ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

“আগে টাকা দাও, পরে কাম সারো” হত্যা মেয়ে, টাকা পাই নি বাবা


প্রকাশ: ৮ মার্চ, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


“আগে টাকা দাও, পরে কাম সারো” হত্যা মেয়ে, টাকা পাই নি বাবা

   

সিনিয়র প্রতিবেদক : দীর্ঘ ৫ বছর পর নরসিংদীর চাঞ্চল্যকর ইলমা বেগম (১১) হত্যাকান্ডের রহস্য উৎঘাটন করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিট।

ভিকটিমের ফুফাত ভাই মাসুম কে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের রহস্য উম্মোচিত হয়। উক্ত হত্যাকান্ডের জড়িত প্রকৃত আসামীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে থানা পুলিশ ব্যর্থ হয়।

গত ২০১৫ সালের ২৮ মার্চ ১১ বৎসর বয়সী ইলমার মৃতদেহ নরসিংদী থানাধীন বাহেরচর গ্রামের একটি ধানক্ষেতে পাওয়া যায়। ইলমা বাহেরচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্রী। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই হত্যাকান্ড ঘটাতে সম্মত ও সহায়তা করে তার পিতা আব্দুল মোতালেব।

সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরার তত্বাবধানে একটি টিম নরসিংদী সদর এলাকা থেকে আসামীদের গ্রেফতার করে। 

গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন- আব্দুল মোতালেব, মঙ্গলী বেগম, মাসুম মিয়া, বাতেন, শাহজাহান ভূঁইয়া। গ্রেফতারকৃত আসামী মাসুম মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

তদন্তে জানা যায়, নরসিংদী থানাধীন বাহের চর নামক একটি দূর্গম এলাকায় শাহজাহান ভূঁইয়া ও সাবেক মেম্বার বাচ্চুর নেতৃত্বে দুইটি দলের মধ্যে এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে কোন্দল ছিল।

শাহজাহান গ্রুপের সদস্য ভিকটিমের ফুফাত ভাই মাসুম এর সাথে বাচ্চু পক্ষের সদস্য তোফাজ্জলের মেয়ে তানিয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে করার উদ্দেশ্যে মাসুম তানিয়াকে তার ভাইয়ের শ্বশুরবড়িতে নিয়ে আসে। পরবর্র্তীতে তানিয়ার বাবা দলবল সহকারে  দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা করে তানিয়াকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। উক্ত ঘটনায় তানিয়ার বাবা বাদী হয়ে মাসুম, মাসুমের ভাই খসরু ও ভাইয়ের শুশ্বর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ  মামলা দায়ের করে।

বাচ্চু গ্রপের সদস্যদের ক্ষতি করার লক্ষ্যে শাহজাহানের বাড়িতে গত ২০১৫ সালের ১ মার্চের রাতে মাসুমসহ ১৩ জন বৈঠক করে। প্রতিশোধ নিতে একটি হত্যাকান্ড ঘটিয়ে বাচ্চু গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার বিষয়ে বৈঠকে সিন্ধান্ত হয়। 

সিন্ধান্ত অনুযায়ী শাহজাহান মোতালিবকে তার মেয়ে ইলমাকে টাকার বিনিময়ে হত্যা করার প্রস্তাব করে। মোতালেব মাত্র ত্রিশ লাখ টাকার বিনিময়ে মেয়েকে হত্যা করতে রাজি হয়।

গত ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় ইলমার দুলাভাই ও অন্যরা মিলে তাকে টাকা দেয় বাজার-সদাই করার জন্য। টাকা পেয়ে ইলমা বাড়ির পাশে নুরার দোকান হতে জিনিস পত্র কিনে বাড়ি ফেরার পথে ইলমার দুলাভাই বাবুল ও ফুফাত ভাই মাসুমের নেতৃত্বে সাত আটজন মিলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পার্শবর্তী একটি ধান ক্ষেতে ইট দিয়ে মাথা থেতলে ইলমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এই সময় ইলমার বাবা পাশে অবস্থান করছিল। 

জিজ্ঞাসাবাদে মাসুম সিআইডিকে জানায়,  এলমার বাবা এ সময় “আগে টাকা দাও পরে কাম সারো” বলে টাকা দাবি করেছিল। প্রকৃতপক্ষে হত্যাকান্ডের জন্য চুক্তিকৃত ৩০ লক্ষ টাকা ভিকটিমের বাবা পাইনি বলে জানা যায়।

উক্ত ঘটনায় প্রকৃত আসামীদের বাদ দিয়ে ইলমার বাবা মোতালিব বাদি হয়ে বাচ্চু গ্রুপের বিলকিস, খোরশেদ, নাসুসহ অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় সেই বছর ৩১ মার্চ একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। উক্ত হত্যাকান্ডের জড়িত প্রকৃত আসামীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ ব্যর্থ হয়।

পরে সিআইডি উক্ত হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব গ্রহনের পর পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণকারী ৫ আসামীকে গ্রেফতার করেছে। মামলাটির তদন্ত সিআইডির নিকট অব্যাহত আছে।


   আরও সংবাদ