ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

এআইআইবি’র প্রেসিডেন্টেকে সহায়তার অনুরোধ অর্থমন্ত্রীর


প্রকাশ: ২২ এপ্রিল, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


এআইআইবি’র প্রেসিডেন্টেকে সহায়তার অনুরোধ অর্থমন্ত্রীর

   

স্টাফ রিপোর্টার : কোভিড-১৯ সারা বিশ্বকে থমকে দিয়েছে। প্রতিদিন মৃত্যু খবর আসে সারা দুনিয়া থেকে। থমকে যাওয়া বিশ্বে কর্মহীন মানুষের হাহাকার কেবলই বাড়ছে, গোটা বিশ্ব আজ প্রকট অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও দুঃচিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। 

নভেল করোনা ভাইরাসে অর্থনীতিতে উদ্ভুত নেতিবাচক প্রভাবের ঝুঁকি এবং প্রভাবগুলি হ্রাসের সহায়তায় সদস্য দেশগুলোর জন্য এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) কর্তৃক ১ হাজার কোটি ডলারের তহবিল গঠন করায় এআইআইবি প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এফিসিএ।

এআইআইবি’র প্রেসিডেন্টের গতিশীল নেতৃত্বে সদস্য দেশগুলির করোনা ভাইরাসের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে অত্যন্ত সহায়ক হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি তিনি ধারাবাহিক ক্রমবর্ধমান সহায়তা এবং স্বাস্থ্য খাতের জরুরী সেবা ও বাজেট সাপোর্টের জন্য এআইআইবি বাংলদেশের জন্য যে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে সেজন্যও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। 

বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এআইআইবি প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি এবং সহযোগীতা নিয়ে টেলিকনফারেন্সে আলাপচারিতার শুরুতে এসব কথা বলেন। 

টেলিকনফারেন্সে আরও যুক্ত হন এআইআইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ডি. জে পানডিয়ান। 

এআইআইবি প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি নিঃসন্দেহে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। প্রতিদিনই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। যদি মহামারী মোকাবেলার পাশাপাশি অর্থনীতি নিয়েও এখন থেকেই না ভাবা হয়, তাহলে ২০২১ সালেও অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো সম্ভব হবে না। সদস্য দেশগুলো একসাথে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানান তিনি। 

তিনি অর্থমন্ত্রীর সাথে বাংলাদেশে এআআিইবির চলমান প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং সেগুলো দ্রুত সফলভাবে সমাপ্ত করার পদক্ষেপ গ্রহনের অনুরোধ করেন। 

উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে এআইআইবির প্রায় ১.১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তায় ৭টি প্রকল্প চলমান রয়েছে, যার মধ্যে ২০২০ সালে অনুমোদিত হয়েছে ৩ টি প্রকল্প। 

অর্থমন্ত্রী ও এআইআইব প্রেসিডেন্টের মধ্যে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের গৃহিত পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা হয়। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষ ও অর্থনীতির জন্য ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপি’র ৩.৩ শতাংশ। এই প্যাকেজের অর্থ ব্যয়ে জনসাধারণের ব্যয় বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা জালকে প্রশস্ত করা এবং আর্থিক সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, পরিষেবা খাত এবং কুটির শিল্পগুলিকে সুরক্ষার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যনির্বাহী মূলধনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

এআইআইবি প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন বাংলাদেশের গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতৃক জরুরী ভিত্তিতে ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, করোনার প্রভাবে আমাদের আমদানি-রপ্তানির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বেশিরভাগ দেশে প্রবাসী ভাইবোনেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। স্থবিরতা নেমে এসেছে রেমিটেন্স প্রবাহে। এই সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমরা অবশ্যই এআইআইবিকে অবিরাম সমর্থন ও সহায়তার জন্য অনুরোধ করছি। এই ক্রান্তিকালিন সময়ে এআইআইবির প্রতিশ্রুত সহায়তাটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরী ছিল, কিন্তু উদ্ভুত পরিস্থিতি  বিবেচনায় আমাদের প্রয়োজন আরো অনেক বেশী সহায়তা। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের উপর করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এআইআইবি থেকে উন্নত প্রকল্প সহায়তা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে পর্যাক্রমে আগামী ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সাপোর্ট প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন যা কৃষি খাতের অটোমেশন, কৃষিজাত দ্রব্যের প্রক্রিয়াকরণ, ফল ও শাক-সবজি প্রক্রিয়াকরণ, কোল্ড স্টোরেজ, চামড়া প্রক্রিয়াকরণ, গবাদি পশু ও হাস মুরগী পালন, এবং মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। 

এছাড়া অর্থমন্ত্রী ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও কুটির শিল্প খাতের পুনর্বাসনের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার অনুরোধ করেন। এআইআইবি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের উল্লিখিত খাতসমূহে আর্থিক সহায়তার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশকে অবহিত করবেন মর্মে জানান । প্রেসিডেন্ট আরও অবহিত করেন যে ফান্ডিং মডালিটিতে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।


   আরও সংবাদ