প্রকাশ: ৩০ মে, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন
চৌগাছা (যশোর) সংবাদদাতা : জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মুহম্মদ শাহাদৎ হুসাইন ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শনিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন। মরুহুমের বড় ছেলে কায়সার হাবিব এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, মুহাদ্দিস আবু সাঈদ যশোর শহরের ভাড়া বাসায় অবস্থান করছিলেন। শনিবার বিকেল তিনটার দিকে তিনি মোবাইল ফোনে অনলাইনে একটি আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন। কথা বলার সময় তিনি হঠাৎ পড়ে যান। পরিবার-সদস্যরা তখনই তাকে যশোর শহরের শঙ্করপুর এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতাল জিডিএল-এ নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার ফাইয়াজ আহমেদ ফয়সাল তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
যোগাযোগ করা হলে জিডিএল হাসপাতালের পরিচালক আবু ফয়সাল বলেন, ‘ডাক্তার ফাইয়াজ আহমেদ ফয়সাল মুহাদ্দিস আবু সাঈদকে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, বেশ কিছু সময় আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবু তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু পরিবার-সদস্যরা তাকে আর জেনারেল হাসপাতালে না নিয়ে ঝিকরগাছার বাড়িতে নিয়ে যান।
হাসপাতালটির ম্যানেজার নুর আলম জানান, মুহাদ্দিস আবু সাঈদকে হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত ডাক্তার ফাইয়াজ তার রক্তচাপ মাপেন, ইসিজিও করেন। জানিয়ে দেন, মুহাদ্দিস আর বেঁচে নেই। মুহাদ্দিস আবু সাঈদের ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছিল বলে ওই হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ বলছেন।
মুহাদ্দিস আবু সাঈদ যশোর সদর উপজেলার পদ্মবিলা ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুহাদ্দিস আবু সাঈদ জামায়াতে ইসলামী যশোর পশ্চিম জেলা শাখার নায়েবে আমীর ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশের শূরার সদস্য ছিলেন।
এর আগে তিনি ১৯৮৮ সালে ঝিকরগাছার বাঁকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রথম দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এর পর ১৯৯৬ সালে তিনি জাতীয় সংসদের যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে তৎকালীন চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। পরের নির্বাচনে (২০০১) তিনি একই আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের সবশেষ নির্বাচনেও তিনি ২০ দলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে একই আসনে নির্বাচনে লড়েছিলেন।
মুহাদ্দিস আবু সাঈদের সততার ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেগেছেন। বিগত ফকরুদ্দীন ও মঈন উদ্দীন সরকারের সময়ে যখন সারা দেশে অসংখ্য মন্ত্রী এমপিদের বিরুদ্ধে দূর্নীতির মামলা হয়েছিল। তখন হাহারো চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে একটিও দূর্ণীতির মামলা দাড় করাতে পারেনি। কিন্ত বর্তমান সরকারের সময়ে ১৯ টি রাজনৈতিক মামলার শিকার হয়ে তিনবার কারা বরণ করেছেন।
মুহাদ্দিস আবু সাঈদ ১৯৬১ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাকড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন মুহাদ্দিস আবু সাঈদ।
তিনি মুকুন্দপুর আলিম মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর ঝিকরগাছার গাজির দরগাহ মাদ্রাসা থেকে দাখিলে অবিভক্ত পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এর পরে তিনি যশোরের হামিদপুর মাদ্রাসা থেকে আলিম , ফাজিলে ষ্ট্যান্ড করেন। পরবর্তিতে যশোর আমিনিয়া মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে কামিল পাশ করেন এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে ইসলামিক স্টাডিস বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
পড়াশোনা শেষে তিনি প্রথম ফরিদপুর জেলার বাহাদুরপুর মাদ্রাসায় আল হাদিসের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি যশোরের পদ্মবিলা সিনিয়র মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। মূত্যুপর্যন্ত তিনি এ মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মুহাদ্দিস আবু সাঈদ স্ত্রী, তিন ছেলে, দুই মেয়েসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন ও অনুসারী রেখে গেছেন। ঝিকরগাছায় গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াত নেতার মৃত্যুতে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শোক বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারী জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দরা বলেন, মরহুম আবু সাঈদ সংসদ সদস্য থাকাকালে বাংলাদেশ সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। সেসময় তিনি অত্যান্ত দক্ষতা ও সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ মুহাদ্দিস আবু সাঈদের মৃত্যুতে শোক জােিনেয় বিবৃতি জানিয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারী মাও.আজিজুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক নার্গীস ইসলাম, সদস্য সচিব এ্যাড. সাবেরুল হক সাবু, যশোর জেলা (পশ্চিম) জামায়াতের আমীর মাও. রেজাউল করিম, সেক্রেটারী, মাও. আরশাদুল আলম, যশোর জেলা (পূর্ব) জামায়াতের আমীর মাষ্টার নুরুন্নবী, সেক্রেটারী মাও. আবু জাফর, যশোর শহর শাখার আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল, সেক্রেটারী অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস ।
চৌগাছা উপজেলা জামায়াতের আমীর মাও. গোলাম মোর্শেদ, সাবেক আমীর হাফেজ আমিন উদ্দীন খান, সেক্রেটারী মাও. আব্দুল কাদের, সহ. সেক্রেটারী মাষ্টার কামাল আহমেদ. পৌর জামায়াতের আমীর মাও. আব্দুল খালেক, জামায়াতের নেতা মাও. নুরুজ্জামান, ঝিকরগাছা জামায়াতের আমীর হারুন অর রশিদ, সেক্রটারী মাও. আব্দুল আলীম, উপজেলা বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম, সেক্রটারী ইউনুস আলী, সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম, বিএনপি নেতা ও হাকিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান, পাতিবিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান লাল প্রমুখ।