিতে পরিবার নিয়ে থাকতেন নার্গিস আক্তার। তিনি  বলেন, ‘এই ঘরে আমার ভাশুর মোহাম্মদ আলী থাকতেন পরিবার নিয়ে। কিন্তু ঘরটি ভাঙা হওয়ায় প্রায় ছয়মাস আগে পাশের বস্তিতে ঘর নিয়ে থাকছেন। এরপর থেকে এ ঘরটি খালি পড়েছিল। এখান থেকে আগুন লেগেছে, কিন্তু ওই ঘরে কোনো চুলা কিংবা বিদ্যুতের লাইন কিছুই ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘চারটার দিকে হটাৎ দেখতে পাই আমাদের ঘরের চালায় আগুন। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেমেয়ে আর পঙ্গু স্বামীকে নিয়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছি। সংসারের একটা কিছু বের করতে পারি নাই। আমার ধারণা, আগুনটা কেউ ইচ্ছে করেই দিয়েছে। অনেকে বলছে, সাদা এক ধরনের পাউডার ছিটানো হয়েছে তাই আগুন দ্রত ছড়িয়ে পড়েছে।’

মোহাম্মদ আলীর  বলেন, ‘এই ঘরটি ছোট ছিল আর বর্ষায় বৃষ্টি প্রবেশ করত। তাই পাঁচ-ছয়মাস আগে পাশের আরেকটি ঘরে থাকছি। এই ঘরটি খালি ছিল। কেউ আগুন না দিলে এখানে নিজে নিজে আগুন ধরার কোনো কারণ নেই।’

আবু তাহের নামে একজন  বলেন, ‘এখানে পুড়ে যাওয়া চারটি বস্তির তিনটি মূলত জলিল চৌধুরী নামে একজনের মালিকানাধীন, তিনি লিজ নেয়া জমিতে এই বস্তি গড়ে তুলেছেন। এখন শুনছি এই জায়গা এখন আর তার মালিকানায় নেই। এছাড়া পাশের যে বস্তিটি গড়ে উঠেছে সেটি রেলওয়ের জায়গায়। কিছুদিন আগ থেকে আমাদের উচ্ছেদ করা হবে বলে শুনছিলাম, কিন্তু কখনও কোনো নোটিশ আমাদের কাছে আসেনি।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মো. জোবায়ের  বলেন, ‘বস্তিতে প্রায় ৫০০ পরিবারের বাস। এখানের বাসিন্দারা অনেক বছর ধরে বাস করে আসছিলেন। আগুনে তাদের সবকিছু পুড়ে গেছে। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, হঠাৎ করেই আগুনের সূত্রপাত হয়। আমি অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে যথাযথ তদন্তের দাবি করছি।’

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে তদন্তের কথা বলা হলেও এ অগ্নিকাণ্ডে পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে, তা মানতে নারাজ চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আজিজুল ইসলাম।

ঘটনার তদন্তে ফায়ার সার্ভিস কোনো আলামত সংগ্রহ করে কি না জানতে চাইলে জবাবে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আজিজুল ইসলামের কণ্ঠে ছিল প্রচণ্ড অনীহা। তিনি  বলেন, ‘না, আমরা এ ধরনের কোনো আলামত সংগ্রহ করিনি।’

তাহলে এ ঘটনার তদন্তের কী হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বস্তিঘরগুলো ছিল পলিথিন আর টিন দিয়ে গড়া। তাই এখানে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। আপনি না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না মানুষ কীভাবে বসবাস করছে। নানা কারণে এখানে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। বস্তির ঘরগুলোতে বৈদ্যুতিক ওয়ারিংগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।’

বস্তির আগুন নিয়ে পুলিশের অবস্থান জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) পাঁচলাইশের আগুনের ঘটনাতেও এমন সংবাদ প্রকাশ করেছেন। আমরাও বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখছি। তদন্তের আগে এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’


   আরও সংবাদ