ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটের কী দরকার?


প্রকাশ: ২৬ মার্চ, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


তবে ঘরোয়া ক্রিকেটের কী দরকার?

   

ক্রিকেট বিশ্বকাপের দল ঘোষণার সময় এখনো আসেনি। তবে গতকাল বিশ্বকাপ স্কোয়াড একপ্রকার বলেই দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। কোনো চমক নেই, গত এক বছরে জাতীয় দলের আশপাশে থাকা নামগুলোই শোনা গেছে সভাপতির মুখে। দলে কে থাকবেন এ নিয়ে কোনো কথা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও শোনাননি। কিন্তু ভিন্ন এক ঘটনায় ভিন্ন স্থানে বিশ্বকাপ নিয়ে চিন্তার কথা জানিয়েছেন। ভিন্ন দুই স্থান থেকে কথা বললেও দুজনের কথাতেই একটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্স দিয়ে বিশ্বকাপ দলে ঢোকার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে এটিই বাস্তবতা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক উন্নতি হচ্ছে বলে যে বেলুন ওড়ানো হয়, সেটা যে আসলে বুদ্‌বুদ তা বোঝা যায় দল থেকে পাঁচটি নাম সরিয়ে নিলেই। নিজেদের ক্রিকেটের সেরা মুহূর্ত আর এই পাঁচজনের উপস্থিতি কাকতাল নয়। এদের ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে ক্রিকেট। স্থানীয় লিগে দুর্দান্ত খেলে অনেক ক্রিকেটারই জাতীয় দলে আসেন। কিন্তু পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপে ভেঙে পড়েন সবাই। এ নির্মম বাস্তবতার কথা মাশরাফি গতকাল আবার শুনিয়েছেন, ‘আসলে আমি ঢাকা লিগ নিয়ে তেমন একটা চিন্তিত না। কারণ এখানে অনেকবার আমি দেখেছি যে মানুষ দিনের পর দিন ১০০ হাঁকিয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে। কারণ উইকেট বলেন, তীব্রতা বলেন, ঘরোয়া ক্রিকেট তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কাছাকাছি না।’

মাশরাফি বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চাপ নিয়ে খেলতে পারা ক্রিকেটারের গুরুত্ব বেশি দিচ্ছেন। নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ওয়ানডেতেই ১ রান করা লিটন দাস ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও শুরুটা ভালো করেননি। তবু বিশ্বকাপে লিটনকে কেন নেওয়া দরকার সেটা ব্যাখ্যা করেছেন মাশরাফি, ‘ঢাকা লিগ নিয়ে আমি এতটা চিন্তিত না। এখান থেকে রান করে গেলে ওখানে সে ওই ফর্মটাই ধরে রাখবে এটার সঙ্গে আমি একমত না। লিটন কী মানের খেলোয়াড় সেটি হয়তো এক দুটি ম্যাচে আমরা সম্প্রতি দেখতে পেরেছি। এশিয়া কাপ ফাইনালের কথা আমি বলছি। আমার কাছে মনে হয় সে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। এই সম্ভাবনা তাঁর মধ্যে আছে। ব্যাটিং কোচও ওকে নিয়ে কাজ করছে। আসলে ধারাবাহিকতাটা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি যে ও যদি স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলে তাহলে সেটি আমাদের দলের জন্য অনেক বড় অ্যাডভান্টেজ হবে।’

ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়া যে প্রায় অসম্ভব সেটাও বলেছেন মাশরাফি, ‘আকাশ আর পাতাল ব্যবধান দুটি জায়গার মধ্যে। মানসিক দিক থেকে কে তৈরি থাকবে তার ওপরে অনেক কিছু নির্ভর করবে। হয়তো দেখা গেল যে এখানে কেউ লীগ খেলছে ঠিকই, তবে সে কিছু নির্দিষ্ট কিছু নিয়ে কাজ করছে যেটি বিশ্বকাপে তার প্রয়োজন হতে পারে। আমি মনে করি তার ওইদিকেই নজর থাকা উচিত যে যেটি সে চিন্তা করছে। সুতরাং মানসিকভাবে প্রস্তুত মানে আপনিও প্রস্তুত। তবে যারা রান করছে বা ভালো করছে সেটি নির্বাচক প্যানেল ঠিক করবে যে কারা যাবে আর কারা যাবে না।’

এদিকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন জাতীয় দলে খেলা ওপেনার এনামুল হক। ৬ ম্যাচেই ৪০৪ রান তাঁর। আরেক ওপেনার সাইফ হাসান করেছেন ৪১১ রান। ফরহাদ রেজা গতকাল পর্যন্ত ১৭ উইকেট পেয়েছেন ৫ ম্যাচে। কামরুল ইসলাম রাব্বি ও শফিউল ইসলামও ১২ উইকেট করে নিয়েছেন। জাতীয় দলের অধিকাংশই নেই লিগে। তবে কাল বিশ্বকাপ দলে যার অন্তর্ভুক্তি প্রায় করে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি সেই রুবেল হোসেন আছেন লিগে। নিউজিল্যান্ডে রুবেলকে এক ম্যাচের বেশি খেলানোর সাহস পাননি টিম ম্যানেজমেন্ট। সে ম্যাচে ওভারপ্রতি ৭-এর বেশি রান দেওয়া রুবেল কোটাও পূরণ করতে পারেননি সেদিন।

সেই রুবেল ৬ ম্যাচে ৭ উইকেট পেয়েছেন লিগে। বিশ্বকাপের টিকিট প্রায় পেয়ে যাওয়া আরেকজন সাইফউদ্দিনের সংগ্রহ ৪ ম্যাচে ৬ উইকেট। ৩ ইনিংসে ব্যাট করে অবশ্য ভালোই রান করেছেন সাইফউদ্দিন, ১১৮। কিন্তু আবাহনীতেই খেলা সাব্বির রহমান ৬ ইনিংস খেলেও রানটা ১২০ পার করতে পারেননি। ৬ ম্যাচে ২০৩ রান করেছেন সুযোগ বেঁচে থাকা মোসাদ্দেক। বিসিবি সভাপতি লিগে যারা ভালো করেছেন তাদের নাম আলাদা করে বলেছেন কাল, ‘বিজয় (এনামুল) পরপর তিন সেঞ্চুরি করেছে, অসাধারণ। ফরহাদ টি-টোয়েন্টিতে দারুণ খেলেছে। জহুরুল ভালো করছে, মোসাদ্দেক ভালো করছে। ইয়াসির রাব্বি ভালো করছে। নাজমুল হোসেন (শান্ত) ভালো করছে।’

বিসিবি সভাপতি এটাও বলে দিয়েছেন বিশ্বকাপ এসব পারফরম্যান্স গোনায় ধরার সম্ভাবনা নেই, ‘নতুন কারও সম্ভাবনা খুবই কম। আমি বলছি না যে হবে না। কারণ আজকেও আমরা কথা বলছিলাম যে কিছু করা যায় কি না। ঘরোয়া ক্রিকেটে যতই ভালো করুক না কেন, একটা নতুন ছেলের আন্তর্জাতিকে খেলার মধ্যে বিরাট পার্থক্য। উপমহাদেশে যদি হতো, তাও এক কথা। কাজেই যে যতই ভালো করুক হুট করে এসে একদম বিশ্বকাপ খেলে ফেলবে, এই সম্ভাবনা খুবই কম।’

বাংলাদেশের জন্য নির্মম বাস্তবতা হলো, অধিনায়ক ও বিসিবি সভাপতির কথা সত্য বলেই মেনে নিতে হচ্ছে। ঘরোয়া লিগে ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে এখন আর জাতীয় দলে আসা সম্ভব নয়। এ কারণেই লিগে বাজে পারফরম্যান্স করেও বিশ্বকাপ দলে থাকবেন জাতীয় দলের পরিচিত মুখগুলো। আবার গতিময় পেসারের অভাব বা লেগ স্পিনারের অভাব বোধ করার পরও নতুন কারও লিগের পারফরম্যান্সে দলে আসার সুযোগ নেই। তাই প্রশ্ন উঠে যায়, দেশের একমাত্র লিস্ট ‘এ’ টুর্নামেন্টই যদি জাতীয় দলে অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়, তবে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কী?


   আরও সংবাদ