ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ ভাদ্র ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

কালিগঞ্জে মৃত ব্যাক্তিরাও ব্যাংক থেকে বয়স্ক ভাতার টাকা তুলছে


প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


কালিগঞ্জে মৃত ব্যাক্তিরাও ব্যাংক থেকে বয়স্ক ভাতার টাকা তুলছে

   

সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি : মারা যাওয়ার ৪-৫ বছর পরেও মৃত ব্যাক্তি পাচ্ছে সরকারি বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা। সেই টাকা ব্যাংক থেকে তুলছে ভাতা প্রাপ্ত মৃত ব্যাক্তি। এ যেন অবাক করার বিষয়। তবে টাকা মৃত ব্যাক্তি না তুলতে পারলেও তুলছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যরা। এমনই বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়ী ইউনিয়নে।

প্রায় অর্ধশতাধিক মৃত ব্যাক্তির নামের বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা নকল সই করে ব্যাংকের থেকে টাকা তুলে নিজেদের পকেট ভরছে খোদ চেয়ারম্যান ও কয়েকজন ইউপি সদস্য। তবে মারা যাওয়ার পরেও বয়স্ক ভাতা পাচ্ছে ওই ব্যাক্তি জানেনা তার স্বজনরা।

গ্রামের সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচন করে জন প্রতিনিধি, তাদের সুখে এবং দুঃখে পাশে থাকবে এমনই প্রত্যাশা তাদের । কিন্তু কিছু জন প্রতিনিধিরা গরীবের সর্বস্ব লুটে খাওয়ার জন্য ব্যাস্ত সবসময়।

সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের জন্য গরীব ও অসহায় সরকারি বরাদ্দকৃত ত্রাণের চাল,তেল আত্নসাৎ করে হাজতবাস করছে দেশের অনেক ইউপি চেয়ারম্যান।
এসব ঘটনাকে হার মানিয়েছে কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়ী ইউনিয়নের ১, ৪,৫,৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গাজী শওকত হোসেন।

সরকারি বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা মারা যাওয়ার পরও কয়েক বছর ধরে ৪৪ জন মৃত ব্যক্তির নামের কয়েক লক্ষ টাকা উঠিয়ে আত্নসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

এদের মধ্যে অনেকে ৩-৪ বছর আগে মারা গেছে। তারপরও বন্ধ হয়নি তাদের বয়স্ক ভাতা। এসব টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়ে নেয় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।

ধলবাড়ী ইউনিয়নিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবু হালদার প্রতিমাসে ১১ জন মৃত মানুষের নামের ভাতার টাকা উঠিয়ে নিজের পকেটে ভরেন। যাদের টাকা উঠিয়ে নেন তারা হলেন নন্দীকাটি এলাকার মৃত শিবপদ সরকার,ব্যক্তিগত হিসাব নং সোনালী ব্যাংক (৫৭২৫৩),মৃত ফুলজান বিবি হিসাব নাম্বার (৫৭২৫৭), মৃত যদু নাথ মৃধা হিসাব নং (৫৭২৮৬), মৃত দীনবন্ধু সরকার হিসাব নং(৫৭২৯৩)। 

এছাড়া ওই ওয়ার্ডের মোস্তফাপুর এলাকার মৃত সারথি ঘরামী হিসাব নং (৫৭২৭১) মৃত আনোয়ারা বেগম হিসাব নং (৫৭৬৩১), মৃত নিরাপদ মন্ডল হিসাব নং (৫৭২৯৪), মৃত যোগেশ চন্দ্র মন্ডল হিসাব নং (৫৭৭৮৮)। মৌখালী এলাকার মৃত দাউদ মোড়ল হিসাব নং( ৫৭৭৮৯)। সেরকাটি এলাকার মৃত হেমান্ত মন্ডল হিসাব নং(৫৭২৭৫) ও ড্যামরাইল এলাকারমৃত গৌরচন্দ্র মন্ডল হিসাব নং (৫৭২৭৬)।

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রতি তিন মাস পরপর ১১ জনের ১ হাজার ৫ শত টাকা নিজে তুলে আত্নসাৎ করেন।

৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা ৯ জন মৃত ব্যাক্তির ভাতার টাকা তুলে নিজেই খেয়েছেন। যারা মারা যাওয়ার পরও ভাতা পেতেন তারা হলেন, পিরোজপুর এলাকার মৃত পুষ্পরাণী ব্যাংক হিসাব নাম্বার (৫৭৩০৩), মৃত সুকচাঁদ আলী হিসাব নং(৫৭৩১৩),মৃত জহুর ফকির হিসাব নং (৫৭৩৩৫)। মহেশকুড় এলাকার মৃত ছফিরন বেগম হিসাব নং (৫৭৩০৫),মৃত জহুরা বেগম হিসাব নং (৫৭৯৭৪),মৃত মনোয়ারা বেগম হিসাব নং(৫৭৩২০)মৃত নুরী বেগম হিসাব নং (৫৭৩২৪)। বাজুয়াগড় এলাকার মৃত এন্তাজ আলী হিসাব নং(৫৭৩২৯) ও মৃত আসমানী বিবি হিসাব নাম্বার (৫৭৩০৬)।

