প্রকাশ: ১৮ মে, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন
হাবিপ্রবি থেকে আবু সাহেব : বাংলাদেশের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি নিরাপদ দেশ উপহার দিতে চলতি বছরের ৩১ জুনের মধ্যে এক লাখ চারাগাছ রোপণ করবে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফ্রম বাংলাদেশ (আই এস এফ বিডি)। একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
বিশ্বের ৩০ টির অধিক দেশে এই সংগঠনটির কার্যক্রম রয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় মতিউর রহমান সাহেবের নেতৃত্বে বাংলাদেশে এই সংগঠনটির যাত্রা শুরু করে।
বাংলাদেশে এই সংগঠনটির প্রতিটি উপজেলা কমিটির দায়িত্ব থাকবে তাদের অধীনে যত গুলো ইউনিয়ন পরিষদ আছে, ঐ ইউনিয়নের সবাই মিলে ২৫/৩০ টি চারাগাছ রোপণ করবে। চেষ্টা করবে ফলজ ও ঔষধী গাছ লাগাতে। দেশকে ভালোবেসে চারাগাছ নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় লাগাবে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের মোট আয়তনের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশের মোট বনভূমির আয়তন হচ্ছে ১৭.৪ ভাগ। এদেশের জনসংখ্যার ঘনত্বের তুলনায় বনভূমি খুবই কম। দিন দিন কমে যাচ্ছে বনভূমির আয়তন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বনভূমি কিছু কিছু কেটে নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে।
মানুষের কাঠ ও জ্বালানী কাঠের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে বনভূমি। নগরায়ন ও শহরায়নের ক্রমবর্ধমান চাহিদার ফলেও ধ্বংস হচ্ছে বনভূমি। বিলুপ্ত হচ্ছে জীবজন্ত ও বন্যপ্রাণী। এতে হুমকির মুখে পড়ছে দেশ ও দেশের মানুষ। শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবী থেকেও বনভূমি দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
সহিহ বোখারীর হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি বৃক্ষ রোপণ করে কিংবা ফসল উৎপন্ন করে আর তা থেকে মানুষ ও পশু-পাখি ভক্ষণ করে, তাহলে উৎপন্নকারীর আমলনামায় তা সদকার সওয়াব হিসেবে গণ্য হবে।’ পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকার জন্যে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও ফসলাদি উৎপন্ন করার জন্যে ইসলাম পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ রোপনের প্রতি বেশ গুরুত্ব দিয়েছে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে পরিমিত বৃষ্টি বর্ষণ করেন। যাতে মাটি রসালো হয় এবং গাছপালা, তরুলতা সতেজ হয়ে ফুল-ফল উৎপন্ন ও ছায়াদান করে পরিবেশকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারিমে এরশাদ করেন, ‘এ পানি দ্বারা তোমাদের জন্যে উৎপন্ন করি ফসল, যয়তুন, খেজুর, আঙ্গুর ও সর্ব প্রকার ফল। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ -সূরা নাহল: ১১।
কোরআনে কারিমের অন্যত্র আরও এরশাদ হচ্ছে, ‘তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি ঊষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত করে শস্য উদগত করি, যা থেকে ভক্ষণ করে তাদের জন্তুরা এবং তারা। তারা কি দেখে না।’ -সূরা সেজদাহ: ২৭।
এ সমস্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন উপাদানের দ্বারা পরিবেশের ভারসাম্যকে সতেজ করেন। তাই এটাকে রক্ষা করার, পরিচর্যা করার দায়িত্ব আমাদের সবার।
হয়রত মুহাম্মদ (সা.)-এর আরেকটি হাদিস দ্বারা পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ রোপনের তাগাদা সম্পর্কে বুঝা যায়। বৃক্ষ রোপনের গুরুত্ব বুঝাতে তিনি বলেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে, কিয়ামত এসে গেছে এবং ওই মুহূর্তে গাছের চারা হাতে থাকে আর তা রোপন করা সম্ভব হয় তাহলে তা রোপন করে দিবে।’
বর্ণিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, ইসলাম পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ রোপনের প্রতি বেশ গুরুত্ব দিয়েছে এবং উৎসাহিত করেছে। হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) অযথা কোনো গাছের পাতা ছিঁড়তেও নিষেধ করেছেন।
পরিবেশ, দেশ, মানুষ ও সারা বিশ্বের কথা চিন্তা করে “চলুন সবাই এই ঈদের বোনাস প্রকৃতিকে দেই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য করি “এই স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার সকল উপজেলায় মোট ১ লক্ষ গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। এছাড়াও সমাজের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে সম্ভব্য সমাধান এর পথ খুঁজে থাকে সংগঠন এর পরিচালক ও অন্যান্য কর্মীরা।
এ বিষয়ে আইএসএফবিডি'এর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সমাজস্বেবক মতিউর রহমান সাহেব সাথে একান্ত আলাপ কালে 'বিএন নিউজকে জানান, 'সমাজের বা দেশের উন্নতি করতে হলে প্রথমে পরিবেশ এর উন্নতি করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাস যোগ্য নিরাপদ পৃথিবী গড়তে হবে। পরিবেশের উন্নতি করতে গাছ লাগানোর বিকল্প কিছু নেই। আমাদের সংগঠন এর প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটির মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিবেশের উন্নতি করতে হবে। এর পর বাস যোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবী গড়তে হবে।'