ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের পাশে গ্রীসে বাংলাদেশ দূতাবাস


প্রকাশ: ৫ এপ্রিল, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের পাশে গ্রীসে বাংলাদেশ দূতাবাস

   

কূটনৈতিক ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ভাইরাসের দ্বারা সংক্রামিত হচ্ছে। ইউরোপও এই ভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় মাসাধিককাল ধরে বন্ধ হয়ে আছে। ফলে অর্থনৈতিক মন্দাও ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। ইউরোপের দেশ গ্রিস ও এর ব্যতিক্রম নয়। 

গ্রিসে ইতোমধ্যে প্রায় দুই সহস্রাধিক মানুষ সংক্রামিত হয়েছে এবং প্রায় শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। মাসাধিক কাল ধরে চলমান এই লকডাউনে জনজীবনের স্বাভাবিক গতিশীলতা একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি শ্রমজীবী মানুষেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 

করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী বাংলাদেশীদের এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রেখেছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। প্রথমেই করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ এবং এর থেকে রক্ষা পাবার জন্য সচেতনামুলক তথ্যসমৃদ্ধ পোষ্টার, লিফলেট প্রস্তুত করেছে যা গ্রিসের বিভিন্ন দ্বীপ ও মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত বাংলাদেশীদের কাছে প্রচার করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে বাংলাদেশের আইইডিসিআরের সহায়তায় একটি সচেতনতামূলক ভিডিও চিত্র প্রস্তুত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন বা আন্তঃজাল মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। প্রবাসীদের চলাচলের প্রয়োজনীয়তা সীমিত করতে দূতাবাস ডাকযোগে কনস্যুলার সেবা প্রদান শুরু করে।এছাড়া দূতাবাস প্রবাসী বিভিন্ন সংগঠনকে সচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে উৎসাহিত করে আসছে।
 
সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাস জনিত লকডাউন এবং বৈশ্বিক অচলাবস্থার কারণে বেশ কিছু প্রবাসী বাংলাদেশী অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। গ্রিসে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ এইসব বাংলাদেশীরা মূলত এথেন্স, থেসালোনিকিতে, মানোলাদা, লাপ্পা এবং দ্বীপাঞ্চলে বসবাস করছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবাসী বান্ধব নীতির আলোকে দীর্ঘ লকডাউনে বিপর্যস্থ প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহায়তার বিষয়টি এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে এবং বাংলাদেশ সরকারের সহায়তার জন্য প্রাথমিকভাবে একটি থোক বরাদ্দের জন্য অনুরোধ জানায়। এই সহায়তার আওতায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ বাংলাদেশীদের এক মাসের মৌলিক খাদ্য সামগ্রী প্রদানের প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। 

যার প্রেক্ষিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের সহায়তার জন্য দূতাবাসের বরাবরে ২০ লক্ষ টাকা থোক বরাদ্দ প্রদান করে। ইতোমধ্যে সহায়তা প্রদানের বিষয়টি প্রচারপত্রের মাধ্যমে গ্রীস প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবহিত করা হয়েছে এবং দুতাবাসের নির্ধারিত টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগ করে বাংলাদেশী জাতীয়তা প্রমাণ সাপেক্ষে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তুদের এই সহায়তার জন্য আবেদন করার অনুরোধ জানানো হয়। 

ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী নাগরিক নিজ উদ্যোগে দূতাবাসে যোগাযোগ করে ত্রাণ সহায়তা তালিকায় নাম নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এই নিবন্ধিত বাংলাদেশীদের ত্রাণ বিতরণের জন্য বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় ৯টি বিতরণ কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে  এবং প্রতিটি নিবন্ধিত ব্যক্তিকে অনলাইনে বা টেলিফোনে একটি টোকেন নম্বর ও একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হচ্ছে যার মাধ্যমে ঐ ব্যক্তি তার আবাসস্থান থেকে নিকটবর্তী বিতরণ কেন্দ্র হতে নির্ধারিত সময়ে খাদ্য সামগ্রি সংগ্রহ করতে পারবেন। 

এই খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমের প্রস্তুতিকালে দূতাবাস কিছু বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে, যেমন- ত্রাণ প্রদানের বিষয়টি সকল বাংলাদেশীকে অবহিতকরণ, সহজে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করে নিবন্ধিত হতে পারা, ত্রানপ্রার্থীদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা, লকডাউন বিধি নিষেধের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রবাসীদের আবাসস্থল থেকে ন্যূনতম দূরত্বে বিতরন কেন্দ্র স্থাপন এবং কোন সংস্পর্শ ও গনজমায়েত ছাড়াই ত্রাণ বিতরণ সম্পন্ন করা।

যথাযথ প্রস্তুতি, পর্যাপ্ত তদারকি এবং প্রবাসী নেতৃবৃন্দের সহায়তায় দূতাবাস সম্পূর্ণ কার্যক্রমটি কার্যকর এবং যথাযথভাবে পরিচালনা করছে। গ্রীস প্রবাসীদের এই সংকটকালে বাংলাদেশ সরকার গ্রিহিত এই সময়োপযোগী পদেক্ষেপে সাধারন বাংলাদেশী প্রবাসীরা গভীর সন্তোষ ও স্বস্তি প্রকাশ করেন।


   আরও সংবাদ