ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

গণিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো ফলাফল তাছলিমার!


প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


গণিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো ফলাফল তাছলিমার!

   

 

স্টাফ রিপোর্টার: তাছলিমা সিরাজের জন্ম মক্কায়। শৈশব আর কৈশোরের একটি অংশ কেটেছে এখানেই। ছয় বছর বয়সে ভর্তি হয় আল-ইমান বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই স্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন তাছলিমা। জেদ্দায় বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০০৮ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করেন। এসএসসির আগে অন্যান্য শ্রেণিতে তার রোল ঘুরেফিরে এক আর দুই ই ছিলো। এটা স্পষ্ট যে ছোটোবেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন।

তাছলিমা মরুর দেশে থাকতে বাবার দেশের প্রতি গভীর টান অনুভব করতেন। বাবার বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়ায়। বাবা-মাও বলতেন বাংলাদেশে পড়ে থাকা শেকড়ের কথা। আর এতেই বাংলাদেশকে ভালোবেসে ফেলেন। প্রথমবার বাংলাদেশে আসেন ২০০৯ সালের অক্টোবরে। 

বাবা-মা তখনও মক্কাতেই। দেশে আসার পর তিনি বুঝতে পারেন বাস্তবতা আর কল্পনার ফারাক। শুরুতে মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হয়। ভালো কিছুর লক্ষ্যেই বাংলাদেশে তিতো হওয়ার সিন্ধান্ত নেন। ভর্তি হন কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজে। ২০১১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পায় মাত্র একজন। আর তিনি হলেন তাছলিমা।

বাবা-মা দেশের বাইরে। তাই এইচএসসির পর কক্সবাজারের বাইরে পড়ার সুযোগ ছিলো না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানীয় কোনো কলেজে ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। 

ওদিকে নবম-দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান গ্রুপ নিয়ে পড়ায় বিজ্ঞানের বিষয়গুলো ভালো লেগে যায়। গণিতের বিষয়গুলো একটু বেশিই ভালো লাগতো। সিদ্ধান্ত নেন কক্সবাজার সরকারি কলেজে বিজ্ঞানের কোনো একটা বিষয় নিয়ে ভর্তি হবেন। কিন্তু সেখানে গণিত আর উদ্ভিদ বিজ্ঞান ছাড়া আর কোনো বিজ্ঞানের বিষয় না থাকায় গণিতকেই বেছে নেন। এরপর বাবা মায়ের অনুপ্রেরণায় পড়াশোনায় গভীরভাবে মনযোগ দেয়ার চেষ্টা করেন। 

অনার্সের প্রথম পরীক্ষাতেই বাজিমাত। প্রথমবর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার পর দেখা যায় ফলাফল ৩.৯৩। যা গণিতে পুরো বাংলাদেশে সর্বোচ্চ হয়। দ্বিতীয় বর্ষেও এই ধারা অব্যাহত থাকে। সেবার সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্য ৪.০০ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এর পরের বছর অর্থাৎ তৃতীয় বর্ষেও সারা বাংলাদেশে গণিতে সর্বোচ্চ সিজিপিএধারী হন তিনি। 

সেবার তার সিজিপিএ ছিলো ৩.৯৪। সর্বশেষ শেষবর্ষে ৩.৯৩ সিজিপিএ নিয়ে আবারো দেশসেরা হন। সব মিলিয়ে তার মোট সিজিপিএ দাঁড়ায় ৩.৯৫। যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত গণিতে সর্বোচ্চ সিজিপিএ। এইজন্য ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক- ২০১৭ অর্জন করেন। পরে মাস্টার্সেও ভালো রেজাল্ট করেন। ৩.৯২ সিজিপিএ নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগে শ্রেষ্ঠ হন তাছলিমা। 

প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণের সময়কার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি জানান, ঐ মুহূর্তে মনে হলো আমার চার বছরের শ্রমের চেয়েও এই প্রাপ্তিটা অনেক বড়, তাছাড়া আদৌ এই সম্মানের যোগ্য কিনা সেটাও ভেবেছিলাম।

বর্তমানে বাবা সিরাজুল হক সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং মা শামসুন নাহার একজন গৃহিণী। সর্বশেষ ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন তাছলিমা। অনার্সের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জামাল নজরুল ইসলাম গবেষণাকেন্দ্রের একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সেখানে গবেষণার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

বিসিএস-এর জন্য পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে গিয়ে সেখানে যোগ দিতে পারেননি। তবে বিসিএসটা হয়ে গেলে গণিত নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের গবেষণা করে পিএইচডি সম্পন্ন করতে চান তিনি। অবসরে নিজে পড়া এবং অন্যকে পড়ানো দুটোই তার পছন্দের কাজ।


   আরও সংবাদ