ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ ভাদ্র ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সত্য শোনার অভ্যাস করুন প্রধানমন্ত্রীকে জাফরুল্লাহ


প্রকাশ: ৯ মে, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


সত্য শোনার অভ্যাস করুন প্রধানমন্ত্রীকে জাফরুল্লাহ

   

স্টাফ রিপোর্টার : সত্য শোনার অভ্যাস করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী দেশের কল্যাণ চান। আার কল্যাণ চাইলে সত্য শোনার অভ্যাস ও মানসিকতা থাকতে হবে। তাহলে আপনি জয়যুক্ত হবেন। দেশ জয়যুক্ত হবে।

তিনি ঈদের আগে সব সাংবাদিককে প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিটি সাংবাদিককে অন্তত ২০ হাজার করে টাকা দিন। তাহলে তারা শক্তি পাবে, সত্য বলার জন্য বেঁচে থাকবে।

আজ রোববার (১০ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এশিয়ান জার্ণালিস্ট সোসাইটি আয়োজিত সাংবাদিক গ্রেফতার, নিপীড়ন, গণ চাকুরিচ্যুতির প্রতিবাদ ও বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। 

ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনার বাবা ছিলেন রাজনীতিকদের দ্বারা পরিবেষ্টিত। আর আপনি পরিবেষ্টিত গোয়েন্দাদের দ্বারা। তিন শ্রেণির গোয়েন্দা বাহিনী। তারা হলো আমাদের নি‌জেস্ব গোয়েন্দা বাহিনী, ভারতের র’ আর মোসাদ। তাদের চারপাশে আছে আমলারা। আমলারা হচ্ছে সেই সকল প্রাণী আপনি যা শুনতে চান তারা তাই শোনায়। আপনি ডিসিদের সাথে যে ডিজিটাল কনফারেন্স করেন তাতে সেই কর্মকর্তারা প্রথম দুই মিনিট আপনার প্রশংসা করে পরে তারা কি করেছে সেটা বলে।

তিনি বলেন, দেশের এই পরিস্থিতির মধ্যে যারা আপনাকে সঠিক তথ্য দিতে চায় তারা হলেন সাংবাদিক । গোয়েন্দারা তথ্য দেয়, কিন্তু মনগড়া। বঙ্গবন্ধুর সাথে গোয়েন্দারা কি কি আচরণ করেছে সেগুলো থেকে আপনার শিক্ষা নেয়া উচিত। আমি বিশ্বাস করি আপনি দেশের ভাল চান। আর সেজন্য সাংবাদিকদের কথা বলতে দেন। কথা শোনার অভ্যাস করুন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘সাংবা‌দিকরা কার্টুন করে কাদের, যাদেরকে ভালোবাসে তাদের। সুতরাং আপনারা এই ব্যঙ্গ‌কে ভয় পান কেন? তবে আপনি কয়েকটি ভালো কাজের চেষ্টা করেছেন। তার মধ্যে একটি প্রণোদনা, তবে এই প্রণোদনা সত্যিকার অর্থে যারা বড়লোক তারাই পাচ্ছে।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের দু’কোটি পরিবার এক কোটি একেবারে নিরন্ন, আর এক কোটি অর্ধাহারে অনাহারে থাকে তাদের সবাইকে মাসিক রেশন দেন। সাপ্তাহিক নয়, কারণ সাপ্তাহিক দিলে তাদের বারবার রাস্তায় আসতে হবে তাই মাসিক দিতে হবে। মনে রাখবেন বাঘ যখন বনে খাবার না পায় তখন লোকালয়ে আসে। মানুষ ঘর থেকে বের হয়েছে আপনার নিয়ম ভঙ্গ করেছে একমাত্র পেটের ক্ষুধার জ্বালায় আর এই দুই কোটি মানুষের খাবার দেওয়ার সামর্থ্য তো আমাদের আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছে ১৬ লক্ষ টন চাল মজুদ আছে। তাহলে তাদের সাহায্য করতে প্রব‌লেম কি?

শওকত মাহমুদ বলেন, বর্তমান সরকার অভিশপ্ত, ব্যর্থ ও জালিম সরকার। এই সরকার আমরা চাই না। এ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য একের পর এক গনমাধ্যমের উপর দলন-নিপীরন চালাচ্ছে। যেসব গনমাধ্যম ও সাংবাদিকরা সরকারের সমালোচনা করে তাদের উপর সরকার নির্বিচারে অত্যাচার চালাচ্ছে।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের বিরোদ্ধে করা সকল মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানান।

ডিজিটার নিরাপত্তা আইন বাতিলেরর দাবি জানিয়ে শওকত মাহমুদ বলেন, সরকার করোনা মোকাবেলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। স্বাস্থ্যবিধির কি হবে তা নিয়ে সরকারের মাথা ব্যাথা নেই। এজন্য আস্তে আস্তে লকডাউন তুলে নিচ্ছে। জনগণের চাহিদা পূরণ করতে না পারায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। এসব তথ্য যেনো সাংবাদিকরা প্রচার না করতে পারে এজন্য সরকার তাদের নানাভাবে নির্যাতন করচ্ছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। কাজলকে যেভাবে হাতকড়া পড়িয়েছে তা খুবই দুঃখজনক। আমি অবিলম্বে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। এসময় তিনি প্রত্যেক সাংবাদিককে ২৫ হাজার টাকা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

শওকত মাহমুদ বলেন, সরকার মালিক ছাড়া কাউকে চিনে না। গরীবদের জন্য কোনো কাজ করছে না। শুধু ধনীদের আরো ধনী করার জন্য দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষ পালনের জন্য শুরুতে করোনা প্রস্তুতি নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এজন্যই দিনদিন করোনা পরিস্থিতি দেশে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে। এখনো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলনকে ধরে রেখেছে।

এম আবদুল্লাহ বলেন, করোনা মহামারিতে সাংবাদিকরা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মালিক কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের জন্য কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে না। এর মধ্যে ডজন ডজন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। অনেক মালিক কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের বকেয়া বেতনগুলোও পরিশোধ করছে না। সব মিলিয়ে সাংবাদিকরা চরম কষ্টে সময় অতিবাহিত করছে। 

এক কথায় গণমাধ্যমে এক অরাজকতা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, আমি মালিক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, সাংবাদিক ছাঁটাই বন্ধ করুন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন, সবার বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করুন।

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সাবেক সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিএফইউজের সিনিয়র সহ সভাপতি নুরুল আমিন রোকন, সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এড. আবেদ রেজা, প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, দফতর সম্পাদক আবু ইউসুফ, ডিইউজের দফতর সম্পাদক ডি এম আমিরুল ইসলাম অমর, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরী, ডিইউজের সিনিয়র সদস্য তালুকদার রুমী প্রমুখ।

আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজে, ডিইউজেসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।


   আরও সংবাদ