ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

মণিরামপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫ জনসহ সংশ্লিষ্ট পরিবার কোয়ারেন্টাইনে


প্রকাশ: ১২ এপ্রিল, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


মণিরামপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫ জনসহ সংশ্লিষ্ট পরিবার কোয়ারেন্টাইনে

   

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক স্বাস্থ্যকর্মীর কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) পজিটিভ শনাক্তের  পর প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগে তোড়পাড় শুরু হয়েছে। 

এ ঘটনায় মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকাজুড়ে মানুষের ভীতর এক অজানা সংশয় ও আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীর বর্তমান অবস্থান এবং গত এক সপ্তাহের কার্যক্রম পর্যালোচনা শেষে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে করোনা’র বিষদ বিস্তার রোধ কল্পে  স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন মুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। 

গত রবিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে খুলনা থেকে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথের টনক নড়ে। তিনি সাথে সাথে যশোরের সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ আবু শাহীন এবং  মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফীকে বিষয়টি অবহিত করেন। 

এ ঘটনা জানার পর যশোরের সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ আবু শাহীন, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ দিলিপ কুমার রায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফীসহ করোনা মোকাবেলার সাথে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা সরেজমিন মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন এবং এ বিষয়ে পরবর্ত্তী করণীয় নির্ধারন পূর্বক করোনা আক্রান্ত স্বাস্থ্য কর্মীর বর্তমান অবস্থান জানার পর আক্রান্ত স্বাস্থ্য কর্মীর শ্বশুরালয় মণিরামপুর উপজেলার মুজগুন্নী গ্রামের সীমান্তবর্ত্তী কেশবপুর উপজেলার ইমাননগর গ্রামে যান এবং ওই স্বাস্থ্যকর্মীর শারিরীক অবস্থার খোঁজ খবর নিয়ে তাকে ওই গ্রামে রেখেই চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসেন। এরপর স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি নিয়ে নানা পদক্ষেপ শুরু করেন। 

অদৃশ্য এই মহামারী ভাইরাস ওই স্বাস্থ্যকর্মীর দেহে শনাক্ত হওয়ার আগেই উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসকের পিপিই সামগ্রী ও এন ৯৫ মাক্স সরবরাহের ক্ষেত্রে কৃপনতা, দুরদর্শিতা ও অসাবধানতার কারণে ওই স্বাস্থ্য কর্মীকে ঘিরে বড় ধরনের সংক্রমন ঘটতে পারে বলে সংশয় দেখা দেয়। উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মীর দেয়া তথ্য মতে জানা যায়, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই স্বাস্থ্যকর্মীর বাড়ি মণিরামপুর উপজেলার মশ্মিমনগর ইউনিয়নের হাজরাকাটি বেলাতলা গ্রামে। 

তিনি উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে বর্তমানে কর্মরত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে মোহনপুর গ্রামে একটি ভাড়া বাসায় তিনি বসবাস করতেন। গত ১০/১২ দিন আগে তিনি সর্দি কাশিসহ জ¦রে আক্রান্ত হন। শারীরিক এই অবস্থায় তিনি গত ৬ এপ্রিল তার কর্মএলাকা ঝাঁপা ইউনিয়নের সাবেক ৩নং ওয়ার্ড (হানুয়ার গ্রামের এক অংশ,মনোহরপুর ও খালিয়া গ্রামে প্রায় ২০ জন শিশুর ভ্যাকসিন টীকা ও কয়েকজন গর্ভবতী মহিলার টীকা দেন। গত ৮ এপ্রিল ওই স্বাস্থ্য কর্মীর শারিরীক অবস্থা কিছুটা অবনতি হলে ওই দিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগে যেয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য যান। 

প্যাথলজিষ্ট আনিসুজ্জামান ও ইপিআই টেকনোলজিষ্ট সাধনা রানী মিত্র নিজেদের প্রটেকশনে কোন প্রকার পিপিই ও এন ৯৫ মাক্স ব্যবহার না করেই নমুনা সংগ্রহ করেন। 

এছাড়া ওই স্বাস্থ্য কর্মীর সাথে হাসপাতালে কর্মরত কোন কোন কর্মকর্তা ও কর্মীর সম্পৃক্ততা ছিলো তা নিয়ে পর্যালোচনা শেষে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথ, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ অনুপ কুমার বসু, অফিস সহকারী সন্দীপ কুমার, প্যাথলজিষ্ট আনিসুজ্জামান ও ইপিআই টেকনোলোজিষ্ট সাধনা রানী মিত্রকে চিহিৃত করে তাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং মেডিকেল অফিসার  ডাঃ মুসাব্বিরুল ইসলাম রিফাতকে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ দিকে রবিবার বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত  উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আহসান উল্লাহ শরিফী’র নেতৃত্বে একটি টিম উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের মনোহরপুর, খালিয়া ও হানুয়ার গ্রামে যেয়ে গত ৬ এপ্রিল যে সব শিশু ও গর্ভবতী মহিলার টিকা দেওয়া হয়েছিলো সে সব বাড়ি নির্ধারন করে তাদের পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও ওই তিন গ্রামের সকল মানুষের নিরাপত্তার জন্য সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে গোটা এলাকায় লকডাউন মেনে চলতে সকলকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই স্বাস্থ্য কর্মীর নিজ গ্রামের বাড়ির লোকজন, ভাড়া বাড়ির লোকজন এবং শ^শুরবাড়ীর লোজজনের হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এ দিকে সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মীর মাধ্যমে জানা গেছে করোনা আক্রান্ত ওই স্বাস্থ্য কর্মীর শারিরীক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। অচিরেই ওই কর্মী রিকভোরী হয়ে সুস্থ্য উঠবেন বলে ওই সুত্রের দাবি। তবে তাকে ঘিরে মণিরামপুরে করোনা ভাইরাসের বিষদ বিস্তার ঘটতে পারে বলে আশংকা রয়েছে বলে বিভিন্ন মহল সংশয় প্রকাশ করেছেন। 

ওই স্বাস্থ্য কর্মী কীভাবে করোনা আক্রান্ত হলেন তা নিয়েও নানান পর্যালোচনা চলছে। তাছাড়া সচেতন মহল এ ক্ষেত্রে দুষছেন বেশী উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসককে। অসুস্থ্য ওই কর্মী দিয়ে টিকা দেওয়া এবং প্যাথলজিষ্ট  পিপিই ও এন ৯৫ মাস্ক ব্যবহার না করে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর নমুনা সংগ্রহ করাও সঠিক হয়নি বলে সমালোচনা হচ্ছে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, মণিরামপুরে করোনা আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীর কানেক্টে যারা এসেছে সম্ভাব্য সকলকে সচেতন হয়ে নিজ নিজ বাসা বাড়ীতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়ে যথাসম্ভর চেষ্টা করা হয়েছে।


   আরও সংবাদ