ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ভালুকার গ্রামে রয়েছে হাজারো ‘খুদে বঙ্গবন্ধু’


প্রকাশ: ৬ মার্চ, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


ভালুকার গ্রামে রয়েছে হাজারো ‘খুদে বঙ্গবন্ধু’

   

 

স্টাফ রিপোর্টার : ভালুকা উপজেলার সর্বত্র বসবাস হাজারো খুদে বঙ্গবন্ধুর। এদের বয়স ৫ থেকে ১৬ বছর। এরা সবাই কোনো না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এরা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ অনর্গল বলতে পারে। বলার ভঙ্গিটাও অনেকটা বঙ্গবন্ধুর মতো। তাই এদের ডাকা হয় খুদে বঙ্গবন্ধু। এই খুদে বঙ্গবন্ধুর সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। বিরাটসংখ্যক এই খুদে বঙ্গবন্ধুর আত্মপ্রকাশ ২০১৭ সালে ভালুকা উপজেলায়। ভালুকা উপজেলার প্রতিটি গ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে কাজটির নেপথ্যের মানুষটি হলেন এই উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল।

আহসান তালুকদার। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি শিশু শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শেখানোর উদ্যোগ নেন। এর জন্য উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য ভাষণের সিডি এবং প্রিন্ট কপি সরবরাহ করা হয়। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হয় মাসব্যাপী ভাষণ প্রতিযোগিতা।

এরপর পার হয়েছে তিন বছর। কিন্তু এই খুদে বঙ্গবন্ধুদের অনেকে এখনো তাদের ভাষণ নিয়ে তৎপর। নিজেরাই এখন অন্য শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। পাড়া-মহল্লায়, নিজ নিজ গ্রামে অন্য শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শেখাতে তৎপর তারা। কোনো অনুষ্ঠান কিংবা প্রতিযোগিতায় এরা উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মুখস্থ শোনায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। কখনো কখনো বন্ধুদের মাঝে, ক্লাসের ফাঁকে আর বাড়িতেও চলে এই ভাষণচর্চা।

ভালুকা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল আহসান তালুকদার (বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব) ভালুকায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ উৎসব করতে ২০১৭ সালে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন। পরে ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত ভালুকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা পর্যায়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের চারটি ভাগে ভাগ করে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রতিযোগিতায় প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ মুখস্তের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতায় উদ্বুদ্ধ করতে ৭ই মার্চকে ‘জাতীয় ভাষণ দিবস’, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে ‘জাতীয় ভাষণ’ হিসেবে ঘোষণা করার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠিও পাঠিয়েছিলেন কামরুল আহসান তালুকদার।

কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, “ভালুকা উপজেলার শিক্ষার্থীদের মতো অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করবে, তারা খারাপ পথে পা দিবে না। দেশাত্মবোধ থাকবে তাদের মধ্যে। ৭ই মার্চের ভাষণ এখন উৎসবের মতো শিখছে শিশু শিক্ষার্থীরা। শিশু একাডেমির মাধ্যমে বর্তমানে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রতিযোগিতা। আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ দিনটি ‘জাতীয় ভাষণ দিবস’ ও ভাষণটি ‘জাতীয় ভাষণ’ হিসেবে একদিন স্বীকৃতি পাবে।”

২০১৭ সালে ভালুকায় অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে রানার আপ হয় মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী এইচ এম তাসমি আহমদ। বর্তমানে সে ভালুকা উপজেলার গোয়ারী ভাওয়ালীয়া বাজু বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাসমি বলে, ‘২০১৭ সালে ভালুকায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হলে আমি ভাষণটি সাত দিনের মধ্যে মুখস্থ করি। পরে স্কুল, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেই। ওই ভাষণচর্চা আমি এখনো ধরে রেখেছি। এ পর্যন্ত ১০ জনকে ভাষণটি শিখিয়েছি।’

ভালুকা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আলী জানান, ভালুকায় প্রায় আড়াই শ কেজি স্কুল আছে। এসব স্কুলের মধ্যে অন্তত দুই শ স্কুলে গড়ে তিনজন করে শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ মুখস্থ করেছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ভালুকা শাখার সভাপতি কে এম ঈদ্রিস আলী বলেন, ‘ভালুকা উপজেলায় ১৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। গড়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে তিন থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থী নতুন করে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ মুখস্থ করে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে, অন্য শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছে।’

হালিমুন্নেছা চৌধুরানী মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা নীনা বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের অন্তত ৪৬ জন শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ মুখস্থ বলতে পারে। উপজেলার মাধ্যমিক স্তরের বহু শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অনুশীলন করছে।’


   আরও সংবাদ