ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মণিরামপুরের করোনা আক্রান্ত সেই স্বাস্থ্যকর্মী সুস্থ্য ঘোষণা


প্রকাশ: ১১ মে, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


মণিরামপুরের করোনা আক্রান্ত সেই স্বাস্থ্যকর্মী সুস্থ্য ঘোষণা

   

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি : মণিরামপুরের সেই স্বাস্থ্যকর্মী রবিউল ইসলামকে আনুষ্ঠানিকভাবে সুস্থ্য ঘোষণা করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সাথে তার শ্যালকও সুস্থ্য হয়েছেন। 

মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যশোরের প্রথম করোনা পজিটিভ মণিরামপুরের বহুল আলোচিত স্বাস্থ্যকর্মী রবিউলকে সম্পুর্ন সুস্থ্য হিসেবে ছাড়পত্র দেয়া হয়। 

এ সময় জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ আবু শাহিনসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করেন। 

স্বাস্থ্যকর্মী রবিউল ইসলাম (৩৭) মণিরামপুর উপজেলার হাজরাকাটি বেলতলা গ্রামের মাস্টার আব্দুল খালেকের ছেলে। ওই স্বাস্থ্যকর্মীর শ্যালক শোয়াইব হোসেন (১৭) সম্প্রতি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হবার পর চিকিৎসাধীন থেকে  সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন বলে একই দিনে তাকেও আনুষ্ঠানিকভাবে সুস্থ্যতার ঘোষনা দেওয়া হয়।

শোয়াইব কেশবপুর উপজেলার ইমাননগর গ্রামের আব্দুল বারিক সরদারের ছেলে। তাকে কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে সুস্থ্যতার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শুভ্রারানী দেবনাথ জানান, গত ২ এপ্রিল থেকে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৭০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬ জন করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। বাকি সবাই করোনা নেগেটিভ। করোনা আক্রান্ত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টাফ বলে জানান তিনি। 

বাকী একজন কেশবপুরের শোয়াইব হোসেন এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এদিকে মণিরামপুর তথা যশোরের প্রথম করোনা পজিটিভ স্বাস্থ্যকর্মীর সুস্থ্যতার খবরে উপজেলা ব্যাপি জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। এই স্বাস্থ্যকর্মীকে ঘিরে গোটা উপজেলার স্বাস্থ্যবিভাগে এক অজানা আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

যশোরের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মী রবিউল ইসলাম কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) পজিটিভ শনাক্তের  পর প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগে তোড়পাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলাসহ পাশ^বর্তী বিভিন্ন এলাকাজুড়ে মানুষের ভীতর এক অজানা সংশয় ও আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীর গ্রামের বাড়ি, ভাড়ার বাসা বাড়ি ও তার কর্মএলাকায় করোনা’র বিষদ বিস্তার রোধ কল্পে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন মুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। 

গত ১২ এপ্রিল দুপুরে খুলনা থেকে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথ, যশোরের সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ আবু শাহীন,যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ দিলিপ কুমার রায় এবং মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী বিষয়টিকে আমলে নিয়ে করোনা আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীর বর্তমান অবস্থান জানার পর আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীর শশুরালয় মণিরামপুর উপজেলার মুজগুন্নী গ্রামের সীমান্তবর্ত্তী কেশবপুর উপজেলার ইমাননগর গ্রামে যান এবং ওই স্বাস্থ্যকর্মীর শারিরীক অবস্থার খোঁজ খবর নিয়ে তাকে ওই গ্রামে রেখেই চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসেন। এরপর স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি নিয়ে নানা পদক্ষেপ শুরু করেন। 

অদৃশ্য এই মহামারী ভাইরাস ওই স্বাস্থ্যকর্মীর দেহে শনাক্ত হওয়ার আগেই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের  অসাবধানতার কারণে ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে ঘিরে বড় ধরনের সংক্রমন ঘটতে পারে বলে সংশয় দেখা দেয়। 

উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মীর দেয়া তথ্য মতে জানা যায়, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই স্বাস্থ্যকর্মীর বাড়ী মণিরামপুর উপজেলার মশ্মিমনগর ইউনিয়নের হাজরাকাটি বেলাতলা গ্রামে। তিনি উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে বর্তমানে কর্মরত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে মোহনপুর গ্রামে একটি ভাড়া বাসায় তিনি বসবাস করতেন। গত ৬ এপ্রিল  তিনি সর্দি কাশিসহ জ¦রে আক্রান্ত হন। 

শারীরিক এই অবস্থায় তিনি গত ৬ এপ্রিল তার কর্মএলাকা ঝাঁপা ইউনিয়নের সাবেক ৩নং ওয়ার্ড (হানুয়ার গ্রামের এক অংশ,মনোহরপুর ও খালিয়া গ্রামে প্রায় ২০ জন শিশুর ভ্যাকসিন টীকা ও কয়েকজন গর্ভবতী মহিলার টীকা দেন। গত ৮ এপ্রিল ওই স্বাস্থ্যকর্মীর শারিরীক অবস্থা কিছুটা অবনতি হলে ওই দিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগে যেয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য যান। প্যাথলজিষ্ট আনিসুজ্জামান ও ইপিআই টেকনোলজিষ্ট সাধনা রানী মিত্র নিজেদের প্রটেকশনে কোন প্রকার পিপিই ও এন ৯৫ মাক্স ব্যবহার না করেই নমুনা সংগ্রহ করেন। 

এছাড়া ওই স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে হাসপাতালে কর্মরত কোন কোন কর্মকর্তা ও কর্মীর সম্পৃক্ততা ছিলো তা নিয়ে পর্যালোচনা শেষে উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ শুভ্রা রানী দেবনাথ, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ অনুপ কুমার বসু, অফিস সহকারী সন্দীপ কুমার, প্যাথলজিষ্ট আনিসুজ্জামান ও ইপিআই টেকনোলোজিষ্ট সাধনা রানী মিত্রকে চিহিৃত করে তাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং মেডিকেল অফিসার ডাঃ মুসাব্বিরুল ইসলাম রিফাতকে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং ওই দিন দিবাগত রাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আহসান উল্লাহ শরিফী’র নেতৃত্বে একটি টিম উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের মনোহরপুর, খালিয়া ও হানুয়ার গ্রামে যেয়ে গত ৬ এপ্রিল যে সব শিশু ও গর্ভবতী মহিলার টিকা দেওয়া হয়েছিলো সে সব বাড়ি নির্ধারন করে তাদের পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

ওই তিন গ্রামের সকল মানুষের নিরাপত্তার জন্য সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে গোটা এলাকায় লকডাউন মেনে চলতে সকলকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই স্বাস্থ্য কর্মীর নিজ গ্রামের বাড়ির লোকজন, ভাড়া বাড়ির লোকজন এবং শ্বশুরবাড়ীর লোজজনের হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এ ঘটনার দুইদিন পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মীর মাধ্যমে জানা যায় করোনা আক্রান্ত ওই স্বাস্থ্য কর্মীর শারিরীক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তা ছাড়া ওই সময় এলাকায় প্রচার পাই ওই স্বাস্থ্য কর্মী আদৌ করোনা আক্রান্ত হয়নি। 

মিডিয়ায় তার করোনা পজিটিভ নিউজ প্রকাশ নিয়েও যথেষ্ঠ প্রশ্ন উঠে।  তবে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর সংস্পর্ষে আসা তার শ্যালক ও অপর ৪ জন স্টাফ করোনা আক্রান্তসহ ওই স্বাস্থ্যকর্মীর দ্বিতীয় দফায় করোনা পজিটিভ শনাক্ত  হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নের অবসান ঘটে। তবে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর সুস্থ্যতার খবরে এখন জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।


   আরও সংবাদ