ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ ভাদ্র ১৪৩১, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জনগণ যদি আমাদের না চায়, চলে যাব : কৃষিমন্ত্রী


প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


জনগণ যদি আমাদের না চায়, চলে যাব : কৃষিমন্ত্রী

   

নিউজ ডেস্কঃ কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘জনগণ যদি আমাদের না চায়, তাহলে আমরা চলে যাব। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খলদের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না। দেশের শৃঙ্খলার খাতিরে আমরা জাতিকে নেতৃত্ব দিচ্ছি।’

রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বাবা ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুচ্ছফা তালুকদারের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বাংলাদেশে বারবার অসাংবিধানিক ও স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ২০০৬ সালে তেমনি এক অসাংবিধানিক সরকার দেশকে অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। বিদেশি রাষ্ট্রগুলো মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের পথ বেছে নিয়েছিল। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে কারাগারে আবদ্ধ করেছিল। সেই সময় আন্দোলন-সংগ্রামে আপনাদের সন্তান হাছান মাহমুদের সঙ্গে আমার পরিচয়। আমরা তখন বিভিন্ন অ্যাম্বাসেডর আর বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে মিটিং করে তাদের বোঝাতে চেষ্টা করছিলাম, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া একটি রাষ্ট্র সামনে এগোতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০০৮ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সেদিন আমরা রূপকল্প ২০২১ জনগণের সামনে নিয়ে এসেছিলাম। জনগণ আমাদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। এর ধারাবাহিকতায় পরপর দুই মেয়াদ আর এবারের দুই বছরে দেশ ভালো আছে কি না? এগিয়ে যাচ্ছে কি না? সে কথা আপনারা বলবেন।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বিশ্বব্যাংক প্রধান বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে দুর্নীতি আর দারিদ্র্যের মডেল রাষ্ট্র। এটি স্বাধীনভাবে টিকে থাকতে পারবে না। অথচ আজ সেই বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশগুলোর একটি। স্টার্ন নিকোলাস বলেছেন, আমি বাংলাদেশে এসেছি উন্নয়ন দেখতে। যে দি ইকোনমিস্ট সবসময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে, তারাই বাংলাদেশের বন্দনা করে আর্টিকেল প্রকাশ করছে।’

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রসঙ্গে পুরো জাতিকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের ঐকমত্যে পৌঁছানো প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়লে একজন জামায়াত নেতাও এটা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান এ জাতির পিতা।’

আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আইন সম্মানজনক পেশা। প্রতিথযশা আইনজীবীদের অনেকেই রাজনীতিকে ভালো করেছেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথমে ইনকামট্যাক্সে চাকরি পেয়েও তা ছেড়ে দেন। তথ্যমন্ত্রীর বাবার মতোই কলেজে মাস্টারি শুরু করেন। পরে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন। মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আজম, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ- তারা সবাই আইনজীবী ছিলেন। একসময় আইন পেশা থেকেই রাজনীবিদ বেশি বেরিয়ে আসতো।’

তিনি বলেন, সমাজের প্রতি আইনজীবীদের একটি প্রতিশ্রুতি আছে। অনেক নির্দোষ মানুষ ষড়যন্ত্রের শিকার হন। আইনজীবীদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। এ পেশায় থেকে শুধু টাকা উপার্জনের চিন্তা করা যাবে না। জর্জ বার্নাড শ বলেছেন, ‘লোভ ও অর্থ কতটুকু থাকা দরকার তার একটা লিমিট আছে। এর বাইরে গেলে তা ধ্বংস ডেকে আনে।’ আমরা আদের সন্তানদের জন্য সম্পদ আয় করতে চাই, কিন্তু অতিরিক্ত সম্পদ সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ তার বাবার স্মৃতিস্মরণ করেন বলেন, ‘আমার বাবা এ আদালতের একজন আইনজীবী ছিলেন। সারাজীবন আমি তাকে আমার আদর্শ হিসেবে দেখে এসেছি। ১৯৮৩ সালে তিনি প্রথমবারের মতো পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান। কিন্তু তিনি এজন্য কারও কাছে যাননি। ২৩ মাস দায়িত্ব পালনের পর যখন এরশাদ সরকার তাকে দলে যোগ দিতে বললেন তখন তিনি এ পদ থেকে পদত্যাগ করেন। অথচ এখন অনেককেই এ পদ পাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাবা পিপি হওয়ার পর তার আয় কমে গেল। আমি বাবাকে বললাম বাবা এখনতো তোমার আয় কমে গেছে। তখন তিনি আমাকে বললেন, এটা একটি সম্মানের স্থান।’

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন বাবুলের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার সাইমুল, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মোক্তার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন মো. জিয়াউদ্দিন প্রমুখ।


   আরও সংবাদ