ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝিকরগাছা, প্রতিবন্ধী ভাতা পায় বলে সহযোগিতা করা হবে না


প্রকাশ: ৯ মে, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


ঝিকরগাছা, প্রতিবন্ধী ভাতা পায় বলে সহযোগিতা করা হবে না

   

বেনাপোল থেকে আশানুর : করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনে চা ও বিড়ির দোকান বন্ধ রেখে গৃহবন্দী হয়ে, মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে যশোরের ঝিকরগাছার আলী ও বাটুল নামে দুই প্রতিবন্ধী দোকানদার।  এ পর্যন্ত তাদের দোয়ারে সাহায্য বলতে তেমন কিছুই পৌঁছায়নি। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে এক প্রকার না খেয়েই, তাদের দিন অতিবাহিত হচ্ছে। 

ঝিকরগাছা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কৃষ্ণনগর হাওয়ার মোড়ের আলি হোসেন। তিনি একজন প্রতিবন্ধী। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। প্রতিবন্ধী হয়েও তিনি ভিক্ষা বৃত্তি কিংবা কারো কাছে হাত না পেতে, হাওয়ার মোড়ে ছোট একটা চা এর দোকান দিয়ে বেচা কেনা করেন। দিনে যা আয় হয়, তাই দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে যায়। কিন্তু লকডাউনের কারণে তিনি ঘরবন্দী জীবন যাপন করছেন। 

আলী জানান, সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গৃহবন্দী হয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে এক প্রকার না খেয়েই দিন কাটছে। এখন পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার থেকে ৭ কেজি চাউল, ২ কেজি আটা, ১ কেজি ডাউল ও ১ কেজি আলু পেয়েছি। চারজন মানুষের সংসার ক'দিনই বা চলে। বিভিন্ন নেতাকর্মীদের কাছে ধন্যা দিয়েও কোন লাভ হয়নি। আর কোন সাহায্য পায়নি। ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে ১০ টাকার চাউলের কার্ডের কথা জানালেও, তিনি দেবেন না বলে জানান। 

ঝিকরগাছা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম সুজন বলেন, আলি প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। এজন্য তাকে কোন সহযোগিতা দেওয়া হবে না। 

অন্যদিকে, ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ড মসজিদের নীচে পান বিড়ি দোকান দিয়ে দোকানদারি করতেন বাটুল। 

চার বছর আগে স্ট্রোক করে এখন প্যারালাইসড হয়ে বাড়িতেই বসেই দিন কাটে তার। তিন ছেলে আর দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। তার বড় ছেলে সাগর। কতইবা বয়স হবে। এই ১৫ কিংবা ১৬ বছর। বাবার অসুস্থতার পর, লেখাপড়া তেমন একটা করতে পারেনি। এই অল্প বয়সে তাকেই এখন সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। এই অল্প বয়সেই সে এখন পত্রিকার হকারী করে ৫ জনের সংসারটা কোন রকম টেনেটুনে চালায়। 

আধপেটা খেয়ে ভালোই চলে তাদের  সংসার। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে, তাদের সংসারে নেমে এসেছে দূর্যোগের ঘনঘটা। কাজকাম হারিয়ে এখন না খেয়েই কোনরকমে দিন কাটছে তাদের। সরকারি কিংবা ব্যক্তিগত কোন প্রকার সাহায্যই তারা পায়নি। 

কথা হয় বাটুলের স্ত্রীর সঙ্গে, তিনি জানান, পৌরসভার কিংবা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে  কোনো ধরনের কোনো সহযোগিতা পাননি তারা। এখন পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধি খোঁজ খবর নেননি। 

তিনি দুঃখ করে বলেন, বাড়ির পাশের দুইতলা বাড়ি ওয়ালা পৌরসভার ত্রান পেয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে কেউ কোনো ত্রান দেয়নি। এখন প্যারালাইজড স্বামী আর এই ছোট দুটি ছেলে নিয়ে না খেয়ে মরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। একমাত্র আল্লাহ আমাদের ভরসা ।

যশোর ঝিকরগাছার সেবা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশরাফুজ জামান বাবু বলেন, সরকারি ত্রান বিতরণে চরম অব্যবস্থাপনা হচ্ছে। বিতরণকারী জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের লোক বেছে বেছে, মুখ চিনে ত্রান দিচ্ছে। এতে করে প্রকৃত অসহায় দুস্থ মানুষেরা ত্রান বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, জনপ্রতিনিধি নিজের পরিবারের জন্যই অনেকগুলো কার্ড রেখে দিয়ে গরিবের হক মেরে খাচ্ছেন। 

এসকল জনপ্রতিনিধিদের চিহ্নিত করে কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এবং তাদের পদ থেকে স্থায়ী বরখাস্ত করতে হবে। ত্রান বিতরণে স্কুল কলেজের শিক্ষকদেরকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।


   আরও সংবাদ