ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

খাগড়াছড়িতে বিজিবি-গ্রামবাসী সংঘর্ষে একই পরিবারের ৪ জনসহ নিহত ৬


প্রকাশ: ২ মার্চ, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


খাগড়াছড়িতে বিজিবি-গ্রামবাসী সংঘর্ষে একই পরিবারের ৪ জনসহ নিহত ৬

   

জেলা প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গাজিনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে একই পরিবারের চারজন, এক বিজিবি সদস্য ও এক গ্রামবাসী রয়েছেন।

নিহতরা হলেন- মাটিরাঙ্গা উপজেলার গাজীনগর এলাকার সাহাব মিয়া (৬৫), তার বড় ছেলে আকবর আলী (২৭), ছোট ছেলে আহমদ আলী (২৪), একই এলাকার সিরাজ মিস্ত্রির ছেলে মফিজ মিয়া (৫০) এবং বিজিবি সদস্য শাওন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বৈদ্যুতিক তার টানার জন্য কয়েকটি গাছ কাটা হয়। এ সময় ট্রাক্টরে সাহাব মিয়া ও তার ছেলে আহামদ আলী কয়েক টুকরা গাছ গাজিনগর বাজারের একটি কাঠের মিলে নিয়ে যাওয়ার পথে বাধা দেয় বিজিবি।

একপর্যায়ে বিজিবির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে সাহাব মিয়া ও তার ছেলে। বিষয়টি দেখে এগিয়ে আসে গ্রামবাসী। এরপরই বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে গ্রামবাসী।

সংঘর্ষের সময় বিজিবি সদস্যরা গুলি করলে ঘটনাস্থলেই সাহাব মিয়া ও তার ছেলে আকবর আলী নিহত হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন, আহমদ আলী, মফিজ মিয়া এবং হানিফ মিয়াকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে বিজিবি সদস্য শাওন ও আহাম্মদ আলীর মৃত্যু হয়।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান মো. মফিজ মিয়া। স্বামী ও দুই ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে রঞ্জু বেগমের মৃত্যু খবর ছড়িয়ে পড়লেও তিনি সুস্থ আছেন।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম বাবু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিজিবি সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করছে। সাধারণ মানুষ নিজেদের বাড়ির গাছ কাটতে গেলেও বাধা দেয় বিজিবি। মূলত এ নিয়েই আজকের সংঘর্ষ।


মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামছুদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, বিজিবি-গ্রামবাসী সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছে। নিহত বিজিবি সদস্যসহ তিনজনের মরদেহ হাসপাতালে রয়েছে। অন্য দুজনের মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। স্বামী ও দুই সন্তানের মৃত্যুর খবরে মারা গেছেন সাহাব মিয়ার স্ত্রী রঞ্জু বেগম। তার মরদেহ বাড়িতে রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ ঘটনার পর বিকেল ৩টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম সারাহ উদ্দিন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান

রফিকুল ইসলাম, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভীষণ কান্তি দাশ, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম হুমায়ুন মোরশেদ খান।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান ও খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ঘটনায় দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে জানিয়ে সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বিষয়টি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

এ সময় স্থানীয়রা বিজিবি ক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবি জানালে তিনি বলেন, গুটি কয়েক খারাপ লোকের জন্য একটি বাহিনীকে দোষারোপ করা যাবে না।


   আরও সংবাদ