৫ নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য খায়রুল আলম প্রতিমাসে ১১ জন মৃত ব্যাক্তির ভাতার টাকা তুলে নিজে খেয়েছে।যারা বয়স্ক ভাতা পেতেন তারা হলেন ,তেরুলিয়া এলাকার মৃত নাজিম উদ্দিন গাজি হিসাব নং (৫৭৫৬৮),রঘুরামপুর এলাকার মৃত আমিন শেখ হিসাব নং (৫৬৮৫৭),মৃত ছফেদ আলী হিসাব নং (৫৬৮৭৬),মৃত রমজান গাজী হিসাব নং (৫৮২৩৭),তেঘরিয়া এলাকার মৃত আমেনা বিবি হিসাব নং (৫৬৮৬২),মুয়াজুদ্দীন গাজী হিসাব নং (৫৬৮৮৯),মৃত জিয়াদ আলী হিসাব নং (৫৬৮৬৭),গনেশপুর এলাকার মৃত ভাদ্ররী বিবি হিসাব নং (৫৬৮৭৭),মৃত ছফুরা বিবি হিসাব নং (৫৬৮৮৮),মৃত লক্ষ্মী সরদার হিসাব নং (৫৭৩৯৬),মৃত সূর্য বেওয়া হিসাব নং (৫৭৮১১)।

৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রব প্রতিমাসে ৪ জন মৃত ব্যাক্তির ভাতার টাকা তুলে নিজে খেয়েছে।যারা ভাতা পেতেন তারা হলেন, ধলবাড়ি এলাকার মৃত হারান চন্দ্র ঘোষ হিসাব নং (৫৬১২৯), মৃত সুধা সরকার হিসাব নং (২৮০৯২০১০২৭৬০১), মৃত আরশাদ আলী হিসাব নং (২৮০৯২০১০২৭৬০৯) নুরনেছা বেগম হিসাব নং (৫৭৮১৮)।

৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের , ৮ জন মৃত ব্যাক্তির টাকা ভাতার টাকা নিজে নিয়েছেন। যারা বয়স্ক ভাতা পেতেন তারা হলেন, গান্দুলিয়া এলাকার মৃত মান্দার আলী হিসাব নং (৫৬৯৩৮), ওমর আলী গাজী হিসাব নং (৫৬৯৫৮), মৃত ছমির মোড়ল হিসাব নং (৬৭৯৭০), মৃত কেতাব মোড়ল হিসাব নং (৫৭৮৮৫), মুনছুর আলী গাজী হিসাব নং (৫৬৯৮০), মৃত হামিদা খাতুন হিসাব নং (৫৭৮৩১), নৈহাটি এলাকার মৃত কিনু গাজী হিসাব নং (৫৬৯৫৭), মৃত হাকিম গাজী হিসাব নং (৫৬৯৬৯)।

দীর্ঘদিন যাবত মৃত ব্যাক্তির বয়স্ক ভাতা তুলে নিলেও ধরা ছোওয়ার বাইরে ছিল ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। 

এ বিষয়ে ভাতা প্রাপ্ত মৃত লক্ষী রাণী সরদারের ছেলে বাবু সরদার জানান,তার মা দীর্ঘ ৩ বছর আগে মারা গেছেন। মারা যাওয়ার কয়েক দিন পরে ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তার মায়ের বয়স্ক ভাতার কার্ড নিয়ে যান। এরপর থেকে তারা জানেননা তার মায়ের নামের বয়স্ক ভাতার কার্ড চালু আছে।

প্রতিবাদে  ফুঁসে উঠেছে ইউনিয়নের সুবিধাবঞ্চিত জনগন। দুদকসহ অসংখ্য যায়গায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে দুর্ণীতিবাজ চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের বিরুদ্ধে। 

এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শওকাত হোসেনের সাথে কথা হলে এ প্রতিনিধিকে তিনি বলেন আমার নির্বাচনী প্রতিপক্ষরা পুর্ব পরিকল্পিতভাবে আমার দীর্ঘদিনের অর্জিত সন্মান ক্ষুন্ন করতে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা, বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করাচ্ছে। তবে ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বর কিছু অপরাধ করেছে যেটা আমি পরে জেনেছি।


   আরও সংবাদ