ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ ভাদ্র ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

করোনায় আক্রান্ত পুলিশের ৬৭৭, ডিএমপি'তে ৩২৮ সদস্য


প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


করোনায় আক্রান্ত পুলিশের ৬৭৭, ডিএমপি'তে ৩২৮ সদস্য

   

স্টাফ রিপোর্টার : দেশে উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। সম্প্রতি প্রায় প্রতিদিনই দেশজুড়ে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। শুরু থেকেই করোনা প্রতিরোধে মাঠের সম্মুখ যোদ্ধা বাংলাদেশ পুলিশেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

শুক্রবার (০১ মে) পর্যন্ত পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা এক বার্তায় এসব তথ্য জানান।

এআইজি সোহেল রানা জানান, আজকে পর্যন্ত পুলিশের ৬৭৭ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুধুমাত্র ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) আক্রান্ত হয়েছেন ৩২৮ জন সদস্য। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির ৬৮ জন সদস্যের করোনা টেস্টে ফলাফল পজিটিভ এসেছে।

আর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন পুলিশের ৫৫ জন সদস্য। এছাড়া, বর্তমানে ১৭৪ জন সদস্য আইসোলেশনে রয়েছেন এবং কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ১ হাজার ২২৫ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪ জন সদস্যের।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত চার পুলিশ সদস্য হলেন- ডিএমপির কনস্টেবল জসিম উদ্দিন (৪০), এএসআই আব্দুল খালেক (৩৬), ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল আশেক মাহমুদ (৪৩) এবং পুলিশের বিশেষ শাখার এসআই নাজির উদ্দীন (৫৫)। এদের মধ্যে সর্বশেষ শুক্রবার (০১ মে) সকালে এসআই নাজির উদ্দীন রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এসময় এআইজি সোহেল রানা বলেন, করোনায় পুলিশের কনস্টেবল পদমর্যাদার সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, করোনা সংকটের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো করছেন কনস্টেবলরা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের সৎকার কিংবা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার কাজে সরাসরি কনস্টেবলরাই যুক্ত হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কারণে তাদের নিজেদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ অবস্থায় কনস্টেবলদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা দরকার।

এছাড়া, কনস্টেবলরা সাধারণত পেট্রোল টিম, চেকপোস্ট এবং ট্রাফিক সিগনালগুলোতে দায়িত্ব পালন করেন। বেশিরভাগ কনস্টেবল সদস্যরাই পুলিশ ব্যারাকে থাকেন, যেখানে একটি রুমে অন্তত ১২ জন সদস্য বসবাস করেন। এটা তাদের আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম বড় কারণ। আক্রান্তদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা সামগ্রীর অভাব এবং শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত না করার কারণে আক্রান্ত হয়েছেন।

এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, করোনা ভাইরাসের বিষয়ে শুরু থেকেই পুলিশ সদস্যদের সচেতন করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষা সামগ্রী তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং প্রতিনিয়তই পাঠানো হচ্ছে। একইসঙ্গে আক্রান্তদের সর্বোচ্চ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ পুলিশের ২ লক্ষাধিক সদস্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে থেকে মানুষকে নিরন্তর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য প্রথমত তাদের মধ্যে ব্যপকভাবে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত সেসব সচেতনতার বার্তার বিষয়ে সদস্যদের আপডেট করা হচ্ছে। এছাড়া, সিনিয়র কর্মকর্তারা নিয়মিত পুলিশ লাইনসে গিয়ে সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন।

পাশপাশি পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মাস্ক এবং হ্যান্ডগ্লাভস বিভিন্ন নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। বিভিন্ন পুলিশলাইনস এবং ব্যারাকগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জীবানুনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। অফিস এবং পুলিশ লাইনসের প্রবেশমুখগুলোকে সুরক্ষিত করা হয়েছে। নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যারাকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বেডগুলো রাখতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পুলিশ সদস্যদের পরিবারকেও সুরক্ষিত রাখতে নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যতটা সম্ভব সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহের পাশাপাশি সুচিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। এজন্য পুলিশ হাসাপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী এবং সুবিধাযুক্ত করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, করোনা সংক্রমণ থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে পুলিশ যে দায়িত্ব পালন করে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জানার পরও সাধারণ মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, দেশ ও জনগণের প্রতি কমিটমেন্টের জায়গা থেকে পুলিশ সদস্যরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। ইতোমধ্যে আমাদের বেশ কয়েকশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন এবং চারজন গর্বিত সদস্য দেশের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। আমরা তাদের জন্য গর্বিত। 

বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যগণ তাদের এই ত্যাগকে, এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছেন এবং মনোবলের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষা সামগ্রী তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং প্রতিনিয়তই পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।


   আরও সংবাদ