ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

করোনা সঙ্কটে পুলিশের এডিসি মাহমুদা'র ফেসবুক স্ট্যাটাস


প্রকাশ: ৩০ মার্চ, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


করোনা সঙ্কটে পুলিশের এডিসি মাহমুদা'র ফেসবুক স্ট্যাটাস

   

স্টাফ রিপোর্টার : করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় দেশের টানা ১০ দিনের ছুটি চলছে। সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ আছে দোকানপাটসহ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য। এ অবস্থায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দিনমজুররা পড়েছেন বিপাকে। তাদের অনেকেরই দিন আনা দিন খাওয়া সংসার। এ অবস্থায় অনেকের ঘরেই আর চাল ডাল কেনার পয়সা নেই।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে যারা আছেন, তাদের জন্য সহায়তার হাত বাড়াচ্ছে পুলিশ। এসব নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি মাহমুদা আফরোজ লাকি। 

এডিসি মাহমুদা আফরোজ লাকি'র ফেসবুক স্ট্যাটাস পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-  

“অফিসিয়াল নাম্বারে টেক্সট টি দেখেই খবর নেই কে এই ব্যক্তি, জানতে পারি সে আমার থানা এলাকার নয়, মিরপুর মডেল থানা এলাকার। তক্ষুনি জানাই অফিসের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে। ডিসি স্যারের নির্দেশনায় দ্রুত চাল ডাল বাজারের ব্যবস্থা করেন ওসি, মিরপুর। ধন্যবাদ ওসি, মিরপুরকে এমন মানবিক ব্যপারে সহায়তা করার জন্য। এমন প্রায় প্রতিদিনই মোবাইলে কল ও টেক্সট আসছে। আমরা যতটুকু সম্ভব সহায়তা করছি। আমার সাধ্য নাই সবাইকে সাহায্য করার কিন্তু ইচ্ছাটা অনেক বড়।

এখানে আমি যাদের কথা বলছি, তাদেরকে ভিক্ষুক, ছিন্নমূল, আশ্রয়হীন কোনো নামই দেওয়া যাবে না! কথা বলে দেখেছি, কেউ মাদ্রাসা শিক্ষক, কেউ এলাকায় ভাড়া বাসায় নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের কোচিং করাতো, কেউ বা চায়না, ইন্ডিয়া থেকে যারা বিভিন্ন প্রোডাক্ট নিয়ে আসে, সেগুলো কালেক্ট করে বিভিন্ন দোকানে ডেলিভারি দিতো। মাসে ১০/১৫ হাজার টাকা আয় করে সম্মানের সাথে সংসার চালাতো। নিজেরাও পথে ঘাটে ভিক্ষুকদের সাহায্য করতো। কিন্তু সবকিছু বন্ধ থাকায় আজ তার নিজের সংসার চলছে না। বলতে পারছে না আত্মীয় বা প্রতিবেশিদের কারণ তারাও মোটমুটি এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করে। আমরা যারা সাহায্য কিরছি বস্তি এলাকায় বা পথে পথে, এদের কখনোই সে কাতারে সামিল করা যাচ্ছে না, তারা পথে বের হয়ে বলতে পারছে না 'আমার ৫বছরের শিশুটি কাদছে, ঘরে খাবার নেই'।
এমন অনেক পরিবার আছে ঢাকায়, যার ফুডকোর্ট থেকে আপনি বসুন্ধরা বা নিউ মার্কেটে সুইটকর্ন বা স্মুদি কিনে খেতেন, কিংবা যাকে দেখেছেন নিউমার্কেট বা গাউসিয়ায় দোকানের বাইরে ফুটপাতে দোকান দিয়ে কমদামী থ্রিপিস, স্যান্ডেল বা বাচ্চাদের চুড়ি ক্লিপ আর টেডিবিয়ার বিক্রি করতে। হয়তো আপনার বেবির আব্দার মেটাতে ১০০/২০০ টাকা দিয়ে তার কাছ থেকেই কিনে দিয়েছিলেন একদিন একটা পুহ বা টেডিবিয়ার।  তার সাথে আপনারও দেখা হয়েছিলো মোবাইল ফোনটা সারাতে দিয়ে! তাদের কথা কি আমরা এখনো ভেবেছি! আমরা লকডাউন চেয়েছি বৃহত্তর স্বার্থে, দেশ সমাজ কে করোনামুক্ত করতে, সেটা অপরিহার্য দাবি। কিন্তু এখন সময় এসেছে এই শ্রেণীর পেশাজীবীদের কথা ভাববার। 

আপনারা অনেকেই বিভিন্ন সংগঠন, সমিতি, ক্লাব বা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে দিয়েছেন খেতে না পাওয়া জনগোষ্ঠীর মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য। অনেকেই ভাবছেন কিছু করবেন! যাদের সামান্যতম ইচ্ছে আছে এই কাজ করে খাওয়া মানুষগুলোর জন্য কিছু করার তাদের কে আহবান জানাচ্ছি। আমার কিছু আইডিয়া আছে, আপনাদেরও থাকতে, প্লিজ আমার সাথে যোগাযোগ করুন। আসুন মিলে মিশে কিছু  করি। 

যে সময় আজ তাদের এই কষ্টে ফেলেছে সে সময়কে আমরা একসাথে জয় করি।


   আরও সংবাদ