ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ ভাদ্র ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

গাজীপুরে শিশু আলিফের অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার


প্রকাশ: ২ মে, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


গাজীপুরে শিশু আলিফের অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার

   

গাজীপুর সংবাদদাতা : গাজীপুরে আলিফ হোসেন (৫) নামের এক শিশুর অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে র‍্যাব-১। তিনি গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি আমতলা পারিজাত এলাকার ফরহাদ হোসেনের ছেলে।

শনিবার অনুমানিক রাত ১২টার দিকে নিজ বাড়ি থেকেই শিশু আলিফের লাশ উদ্ধার করা হয়। র‍্যাব-১ এর পোড়াবাড়ি ক্যাম্প গাজীপুর থেকে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গেল-২৯ এপ্রিল অনুমান বিকেল ৪টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী পারিজাত এলাকার মোঃ ফরহাদ হোসেন এর শিশু সন্তান আলিফ হোসেনকে তাঁর নিজ বাড়ি হইতে নিখোঁজ হয়। নির্খেঁাজের পর আলিফের পরিবার খোঁজাখুজি করে কোথাও না পেয়ে কোনাবাড়ি থানায় একটি ডায়েরী করেন। যার নম্বর-১১৩৫। 

নিখোঁজের পরদিন ভিকটিমের বাবার মোবাইল ফোনে অচেনা নম্বর থেকে তাঁর শিশু সন্তান আলিফকে তাঁরা অপহরণ করেছে বলে ফোন বার্তা আসে। মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। মুক্তিপণের দাবীকৃত টাকা না দিলে তাঁর ছেলেকে হত্যা করে লাশগুম করা হবে জানায়। 

ডায়েরী করার পর কোনাবাড়ি থানা পুলিশের তেমন ভূমিকা ছিল না ভিকটিমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে। এক পর্যায়ে ২রা মে-২০ইং ভিকটিমের পরিবার নিরুপায় হয়ে গাজীপুর পোড়াবাড়ি র‍্যাব-১ ক্যাম্পে আইনগত সাহায্য কামনা করেন।

র‍্যাব এ অভিযোগ পেয়েই অপহৃত ভিকটিম উদ্ধার এবং অপহরণকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে মাঠে নামেন তাঁরা।

গেল ২রা-মে রাত অনুমান সাড়ে ৯টার দিকে র‍্যাব-১ পোড়াবাড়ী ক্যাম্প এর সদস্যরা আভিযান চালান। গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল এলাকা থেকে মুক্তিপণের টাকা বিকাশের মাধ্যমে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। এমন খবর পেয়ে নগরীর পূবাইল রেল লাইন এলাকায় থেকে অপহরণকারী অন্যতম মূলহোতা আসামী মোঃ সাগর (১৯)কে আটক করে।

আটককৃত সাগর আলী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার পদিপাড়া গ্রামের রফিক উল্লাহ ছেলে। সাগরের দেয়া তথ্যমতে ৩তলা ফ্লাটের একটি ঝুটের গুদাম থেকে একটি প্লাষ্টিকের বস্তা থেকে শিশু আলিফের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। আটক হওয়া সাগর পেশায় একজন গার্মেন্টস কর্মী। তাঁরা ৩-বন্ধু মিলে ভিকটিমের বাড়ির টিনসেট রুমভাড়া নিয়ে ৬ মাস যাবৎ গার্মেন্টসে চাকুরী করতো। 

এক সপ্তাহ পূর্বে উশৃঙ্খল জীবনযাপন করায় বাসার মালিক ভিকটিমের বাবা ফরহাদ আসামীর বন্ধু ও রুমমেট জুয়েল আহমেদ সবুজকে ভবনের ছাদে উঠে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার দায়ে কয়েকটি চড়-থাপ্পর মারেন। এই থাপ্পরকে কেন্দ্রে করেই বাড়ির মালিকের প্রতি ক্ষোভ থেকে প্রতিশোধ নিতেই বন্ধু জুয়েল আহমেদ সবুজ মিলে আলিফকে হত্যা করে।

র‍্যাব-১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের লেঃ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানায়, সাগর ও তাঁর বন্ধু জুয়েল আহমেদ সবুজ গেল-২৯ এপ্রিল বিকেল অনুমান ৪টারদিকে পরিবারের সকলের দৃষ্টির আড়ালে বাসা থেকে আলিফ কে ডেকে নিয়ে আসে। খেলার ছলে ভাড়াকৃত বাসার ছাদে নিয়ে যায় এবং প্রথমে জুয়েল আহমেদ সবুজ গলা টিপে ধরে। সাগর শিশুটির মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে লাশটি একটি প্লাষ্টিকের বস্তার ভিতর ভরে তাঁদের ভাড়াকৃত বাসার পাশের রুমে ঝুট গুদামে রেখে দেয়। 

এরপর তারা দুই জন উক্ত বাসায় রাত্রি যাপন করে। পরের দিন সকালে স্বাভাবিক ভাবে বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকায় চলে যায়। আসামীরা বিভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ভিকটিমের বাবার মোবাইল ফোনে কল করে অপহরণের কথা জানায় এবং মুক্তিপন হিসেবে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করে।

২০ লাখ টাকা পেলেই আলিফকে ফেরত দিবে অন্যথায় হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে বলে হুমকি প্রদান করে। অপহরণকারীরা নিহতের পরিবারকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে থেকে নগদ ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে আসতে বলে।

বাড়ির মালিক ফরহাদ হোসেন ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে গত তিনদিন অপহরণকারীর কথামত গোপনে উত্তরা, আব্দুল্লাপুর, টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় ছেলেকে ফিরে পাবার জন্য পাগলের মতো ঘোরাঘুরি করে। অবশেষে মুক্তিপনের টাকা বিকাশের লেনদেন এর সময় গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল রেল স্টেশন এলাকা হইতে অপহরণ এবং হত্যাকারী অন্যতম মূলহোতা আসামী সাগরকে আটক করা হয়।

আসামী আটকের পর র‍্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী সাগর উক্ত খুনের ঘটনার সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত আসামী সাগর জানায়, অপহরণ ও হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী জুয়েল আহমেদ সবুজ একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী।  সবুজকে গ্রেফতারের জন্য র‍্যাবের অভিযান ব্যাহত থাকবে।


   আরও সংবাদ